|
|
|
|
বাদ পড়ার আঁচ পেয়েই মন্ত্রিত্বে ইস্তফা কৃষ্ণের |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
সম্ভাব্য রদবদলের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রথম উইকেট পড়ল মনমোহন মন্ত্রিসভার।
অনেক দিন ধরেই এস এম কৃষ্ণকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে চাইছিলেন সনিয়া গাঁধী। পারছিলেন না, কারণ আপত্তি ছিল মনমোহন সিংহের। কিন্তু লোকসভা ভোটের যখন আর মাত্র বছর দেড়েক বাকি, দুর্নীতির অভিযোগ আর মূল্যবৃদ্ধির জেরে জেরবার সরকার, তখন ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রধানমন্ত্রীর উপরে চাপ দিয়ে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে সফল হলেন সনিয়া। আজ বিদেশ মন্ত্রক থেকে ইস্তফা দিলেন কৃষ্ণ। এখানেই শেষ নয়। প্রবীণদের মধ্যে আরও কয়েক জন বাদ পড়তে পারেন এ বারের রদবদলে। ঢুকতে পারেন আরও নতুন মুখ। কংগ্রেস সূত্রের খবর, যে সিদ্ধান্তের পিছনে রয়েছেন স্বয়ং রাহুল গাঁধী।
সঙ্কটের সময়ে ইন্দিরা বা রাজীব গাঁধীর মতো মন্ত্রিসভার রদবদল ঘটিয়ে ভাবমূর্তি ফেরাতে চাইছেন সনিয়া। তবে একই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে রাহুলের উত্থানের পথও। কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রেরই খবর, লোকসভার আগে মন্ত্রিসভার খোলনলচে বদলে নতুন হাওয়া আনতে রাহুল যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করছেন। কিন্তু নিজে কি যোগ দেবেন মন্ত্রিসভায়? মনমোহন ও সনিয়া দু’জনই সে জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন তাঁর উপরে। কিন্তু রাহুল এখনও রাজি হননি। কংগ্রেস সূত্র বলছে, নিজে যদি না-ও আসেন, তা হলেও তাঁর প্রস্তাব মেনেই সাজানো হচ্ছে মন্ত্রিসভা।
মনমোহন মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ সদস্য আজ বলেন, “এ বারে শুধু সনিয়া গাঁধী আর প্রধানমন্ত্রীই গোটা বিষয়টি স্থির করছেন না। রাহুলও প্রতিটি খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করছেন। তাই তাঁর মতকেও এ বারে গুরুত্ব দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।”
কোপটা তাই শুধু একা কৃষ্ণের উপর নয়, বাদ পড়তে পারেন সুবোধকান্ত সহায় বা বেণীপ্রসাদ বর্মার মতো আরও কয়েক জন মন্ত্রী। কংগ্রেসের অনেকে বলছেন, কৃষ্ণ বরং বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছেন। তাঁকে যে ছাঁটাই করা হতে পারে, সেই আঁচ পেয়ে আজ নাটকীয় ভাবে ইস্তফা দিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণও করলেন। ইস্তফা দিয়ে কৃষ্ণ বলেন, “মন্ত্রিসভায় নবীনদের আরও সুযোগ দিতেই আমার ইস্তফা।” এখন প্রশ্ন, এই নবীন কারা? কংগ্রেস সূত্রই জানাচ্ছে, রাহুলের পছন্দ অনুযায়ী মীনাক্ষী নটরাজন, জ্যোতি মির্ধা, মানিক্কা টেগোরের মতো নতুনদের অভিষেক হতে পারে এ বারের রদবদলে। একই সঙ্গে সচিন পায়লট, মিলিন্দ দেওরাদের কারও কারও পদোন্নতি হতে পারে। পদোন্নতি হতে পারে অজয় মাকেন, জয়ন্তী নটরাজনেরও। রাহুল মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে না চাইলে তাঁকে দলের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট করার কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে।
কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক কার হাতে যাবে?
এই নিয়ে এখন আনন্দ শর্মা আর কপিল সিব্বলের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে। সনিয়া চান আনন্দ শর্মাকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ কপিল। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, কৃষ্ণকে সরানো নিয়ে সনিয়ার কথা মেনে নিয়েছেন মনমোহন। তাই এ বার বিদেশ মন্ত্রকে কাকে আনবেন, তা নিয়ে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেন তিনি। আজও মন্ত্রিসভার তালিকা নিয়ে মনমোহন-সনিয়ার বৈঠক হয়েছে। আগামিকাল ফের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
শুধু সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করাই নয়, লোকসভা ভোটের আগে সম্ভবত শেষ রদবদলে মন্ত্রিসভার এমন এক রূপ দিতে চান সনিয়া-মনমোহন, যাতে সরকার ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের মোড় ঘোরানো যায়। সে জন্য অযোগ্যদের ডানা ছেঁটে বা বাদ দিয়ে এবং নতুন মুখ এনে মন্ত্রিসভার গড় বয়স কমিয়ে আনতে চান তাঁরা। যাতে মন্ত্রিসভার কর্মদক্ষতা বাড়ে। এর মধ্য দিয়েই রাহুলের একটি টিম তৈরি হবে, যাঁরা সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। মনমোহন মন্ত্রিসভায় রাহুলের টিম শক্তিশালী করার মাধ্যমে তাঁর উত্থানের পথও তৈরি হবে।
সংগঠনকেও ঢেলে সাজতে চাইছেন সনিয়া। কংগ্রেস সূত্রের মতে, তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী অম্বিকা সোনি ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী মুকুল ওয়াসনিকও আজ সনিয়ার গাঁধীর সঙ্গে দেখা করে সংগঠনের কাজ করার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অম্বিকা দেখা করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। |
|
|
|
|
|