তেমন গাড়ি পেলে এখনও এক নম্বর হতে পারি
ক বছর আগে যখন দেখা হয়েছিল, বলেছিলেন, “ফর্মুলা ওয়ানে জেতার জন্যই ফিরেছি।” সাত বারের সেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে এ বার সরে যেতে হচ্ছে ব্যর্থতার অসহনীয় জ্বালা নিয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গম্ভীর ছিলেন। কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে দলের হসপিটালিটি এরিয়ায় নিজেকে মেলে ধরলেন নীল শর্টস আর মার্সিডিজের সাদা টি-শার্টে। বাঁ পায়ের হাঁটু থেকে নীচ পর্যন্ত অনেকটা ছড়ে দগদগে হয়ে আছে। বললেন “ফুটবল খেলছিলাম।” ভারতে নিজের শেষ রেসে নামার আগে সারা দিনের অটুট গাম্ভীর্য ভেঙে মাইকেল শুমাখার বললেন সেবাস্তিয়ান ভেটেল থেকে অবসর-অনেক কথা।

প্রশ্ন: আপনাকে বলা হয় পেশাদারিত্বের শেষ কথা। নিজের পেশাদার জীবনের কোনও সিদ্ধান্তের জন্য কি কোনও অনুশোচনা আছে?
মাইকেল: (মুচকি হেসে এক পলক তাকিয়ে থেকে) কী বলতে চাইছেন বুঝতে কিন্তু আমার অসুবিধা হচ্ছে না। হ্যাঁ, মেনে নিচ্ছি অবসর ভেঙে প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্তটা হয়তো পুরো ঠিক ছিল না। কিন্তু ফিরে দেখার তো এটাই সুবিধা। কোথায় কোথায় কোনটা কোনটা ঠিক করলে বাকিটা ভুল হতো না সেটা বলে দেওয়া যায়। তবে আমার কিন্তু মনে হয় এতগুলো বছরের পেশাদার জীবনে আমি ভুলের থেকে ঠিকটাই বেশি করেছি।

প্র: সাত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নের জন্য গত তিন বছরের অভিজ্ঞতা কতটা কঠিন?
মাইকেল: স্বীকার করে নিতে অসুবিধা নেই, গত তিনটে বছর আমার ভীষণ কঠিন কেটেছে। তবে জীবনকে অনেক বেশি বুঝতেও শিখেছি। অবসর ভেঙে ফেরার সময় নিজের কাছে অনেক প্রত্যাশা ছিল। দলের কাছেও। কিন্তু একটা সময়ের পরে বুঝি চাইলেই পাওয়া যাবে, অঙ্কটা সর্বদা এমন দুইয়ে দুইয়ে চার হয় না। এই ঘোর বাস্তবটাকে মেনে নিতে শিখেছি। বলতে পারেন, মানুষ হিসাবে এই তিন বছরে আমি অনেক বেশি গ্রো করেছি। পরিণত হয়েছি!

শুমাখার যখন সাইক্লিস্ট। ছবি: পিটিআই
প্র: ভারতে আপনার অগুন্তি ফ্যান। এখানে শেষ রেসে নামার আগে তাদের জন্য কোনও বার্তা?
মাইকেল: ভারতে আসার আর এখানে রেস লড়ার অভিজ্ঞতাটা একদম অপ্রত্যাশিত ছিল। ভাবতেই পারিনি এখানে এত ফ্যান ফলোয়িং আর নিঃশর্ত ভালবাসা পাব। এই আবেগের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। অসাধারণ লেগেছে। আমার ফর্মুলা ওয়ান প্রেমটা ওঁরা আমার সঙ্গে শেয়ার করছেন, এর থেকে সুন্দর আর কিছু হয় না। ভারতে এসে এই দু’বারে আন্তরিক ভাবে ভাল লাগার অনেক মুহূর্ত আমার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে গিয়েছে।

প্র: এ বার ফর্মুলা ওয়ানে এক ঝাঁক তরুণ তারকা। তাঁদের পাশে এই মুহূর্তে নিজেকে কোথায় রাখবেন?
মাইকেল: (হাসতে হাসতে) জোর দিয়ে বলতে পারি অভিজ্ঞতায় আমিই এক নম্বর।

প্র: বয়স আর ফিটনেস....
মাইকেল: (প্রশ্ন শেষ করতে না দিয়েই) আমার ফিটনেস কিন্তু কোনও দিনই কোনও সমস্যা নয়। আজও ফিটনেসের দিক থেকে সেরা জায়গাটাতেই আছি।

প্র: ভেটেল খেতাব জয়ের হ্যাটট্রিকের পথে। কী মনে হয় আপনার সাত বার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের রেকর্ডটা উনি ভাঙতে পারবেন?
মাইকেল: দেখুন ফ্যাঞ্জিও যখন পাঁচ বার জিতেছিলেন, তখনও কিন্তু অনেকের মনে হয়েছিল রেকর্ডটা কেউ ভাঙতে পারবে না। তার পরে আমি এলাম। এটা ঠিক যে রেকর্ড ভাঙার জন্যই তৈরি হয়। আবার সেবাস্তিয়ানও একটানা জিততে পারে না। তবে এ বার যদি সেবাস্তিয়ানের হ্যাটট্রিকটা হয়, তা হলে আমি ওর জন্য খুবই খুশি হব।

প্র: লুইস হ্যামিল্টন আপনার আসনটায় বসবেন পরের মরসুম থেকে। ওঁকে নিয়ে মার্সিডিজ কি ঠিক করল?
মাইকেল: আলবাত! লুইস টপ ড্রাইভার। ওর জন্য আর পরের মরসুমে গোটা দলের জন্য আমার শুভেচ্ছা রইল। এই দলে আমার অনেক বন্ধু আছে। ২০১৩ মরসুমে কী হয়, সেটা দেখার জন্য আগ্রহ থাকবে।

প্র: এ বার বুদ্ধ সার্কিটের ট্র্যাকটাকে কেমন দেখলেন?
মাইকেল: আমি আজই ট্র্যাক ঘুরে দেখেছি। দারুণ তৈরি মনে হচ্ছে। আগের বারের থেকে চারপাশ অনেক সবুজ। কাল চালিয়ে মজা পাব।

প্র: আচ্ছা এ বারে কি একেবারে পাকাপাকি-ই অবসর নিচ্ছেন? না কি আপনাকে আমরা আবার ট্র্যাকে দেখতে পারি?
মাইকেল: না, না, (হেসে) এ বার আমি সত্যিই যাচ্ছি!

প্র: তা হলে আপাতত মাইকেল শুমাখারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মাইকেল: ফিউচার প্ল্যানস? রেসিং!

প্র: মানে?
মাইকেল: মানে এই মুহূর্তে ভবিষ্যৎ বলতে আমার কাছে এই মরসুমের শেষ দিনটা পর্যন্ত বাকি চারটে রেস নিয়ে অবিরাম ভাবা এবং দল আর নিজের হয়ে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যাওয়া।

প্র: কিন্তু মরসুম তো শেষ হবেই। তখন?
মাইকেল: পরিবারকে সময় দেব। আমার বউয়ের খুব ঘোড়ার শখ। ওর সঙ্গে একটা ঘোড়সওয়ারি শেখানোর অ্যাকাডেমি করতে চাই।

প্র: মানে হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন ছেড়ে সোজা ঘোড়ায়!
মাইকেল: খারাপ কী? আসলে অবসর জীবনে আমার কী করা উচিত তা নিয়ে অনেকের অনেক বক্তব্য। আমি কিন্তু প্রথম বার অবসরের পরেও বেশ সুখেই ছিলাম।

প্র: অবসর ভেঙে ফেরার পরের তিনটে বছর কি মাইকেল শুমাখারের উত্তরাধিকারকে একটু ম্লান করে দিল?
মাইকেল: এই প্রশ্নটা বিভিন্ন মানুষের কাছে রাখুন। দেখবেন বিভিন্ন উত্তর পাচ্ছেন। আমার মনে হয়, দিনের শেষে এক জন ব্যক্তি যা গড়ে সেটা থেকে যায়। হারিয়ে বা মুছে যায় না। তাই আমি মনে করি আমার লেগেসি বা উত্তরাধিকার আগের মতো একই রকম আছে।
চালক হিসাবে আমি আজও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা রাখি। কিন্তু আমাদের দল বা গাড়িটা এই মুহূর্তে সেরা নয়। গত তিন বছরে আমরা অনেক খেটেও আমরা গাড়িটাকে একটা কমপ্লিট প্যাকেজ হিসাবে গড়ে তুলতে পারিনি। অনেক খামতি রয়েছে।

প্র: আপনাদের দল এই মুহূর্তে গাড়ি নির্মাতাদের চ্যাম্পিয়নশিপে ছ’নম্বরে। হাতে তো বেশি রেস নেই। কী মনে হচ্ছে, ছয়েই শেষ করবেন?
মাইকেল: আরে! অদ্ভূত কথা তো! মরসুম শেষই হল না তার আগেই ছয়ে থেকে যাওয়ার কথা ভাবতে বসব কেন? এখনও অনেক কিছু বদলাবে।

প্র: ফর্মুলা ওয়ানকে পাকাপাকি বিদায় জানানোর আগে একটা রূপকথার জয়ের স্বপ্ন কি দেখছেন না?
মাইকেল: আই উড লাভ টু লিভ অন অ্যা হাই! বিজয়ীর মতো মাথা তুলেই সরতে চাই। কিন্তু আমাদের গাড়ির দৌড় কদূর সেটাও তো জানি। এই গাড়ি নিয়ে জেতার স্বপ্ন দেখা যায় না।
একটা অসম্ভব স্বপ্নের পিছনে ছুটে কী হবে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.