ফ্রি প্র্যাক্টিসের দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষে তাঁদের দু’জনের জন্য প্যাডক অঞ্চলে জনতা এবং মিডিয়ার উপচে পড়া ভিড়। এক জন পিট লেন থেকে বেরিয়ে এলেন হাসতে হাসতে। তাঁকে দেখে উচ্ছ্বসিত তরুণীর আব্দার রাখতে দ্রুত হাঁটা থামিয়ে কাঁধে হাত রেখে ছবির পোজও দিলেন টিম বিল্ডিংয়ে ঢুকে যাওয়ার আগে।
অন্য জন, মাথাটা গুঁজে বেরোলেন। এবং প্রায় ছুটতে ছুটতে ঢুকে গেলেন টিম বিল্ডিংয়ে।
প্রথম জন সেবাস্তিয়ান ভেটেল। দ্বিতীয় জন ফের্নান্দো আলোনসো।
দু’জনের মাঝে ছ’টা পয়েন্টের ব্যবধান। আর এই ব্যবধানটাকে দ্বিতীয় জন মুছে ফেলতে মরিয়া। প্রথম জন ধরে রাখতে। রেড বুলের সেবাস্তিয়ান ভেটেল বনাম ফেরারির ফের্নান্দো আলোনসোচ্যাম্পিয়নশিপের এই ধুন্ধুমার যুদ্ধটার অস্রুত দামামা দিনভর বাজল নয়ডার বুদ্ধ আন্তর্জাতিক সার্কিটে!
দু’জনের টক্করটা ফর্মুলা ওয়ানে ভেটেলের অবির্ভাবের পর থেকেই। ২০০৫-এ আলোনসো ফর্মুলা ওয়ানের কনিষ্ঠতম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সেই তকমা দু’বছর আগে কেড়ে নিয়েছেন ভেটেল। দু’জনেরই খেতাবের সংখ্যা দুই। তাই এ বার জিতে কে এগিয়ে যায় সেটা দু’জনের কাছেই সম্মানের লড়াই। গাড়ি নির্মাতাদের যুদ্ধে এ বছর রেড বুল আগেই জিতে বসে আছে। ফেরারি তাই চালকদের ট্রফিটা ঘরে তুলতে চাইছে। দুই চালকের মতো, দুই দলের মধ্যেও উত্তেজনাটা ছাই চাপা আগুনের মতো। তবে কোনও পক্ষই প্রতিদ্বন্দীকে কিছুতেই প্রকাশ্যে আক্রমণে যাচ্ছেন না। তাতেও চিমটিগুলো ধরতে মোটেই অসুবিধে হয় না। |
যুদ্ধবিরতি |
|
|
আলোনসো ও ভেটেল। ছবি: এএফপি |
|
আপাতত ছয় পয়েন্টে এগিয়ে থাকা ভেটেল গতকাল বিকালে সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে “ফেরারির কথা বলতে পারি না, তবে আমরা এই মুহূর্তে ভাল জায়গায়,” বলে চ্যালেঞ্জটা ছুড়ে দেওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যে ফেরারির উজ্জ্বল লাল পোশাকে ফর্সা গাল রোদে টুকটুকে করে এসে আলোনসো বলে গিয়েছিলেন, “জিতব, এই বিশ্বাসটা রাখি বলেই এখানে এসেছি। গোটা দল জেতার জন্য তেতে আছে। আমাদের আর শুধু চারটে নিখুঁত রেস দরকার।” এ দিন সেই নীরব যুদ্ধটা চলল ট্র্যাকে। সকালে ফ্রি প্র্যাক্টিসের প্রথম রাউন্ডে এবং বিকালের দ্বিতীয় রাউন্ডেও। একবার আলোনসো সব থেকে কম ল্যাপ টাইম করেন তো পর মুহূর্তেই ভেটেল তার থেকেও কম সময় নেন। তবে দিনের শেষে প্র্যাক্টিসের সেরা সময়টা (১.২৬.২২১ মিনিট) ভেটেলেরই থাকল। তাঁর থেকে ০.৫৯৯ সেকেন্ড পিছিয়ে থাকলেন আলোনসো। তায় মাঝে ঢুকে থাকলেন রেড বুলেরই মার্ক ওয়েবার। যে কারণে পিট লেন থেকে বেরিয়ে আলোনসোর ওই দ্রুত প্রস্থান।
পরে দলের হসপিটালিটি এলাকায় এসে বললেন, “দারুণ ইন্তারেস্তিং সার্কিত। ওয়ান অফ দ্য মোস্ত চ্যালেঞ্জিং, হাই পারফরম্যান্স ত্র্যাকস।” “স্প্যানিশ আলোনসো ইংরেজিটা বলেন স্প্যানিশ টানে, আধো আধো। ভেটেলের মতো ঝরঝরে নয়। ভাষায় দখলটাও প্রতিপক্ষের তুলনায় কম। কিন্তু স্টিয়ারিংয়ের পিছনে কোনও অংশে কম হতে তিনি মোটেই রাজি নন। বললেন, “ট্র্যাকে আজ একটু ধুলো ছিল। কাল সেটা কমবে। তখন আরও গতি তোলা যাবে।” ভেটেল এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষের সঙ্গে এক মত। বললেন, “ট্র্যাকে যত গাড়ি চালিয়েছি, ততই সময়ের উন্নতি হয়েছে। তবে অন্য কে কী সময় করেছে, সেটা দেখিনি।”
এ দিন রেড বুলের গতিকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি ফেরারি। তায় একটা মত ভাসছে যে ভারতে ভেটেল বনাম আলোনসোর বদলে ভেটেল বনাম ওয়েবার না হয়ে যায়! কথাটা ভেটেল এ দিন উড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আলোনসোর জ্বালাটা রয়েছে। ফেরারির প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তাই বলছেন আসল খেলাটা হবে শনিবারই। আলোনসোর কথায়, “এটা ঠিক যে রেড বুল শনিবারগুলো দারুণ গতি তুলছে। কিন্তু আমাদের শক্তিকে ছোট করার কারণ নেই।” আলোনসোর মতোই বুদ্ধ সার্কিট দারুণ পছন্দ ভেটেলেরও। এটাকে তাঁর নাগরদোলার মতো মনে হয়! কারণ ট্র্যাকের ঢালের বৈচিত্র্য। এ দিন বললেন, “ট্র্যাকটা দারুণ ইমপ্রুভ করেছে। তবে আমি গতবার জিতেছি বলেই এ বারও জিতব ভাবার কারণ নেই।”
গতবার চ্যাম্পিয়নশিপটা জিতেই ভারতে এসেছিলেন ভেটেল। এতটাই রিল্যাক্সড ছিলেন যে গাড়ি নিয়ে আগ্রা গিয়েছিলেন। এ বার কিন্তু সার্কিট ছেড়ে নড়েননি। ছোট্টখাট্ট জার্মানকে ভীষণ একাগ্র দেখাচ্ছে। আলোনসোও এ দিন পায়ে হেঁটে ট্রাক ঘোরার পরে হাসি মুখে সই দিলেন দেদার। ইউনিসেফের রাষ্ট্রদূত গতকাল গিয়েছিলেন কাছের একটা গ্রামে বাচ্চাদের হাত ধোয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে। কিন্তু এ দিন তাঁকে টিম বিল্ডিংয়ের উপরে টানা উত্তেজিত পায়চারি করতে দেখা গেল কানে ফোন নিয়ে। ভারতের যে জিতবে সে এগিয়ে যাবে অনেকটাই। তাই সূচাগ্র মেদিনী ছাড়ার প্রশ্ন নেই।
তবে এই দু’জনের বাইরে আউটসাইড চান্স বলতে ইংরেজিতে যা বোঝায়, সেই ক্ষীণতম একটা সুযোগ হ্যামিল্টনেরও আছে। তিনি পিছিয়ে ৬২ পয়েন্টে। সেটা মনে করাতে বললেন, “হারার আগে তো হার মানার মানে হয় না! আমি আশা করতেই পারি। তবে লড়াইটা অবশ্যই সেবাস্তিয়ান বনাম ফের্নান্দো। আর সেই লড়াইয়ে আমার ভোট কিন্তু সেবাস্তিয়ানের দিকে।”
এটা শুনে আলোনসো কী বলেছেন সেটা অবশ্য জানা যায়নি! |