পাড়া কাঁপালো বিভীষণ, জাম্বুবান, হনুমান ও সুগ্রীবেরা। সত্যিকারের নয়, রামায়ণের ওই সব চরিত্রের মুখোশ আর রঙচঙে পোশাক পরে লোকশিল্পীরা কয়েক দিন ধরে বিষ্ণুপুর শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ালেন। সঙ্গে ছিল নাকাড়া, টিকারা, কাঁশি বা ঝাঁঝের বাজনার আবহ। সকাল থেকে সন্ধ্যা- শহরের অলিতে-গলিতে নাচানাচি করলেন তাঁরা। |
দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার পর দশমী থেকে দ্বাদশী— তিন দিন ধরে রাবণকাটা যুদ্ধ-নৃত্যে মাতোয়ারা হয়ে থাকলেন বিষ্ণুপুরবাসী। দীর্ঘদিনের এই রোওয়াজ এখনও অম্লান।
পাড়ায় বাজনার শব্দ কানে এলেই ছোট-বড় সবার ভিড় জমে যাচ্ছিল। ছোটদের দুষ্টুমি করতে দেখলেই বড়রা বলছেন, “ওই যে এসে গেছে রাবণকাটা। দুষ্টুমি করলেই ওরা ধরে নিয়ে যাবে।” কাঠের তৈরি জাম্বুবান ভালুকের ভয়ঙ্কর মুখ, বড়-বড় দাঁত দেখে ছোটরা আনন্দ যতটা পায়, ভয়ও ততটাই। লোকশিল্পীরা আবার কাছে এসে পড়া শিশুদের কোলে তুলে নাচিয়েও দিলেন।
বিজয়া দশমীর দিন বিষ্ণুপুরের নিমতলায় রঘুনাথজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে হল ইন্দ্রজিৎ বধ, একাদশীর রাতে কুম্ভকর্ণ বধ। শুক্রবার মাটির তৈরি দীর্ঘদেহী দশ মুণ্ড রাবণবধের মাধ্যমে শেষ হয় ঐতিহ্যবাহী রাবণকাটা উৎসব।
বিষ্ণুপুরের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ চিত্তরঞ্জন দাশগুপ্তের কথায়, “এই উৎসব আদতে রাবণের মৃত্যুর পর যুদ্ধ জয়ের বীররসের নাচ। সপ্তদশ শতকে মল্লরাজ আমলে তৈরি রঘুনাথজিউ মন্দিরকে ঘিরে বিষ্ণুপুরে এই নাচের শুরু হয়। লোকনৃত্যের আঙ্গিকে এই উৎসব এখনও সবার কাছে সমান জনপ্রিয়।” |