পুড়ে মৃত, ধৃত বাবা-মা-দাদা
গ্নিদগ্ধ হয়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের বাবা, মা ও দাদাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বুধবার বিকালে সাগরদিঘির কৈয়র গ্রামের ওই ঘটনায় মৃতের নাম বচ্চন মাল (২৫)। পুলিশ জানায়, পারিবারিক অশান্তির জেরে প্রচণ্ড মারধর করার পর বাবা জয়দেব মাল, মা আরতি ও দাদা বিকাশ বচ্চনের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের এমনই অভিযোগে পুলিশ ওই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “প্রাথমিক ভাবে অভিযুক্ত ওই ৩ জনই প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সে কারণেই ওদের গ্রেফতার করা হয়েছে।” বচ্চনের বাবা-মা অবশ্য সে অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁরা জানান, অশান্তি হচ্ছিল ঠিকই তবে ওকে কেউ মারধর করেনি। মদ্যপ অবস্থায় সে নিজেই গায়ে কেরোসিন ঢালে। তারপর বিড়ি ধারতে গিয়ে নিজের জ্বালা দেশলাই থেকে গায়ে আগুন ধরে যায় তার।
ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
গ্রামের বাসিমন্দারা জানান, জয়দেবের দুই ছেলের মধ্যে বচ্চন ছোট। পেশায় রাজমিস্ত্রি সে। বছরের বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকত। আয়ও ছিল ভালই। ভাগচাষ করে জয়দেবও বিঘা খানেক জমি কিনেছিল। কৈয়র গ্রামে ৪ শতক জমির উপর মাটির তৈরি দোতলা টিনের বাড়ি। মাস তিনেক আগে বচ্চন কর্মস্থল থেকে বাড়িতে ফেরে। কিন্তু সংসারে সে ভাবে টাকা দিত না সে। তা নিয়েই বাবা-দাদার সঙ্গে বিবাদ। বাড়ি থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছিল তারা। বচ্চনের দাবি ছিল, সে বাড়ির পাশেই এক শতক জায়গার উপর নিজের আলাদা বাড়ি তৈরি করে থাকবে। কিন্তু তার দাবি মানতে নারাজ ছিল তার বাবা। তা নিয়ে কিছু দিন ধরে প্রচন্ড পারিবারিক অশান্তি চলছিল।
প্রতিবেশী লতিকা মাল বলেন, “বচ্চনের বাড়ির সবাই প্রচণ্ড মদ্যপ। দশমীর দিন বচ্চন মদ খেয়েছিল। ওই অবস্থায় বাড়িতে অশান্তি শুরু হয়। বচ্চনের বাবা, মা ও দাদা মিলে বচ্চনকে প্রচণ্ড মারধর করে। বচ্চনের চিৎকার শুনে আমরা ওদের বাড়ি গিয়ে দেখি, দোতলার কোঠার উপরে তিন জনে মিলে ওকে খুব পেটাচ্ছে। আমার অনেকে মিলে ওদের ছাড়াতে যাই। কিন্তু ওরা বলে নিজেদের ব্যাপার নিজেরাই মেটাবে। চলে আলি আমরা।
সামনেই বাড়ি নিতাই মালের। তিনি বলেন, “হঠাৎই দেখি, দোতলার কোঠায় দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। ছুটে গিয়ে দেখি বচ্চনের গায়ে আগুন। কোঠায় মাটিতে পড়ে আছে সে। ওই অবস্থায় আগুন নেভানোর কোনও চেষ্টা না করে পাশে তার বাবা, মা ও দাদা দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমরা আগুন নেভাই।”
এরপরই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। জয়দেব মাল অবশ্য বলেন, “নবমীর দিন সন্ধ্যায় আমার বড় ছেলের সাইকেল চুরি হয়। দশমীর দিন সকালে জানতে পারি, বচ্চন ওই সাইকেলটি চুরি করে পাশের গ্রামের এক জনের কাছে হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। দশমীর দিন সকাল থেকে তাই নিয়ে অশান্তি হচ্ছিল। যে ভাবেই হোক সাইকেলটি ফিরিয়ে আনার জন্য বচ্চনকে চাপ দিই। কিন্তু চুরির কথা বেমালুম অস্বীকার করে মদ খেয়ে গালিগালাজ দিচ্ছিল। তখন সকলে মিলেই ওকে মারধর করি। এরপর গ্রামবাসীরা ছাড়িয়ে দেয়। অশান্তিও থেমে যায়। এরপরেই ঘর থেকে কেরোসিন নিয়ে নিজের গায়ে ঢেলে দেয় বচ্চন। তখন সে বিড়ি খাচ্ছিল। তা থেকেই আগুন লেগে যায়।” তা দেখে বাবা, মা, দাদা কেউ বাঁচাতে যায়নি কেন? অভিযুক্ত মা আরতি মাল বলেন, “মদ্যপ ছেলের অত্যাচার আর কত সইব? রোজারের এক পয়সা বাড়িতে দিত না। উল্টে বাড়ির জিনিস চুরি করে বিক্রি করে দিচ্ছিল। বাড়ি করবে বলে পাশের ফাঁকা জমি লিখে দিতে বলছিল বার বার। আমরা জানতাম তা লিখে দিলে আমাদের পথে বসাত। ও নিজেই গায়ে কেরেসিন ঢেলে আগুন ধরিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.