|
|
|
|
ওকে করে তুলুন গৃহকর্মনিপুণ |
এক জন মেয়ে= ঘরের কাজ+ বাইরের কাজ। এক জন পুরুষ= বাইরের কাজ+?। শ্রমবিভাজনে অসাম্য?
ভারী কথা থাক।
হালকা হাতে ম্যানেজ করুন। রইল ক’খানা পরামর্শ। দেখবেন, কর্তাটিও
কেমন
সমানে সমানে কাজ করেন। টিপস দিলেন পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় |
এই যে নিয়ম করে সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠা, আর রাতে গুটি গুটি পায়ে বিছানার দিকে রওনা দেওয়া এর মাঝে সারা দিনে বাড়ির যে সব কর্তব্যকর্মগুলো স্বামী-স্ত্রীকে পালন করতে হয়, তার একটা লিস্ট বানিয়েছেন কেউ কখনও? না করলে অবশ্যই করবেন। এবং তাজ্জব হবেন। মেয়েদের কাজের ফর্দ ফুরোতেই চাইবে না। আর পুরুষটির বেলায় ঢ্যাঁড়া। দাঁতে পেনসিল চেপে তারা ভেবেই পাবে না, তাদের আসলে কী কী ঘরের কাজ করতে হয়! ভাবছেন, এ সব তো পুরোপুরি নারীবাদী চিন্তাধারা? না, এমন নয় মোটেই। আসলে, ছোট থেকেই আমরা এক ধরনের ভাবনায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। সংসার, বাড়িঘর মেয়েরাই সবচেয়ে ভাল সামলাতে পারে। তারা বড়ই গোছানো, পরিপাটি, ঠান্ডা মাথা। সংসার নামক জটিল আবর্তের ঘাঁতঘোঁতগুলো একা হাতে ভালই ম্যানেজ করে নেয়। পুরুষদের অমন সূক্ষ্মতাবোধ নেই। তারা বরাবরই আত্মভোলা গোছের। বাইরের কাজেই তাদের মানায়। এর বাইরে যারা সারা ক্ষণ বউয়ের সঙ্গে হাতে হাতে ঝুটঝামেলা সামাল দেয়, মুখে তাদের একগাল প্রশংসা উপহার দিয়েছি। তবে, মুখ চাপা দিয়ে ফিক করে হেসে ‘মেয়েলি’ বলতেও ছাড়িনি। ফলে হয়েছে কী? ঘরের বরটিকে এন্তার আশকারা দিয়ে মেয়েরা নিজের ওপর যাবতীয় খুঁটিনাটি দায়দায়িত্ব চাপিয়ে মনমেজাজ করছে তিতকুটে, দিবারাত্রি খিটখিট, তুচ্ছ কারণে বাচ্চাদের ধরে দমাদ্দম পেটানো সবই চলছে। গোল্লায় পাঠাচ্ছে এমন চমৎকার দাম্পত্য-জীবনটিকে।
মেয়েরা চাকরি করলে দায়িত্ব যে আরও বাড়ে, জানা কথা। কিন্তু হোমমেকারদেরই বা কী এমন আরাম মেলে? বড় বড় কাজের কথা ছেড়েই দিলাম। খুচরো কাজের মধ্যে সকালবেলায় অ্যালার্ম ক্লক-এর কাজ করা, কর্তার অফিস বেরোনোর আগে হারানো মোজা-রুমাল খুঁজে দেওয়া, অফিসের চাপ পড়লে ভোকাল টনিক দেওয়া, বাচ্চাদের হাজার উটকো বায়নাক্কা সামলানো, শ্বশুর-শাশুড়ির মেজাজ বিগড়োলে ঠান্ডা মাথায় তাদের সামলে সংসারের শান্তি অক্ষুণ্ণ রাখা, আপদবিপদে মহামায়ার মতো পরিবারকে রক্ষা করা আরও মনে করাতে হবে?
কিন্তু মেয়েরা যে দু’হাতে হাজার হাতের দায়িত্ব নেয়, সেই অতি পরিচিত কথাটাই ফের মনে করিয়ে লাভ কী বলুন? বরং কী করে পুরুষ সদস্যটিকেও বাড়ির কাজে ঢোকানো যায়, তা নিয়ে মনের মধ্যে নাড়াঘাঁটা করলে সমাধান মিলতে পারে। কথাটা এক বাক্যে শেষ। কাজটা কিন্তু বেজায় পরিশ্রমের। সংসার যে দু’জনেরই আর তাই কাজটাও যে খানিক মিলেজুলেই করা প্রয়োজন এই হাজার বার শোনা কথাটা তাদের সামনে বলতে যান, এমন ভেবলে যাওয়া মুখে তাকিয়ে থাকবে, যেন আপনি তাকে ফতুয়া পরে এভারেস্টে চড়তে বলছেন।
তা এ হেন অলস মানুষদের দিয়ে ঘরকন্নার কাজ করাবেন কী করে? একটা সহজ সমাধান তো হাতের কাছেই মজুত। সরাসরি স্বামীকে বলুন। মুখে সাহায্যের জন্য বলবেন না, এ দিকে মন কষাকষি হলেই সেই নিয়ে খোঁচা দেবেন, এটা কিন্তু কোনও কাজের কথা নয়। প্রয়োজন হলে ঠান্ডা মাথায় তাকে বুঝিয়ে বলুন, আপনি কেন এই কাজ একা করতে পারছেন না। তবে সময়টা এখানে খুব জরুরি। কর্তা বাড়ি ফিরে সবেমাত্র ল্যাপটপটা নিয়ে বসেছেন বা তক্ষুণি একটা তুমুল ঝগড়া শেষ হয়েছে, ঠিক সেই সময়ই তেতো খাওয়া মুখে কাজের ফিরিস্তি ধরালে আরও একটা কুরুক্ষেত্র বাধতে দেরি হবে না। তাই, একটু সময় হাতে রেখে হালকা মেজাজ আছে কিনা দেখে তবেই এগোন। আর হ্যাঁ, সোজা কথা কোনও জবাব নেই। তাই এর আগে আপনি কবে কী বলেছিলেন, আর সেই কাজটা কেন মোটেই সিরিয়াসলি নেওয়া হয়নি এমন সব হিসেবপত্তর নিয়ে বসলে কিন্তু শেষমেশ কিছুই হাসিল হবে না। বরং উল্টোটা করে দেখতে পারেন। এন্তার বরের কাজের প্রশংসা করুন। আপনি যে কত সাহায্য তার কাছ থেকে পান, সেটা বলে দেখুন, কার্যোদ্ধার হবেই। মানছি, সারা দিন কাজের পরেও আপনি আপনার প্রাপ্য প্রশংসাটুকুও হয়তো পান না। কিন্তু দায়টা তো এখন আপনারই। তাই ইনসেনটিভ হিসেবে খানিক প্রশংসা খরচ করতে পারলে ক্ষতি তো কিছু নেই! আসলে বেশির ভাগই পুরুষই খুব গুছিয়ে ঘরকন্না করতে পারে না। তবু যেটুকু পাওয়া যায়, তাতে একটু ‘বাহ্! দারুণ! চমৎকার!’ গোছের শব্দ প্রয়োগ করলে তারাও খুশি হবে, আর কিছুটা হলেও আপনার কাজের সামাল দেওয়া যাবে। |
|
ছবি: সুমন চৌধুরী |
কাজ এক বার মিটে গেলেই আর পায় কে! এ বার আপনি খুটুর খুটুর করে তার ভুলগুলো বের করতে বসলেন। এই চুলচেরা বিশ্লেষণ না-ই বা করলেন! আসলে বাড়ির কাজ তো এক বারে মেটার নয়। এ তো রোজকার দায়িত্ব। এক দিনে তার কতটুকুই বা সুরাহা হবে? আপনাকে তো ভবিষ্যৎটাও ভাবতে হবে। বর যে যে কাজ করবে, সব একেবারে আপনার মনের মতো হবে বাড়াবাড়ি চিন্তা। ভুল হতেই পারে। সাদা, রঙিন সব জামাকাপড় এক সঙ্গে ওয়াশিং মেশিনে কাচতে গিয়ে এর রং ওর ঘাড়ে লাগতেই পারে। সেটা নিয়ে বাড়ি মাথায় না করে ঠান্ডা মাথায় দেখিয়ে দিন কোন কোন জিনিস এক সঙ্গে কাচা যেতে পারে। আর হ্যাঁ, প্রত্যেকটা জিনিস আপনি যে ভাবে করেন, ঠিক সেই ভাবে তাঁকেও করতে হবে, না করলেই প্রলয়, এমন হলে কাজের উৎসাহটাই হারিয়ে যাবে। আপনি খাওয়ার আগে পেপার ন্যাপকিন দিয়ে দু’বার প্লেট মোছেন। আপনার বর প্রতি বার তা না-ও করতে পারেন। এটুকু মেনে নিন।
আর একটা কথা জানেন তো যে, বাড়ির কাজকে ঠিক আধাআধি ভাগ করা চলে না? ‘আমি সারা দিন এই এই কাজ করে যাচ্ছি, তাই তোমাকেও এই কাজগুলো করতে হবে’ এটা বলতে গেলে ভুল করবেন। ফ্ল্যাটের ইনস্টলমেন্টটা কি ঠিক আধাআধি ভাগ করতে পারেন? বা বেড়াতে যাওয়ার সময় ট্যাক্সির বিলগুলো? এখানেও তা-ই। একটু বেশি কাজ না হয় আপনাকেই করতে হল। বরং সরাসরি কাজ অর্ধেক করার চেয়ে টোনটা এমন রাখতে পারেন, যাতে মনে হয় আপনার উপায় নেই, তাই এটা ওঁকে করতে হচ্ছে। যেমন তরকারিটা গ্যাসে বসানো আছে বলেই আপনি ওঁকে জল ভরতে বলছেন।
আপনি কাজ ভাগ করেছেন। স্বামীর ওপর দায়িত্ব পড়েছে ছেলেমেয়েকে ইংরেজি শেখানো। তিনি কোনও দিন সেটা না করে রান্না করতে চাইলেন। আবার উল্টোটাও হতে পারে। আপনার রান্না করতে ভাল লাগছে না বলে আপনি পড়াতে বসতে চাইছেন। আলোচনা করে কাজটা উল্টে নিন। আপনার বা আপনার স্বামীর পছন্দ না হলেও সে কাজ করতেই হবে এমন কোনও লিখিত চুক্তি হয়েছে কি? বাধ্যবাধকতা হয়ে দাঁড়ালেই কাজে চূড়ান্ত বিরক্তি আসে। তাতে মন বসে না। আর আপনাদের দু’জনেরই কোনও একটা কাজ ভাল না লাগলে? বিকল্প খুঁজে ফেলুন। খাবারটা বাইরে থেকে আনিয়ে নিন বা ছেলেমেয়েকে এক দিন পড়া থেকে রেহাই দিয়ে সবাই মিলে দারুণ একটা মুভি দেখে ফেলুন।
এই যে এত কিছু নিয়ে আলোচনা, এর কোনও দরকারই হবে না আপনার স্বামী মানুষটি চটপটে হলে। কিন্তু তিনি যদি স্বভাবকুঁড়ে গোছের লোক হন, তা হলে ধৈর্য ধরতেই হবে। যিনি এক গ্লাস জল গড়িয়ে কোনও দিন খাননি, তিনি হঠাৎ করেই বাচ্চাদের টিফিন বানানো থেকে শুরু করে ঘর পরিষ্কার পর্যন্ত সব একাহাতে সামলে নেবে, এমনটা সিনেমায় হতে পারে, বাস্তবে নয়। তাই অল্প অল্প করে সইয়ে সইয়ে কাজ করতে দিন। সাততাড়াতাড়ি স্বভাব বদল করতে যাবেন না।
অনেক সময় হুট করে অনেকটা কাজ ঘাড়ে এসে পড়লে এত হিসেবনিকেশ করে দু’জনে ঠান্ডা মাথায় কাজ ভাগ করে করা যায় না, ঠিকই। কিন্তু তাই বলে, সবটা নিজের ওপর নিয়ে, তার পর সময় মতো শেষ করতে না পেরে টেনশন, অশান্তি দুই-ই ক্রমাগত বাড়িয়ে চলার কোনও মানে নেই। তার চেয়ে সপ্তাহের গোড়ায় দু’জন বসে সারা সপ্তাহে কী কী কাজ করতে হবে, তার মোটামুটি একটা প্ল্যান বানিয়ে সেই মতো কাজ ভাগ করে নিন। লিস্টটা বরং বরকেই বানাতে দিন। তাতে আপনার কাজের একটা আন্দাজ অন্তত তিনি পাবেন। |
|
|
|
|
|