পুস্তক পরিচয় ৩...
মুদ্রণের সংস্কৃতিটা জানা চাই
শ্চিমবঙ্গের এমনকী খোদ কলকাতার বাঙালিদের অন্য আর যে বিষয়েই প্রাজ্ঞতা থাক না কেন প্রতিবেশী বাঙালিদের প্রতি অজ্ঞতার শেষ নেই। উত্তরপূর্ব ভারতের বাঙালি বা বাংলাদেশের বাঙালিরা কী লিখছেন পড়ছেন তার খোঁজ আমরা বড় একটা রাখি না। এক দু’জন বিখ্যাতের নাম ও একটু আধটু লেখার কথা জানি আর তাই ধুয়েই জল খাই। কিন্তু বাঙালি তো আর শুধু এ বঙ্গে নেই, নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছেন। সেই ছড়ানো বাঙালিদের মধ্যে যাঁরা ইংরেজিতে লেখেন তাঁদের ভারতীয় বংশোদ্ভূত ইংরেজি লেখক হিসেবে খ্যাতি স্বীকৃতি জুটে যায় কিন্তু বাংলাভাষার প্রতিবেশী লেখকেরা!
কাজ কিন্তু দিব্যি হচ্ছে। তাঁদের ক্রাইসিসের রকমফেরও আলাদা। যেমন দেবীপ্রসাদ সিংহের সীমান্তের ওপর থমকে থাকা পা গল্পের প্রকাশক গুয়াহাটির নাইনথ কলাম। দেবীপ্রসাদ তাঁর ‘অনন্তের শেষ ছেলেবেলা’ গল্পে তির্যক ফুট কেটেছেন। “ভাগ্যবান কিছু মানুষের একটাই ছেলেবেলা থাকে, যেমন রবীন্দ্রনাথ, যেমন সত্যজিৎ রায়।... অনন্তের ছেলেবেলাগুলো, সবকটাই ভাঙাচোরা, তালগোল পাকানো, দরকচা মারা... তাদের কোনো পরম্পরা নেই, নেই মাঝখানে কোনো সেতু।” কথাগুলো শুধু এই গল্পের জন্য সত্যি নয়, উত্তরপূর্ব ভারতে বসবাসকারী ছিন্নমূল মানুষদের সবার জন্য কমবেশি সত্য। মিলিটারি ফোর্স আর স্থানীয় জনজাতির মানুষদের কাছে এদের বাঙালিয়ানা জটিল এক নেতিবাচক পরিচয় হিসেবে ধরা দেয় আবার মূল ধারার বাঙালিরাও এঁদের ভুলেই থাকেন অনেকাংশে। এরই মাঝে ছোট ছোট প্রকাশনা— ক’জনের কাছেই বা তা পৌঁছয়! তবু।
কথা হচ্ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্রের লেখকবন্ধু মানস চৌধুরীর সঙ্গে। মানসের কাকগৃহ আর ময়নাতদন্তহীন একটি মৃত্যু বইদুটির প্রকাশক পাঠসূত্র ও বাঙলায়ন। মানসের ‘আলী বিহারীর কম্বল’ গল্পে আছে বিচিত্র অনুভূতির কথা। “কম্বলটা গায়ে দিয়ে আমি শুই। অথচ প্রতিবারেই মনে হয় কম্বলটাই আমাকে চাপা দিয়ে পড়ে আছে।” মানস বারবার বোঝার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের প্রকাশনা পুঁজির দস্তুর। মুক্তধারা, পুথিপত্র-র মতো প্রকাশক ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেল। সত্যেন সেনের লেখা কৃষক বিদ্রোহের বই যাঁরা পাঁচ হাজার কপি ছেপে অনায়াসে বিক্রি করে ফেলতে পারত তারা আর নেই। আশির দশকে বাংলাদেশে প্রকাশনা জগৎ আর এক রকম হয়ে গেল। ‘তোমাদের দেশে যেমন লিটল ম্যাগাজিন পত্রিকা ছেপে, প্রকাশনা করে একটা জায়গা করে নিয়েছে, আমাদের দেশে কিন্তু তেমনটা না’— বললেন মানস। হয়তো অন্য রকম গল্পের বই মেলায় এল ত্রিশ-চল্লিশটা, বিক্রি হল, ব্যস! তারপর ছাপা ফর্মা পড়ে থাকে। বাংলাদেশের লিখন-সংস্কৃতির ইতিহাস বুঝতে গেলে মুদ্রণ সংস্কৃতির ওঠাপড়া জানা চাই। কম্বলটা মানুষকে, ছাপা না-ছাপার রাজনীতি চাপা দেয় লেখাটাকে।
জটিল কথা থাক। উলটে পালটে দেখি উত্তরপূর্ব ভারতের, ওপার বাংলার নানা বই, বড়দের ছোটদের। না-জানা থেকে একটু একটু করে জানার দিকে এগোই। কিছুই তো জানা হয়নি— সবই বাকি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.