উৎসবের মরসুমেই বিষাদের আবহ কালনার কালীনগর গ্রামে। অন্য বছর যখন নতুন জামা-কাপড় কেনা, বাজার থেকে ঘি, কাজু, লাচ্চা ইত্যাদি কিনে আনা নিয়ে মশগুল হয়ে থাকে গ্রাম, এ বার সেখানকার বাসিন্দাদের রাত কাটাতে হচ্ছে ত্রিপলের তলায়। দুর্গাপুজো ও ঈদের আনন্দকে ফিকে করে দিয়েছে অগ্নিকাণ্ড।
কালনার ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের কালীনগর গ্রাম এলাকায় ‘কবাডি গ্রাম’ হিসেবেও পরিচিত। এই গ্রামের বেশ কিছু কবাডি খেলোয়াড় রাজ্য ও জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ভাগীরথী থেকে জলপথে পৌঁছতে এই গ্রামে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২১ অক্টোবর দুপুরে এই গ্রামের মল্লিকপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ভস্মীভূত হয় প্রায় ৫৫টি বাড়ি। গ্রামবাসীরা জানান, কাজের তাগিদে দুপুরে বেশির ভাগ পুরুষ বাইরে ছিলেন। এখটি বাড়ির রান্নাঘরের উনুন থেকে সেই সময়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। ভাগীরথীর দিক থেকে আসা হাওয়ায় সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভৌগলিক অবস্থানগত অসুবিধার কারণে দমকল বাহিনীর কালনা শাখার পক্ষে ওই গ্রামে পৌঁছনোয় সমস্যা রয়েছে। নদিয়ার শান্তিপুর থেকে দমকলের গাড়ি আনার চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। অগত্যা জমি সেচের যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন বাসিন্দারা। ততক্ষণে অবশ্য পাড়ার বেশির ভাগ বাড়িই পুড়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে বেশি কিছু গরু-ছাগলেরও। বেশ কিছু তাঁতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জখম হন তিন জন যুবক। তাঁদের কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। |
গ্রামে গিয়ে দেখা গিয়েছে, পোড়া বাড়ির সামনেই ত্রাণে পাওয়া ত্রিপলে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন বাসিন্দারা। অনেকে অন্য পাড়ার বাসিন্দা, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও আশ্রয় নিয়েছেন। গ্রামের অন্য পাড়ায় বাড়ি প্রাক্তন কবাডি খেলোয়াড় ইনসান শেখের। তাঁর বাড়িতেও আশ্রয় পেয়েছেন কিছু লোকজন। ইদু মল্লিক নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দার কথায়, “চোখের সামনে ঘরটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ঘটনার তিন দিন আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। ঘরে রাখা যৌতুকের সামগ্রী পুড়ে ছাই। এর পরে কি আর উৎসবে মন থাকে!” আর এক বাসিন্দা বুড়ো মল্লিকের কথায়, “প্রচুর ক্ষতি হল। জানি না কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াব।”
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পুলিশের তরফে ত্রাণ হিসেবে জামা-কাপড়, রান্নার সরঞ্জাম ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে। পাশে দাঁড়িয়েছেন পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক স্বপন দেবনাথ, কালনার কয়েক জন ব্যবসায়ী এবং কয়েকটি সংস্থাও। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তি চাল বলেন, “মল্লিকপাড়ার বেশির ভাগ মানুষই খেতমজুর, প্রান্তিক চাষি ও তাঁত শ্রমিক। নানা প্রকল্পের আওতায় তাঁদের ঘর তৈরি করে দেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা চলছে।” |