মুঙ্গের থেকে ‘সামান’ ঢুকে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গে
ফুট পনেরো দূরত্বের মধ্যে মারাত্মক মারণ-ক্ষমতা। আওয়াজ চাপা। কোমরে গুঁজে রাখলে বাইরে থেকে বোঝা কষ্ট। খুব ভারী নয়। চালানোয় ঝঞ্ঝাট নেই। মুঙ্গেরে তৈরি এমনই কিছু পিস্তল দক্ষিণ শহরতলি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে উদ্ধার হওয়ার পরে চোখ চড়কগাছ পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের। ৭.৬৫ মিলিমিটার (এমএম) ক্যালিবারের (গুলির ব্যাস) ওই দিশি পিস্তল অল্প পাল্লায় ব্যবহারে প্রায় বিলিতি পিস্তলের মতোই কার্যকরী এবং মাত্র কুড়ি হাজারে তা দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছচ্ছে জেনে গোয়েন্দাদের রাতের ঘুম উড়েছে।
সম্প্রতি উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জেলা থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশ-কর্তাদের সামনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অস্ত্র চোরাচালান রুখতে নজরদারি কঠোর করার নির্দেশও দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতে পরিস্থিতির গুরুত্ব উল্লেখ করে ইতিমধ্যেই বার্তা গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গের থানায়-থানায়।
মুঙ্গের থেকে দেশি পিস্তল এ রাজ্যে আগেও ঢুকেছে। বেশির ভাগই ৯ এমএম। গোয়েন্দাদের দাবি, বাংলাদেশ হয়ে চিনে তৈরি ৯ এমএমও এ রাজ্য এসেছে। বহু আগে থেকেই দুষ্কৃতীদের কাছে রয়েছে ‘ওয়ানশটার’ বা ‘পাইপগান’। তা হলে এই নতুন পিস্তল (অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ভাষায় ‘সামান’) নিয়ে মাথা ব্যথা কেন?
এই সেই ‘সামান’। —নিজস্ব চিত্র
এক পুলিশ-কর্তার ব্যাখ্যা, “দুষ্কৃতীরা এই জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্রের কদর করে তার দাম, চালানো, আর লুকোনোর সুবিধার কথা মাথায় রেখে। দাম মাত্র ৭০০ হলেও ওয়ানশটারের উপরে ভরসা করা যায় না। চালাতে গিয়ে হাতেও ফাটতে পারে। একটা মুঙ্গেরি ৯ এমএমের দাম যেখানে ৪০ হাজার, চিনের ৯ এমএম ৫০ হাজার, সেখানে এটা মাত্র ২০ হাজার। আকারে ৯ এমএমের চেয়ে ছোট, চ্যাপ্টা। ৯ এমএমের ওজন যেখানে গড়ে দেড় কেজি, সেখানে এটা ৯০০-১১০০ গ্রাম। কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকলে সঙ্গে আছে বলে বোঝা দায়। চালানোও সহজ।” ওই পুলিশ-কর্তা জানান, এই পিস্তলের পাল্লা বড়জোর ২৫ ফুট। তবে ১৫ ফুটের মধ্যে মারণ-ক্ষমতা যথেষ্ট।
আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি বেরনোর সঙ্গে সঙ্গে হাতে একটা ঝাঁকুনি (পরিভাষায়, রিকয়েল) লাগে। ওই পুলিশ-কর্তার ব্যাখ্যা, “অভ্যস্তরা সেই ধাক্কা সামলে ঠিকঠাক নিশানা করতে পারে। কিন্তু রিকয়েল সামলাতে না পারলে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। অস্ট্রিয়ার একটি নামজাদা বন্দুক তৈরির সংস্থার বানানো পিস্তলে যে ভাবে রিকয়েল কমানো হয়েছে, প্রায় একই ধরনের কারিগরি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে মুঙ্গেরের এই মডেলে। ফলে, আনাড়ি লোকও এই পিস্তল চালাতে পারবে অনায়াসে।” গোয়েন্দা সূত্রের খবর, মুঙ্গেরে তৈরি ইস্পাতের এই পিস্তলের ম্যাগাজিনে ১৭টি গুলি ধরে। পিস্তলের বাঁটে দু’টি ডলফিনের ছবি খোদাই করা রয়েছে। কাঁচা হাতে নলের গায়ে খোদাই করা হয়েছে ‘মেড ইন ইউএসএ’।
গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মাসখানেক আগে এমন চারটি পিস্তল-সহ তপসিয়া রোড থেকে বিহারের ভাগলপুর এলাকার বাসিন্দা শামিমা খাতুন নামে এক মহিলাকে ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের ‘স্পেশ্যাল অপারেশনস গ্রুপ’। ১০টি ম্যাগাজিন ও ৩০ রাউন্ড কার্তুজও উদ্ধার হয়। গোয়েন্দাদের দাবি, মুঙ্গেরের বেআইনি অস্ত্র কারখানা থেকে ওই চারটি পিস্তল কিনে কলকাতায় বেশি দামে বিক্রির মতলবে সামশের সিংহ নামে এক ব্যক্তি শামিমাকে পাঠিয়েছিল। পিস্তল প্রতি হাজার টাকা কমিশনে কাজ করছিল শামিমা। দুটি ‘সামান’ এবং ১৫ রাউন্ড কার্তুজ-সহ মহম্মদ ফিরোজ নামে আর এক অস্ত্র ব্যবসায়ীকেও মহেশতলা থানার আক্রাফটক এলাকা থেকে ধরা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীর কথায়, “আক্রা ফটক এবং মেটিয়াবুরুজ থেকে জরির শাড়ি কিনে ব্যবসা করার নামে মহম্মদ ফিরোজ অবৈধ অস্ত্রের কারবার ফেঁদেছিল বলে জেরায় জেনেছি। শামিমা আর ফিরোজ বছর খানেক ধরে অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত।” জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর, ক্যানিং, জীবনতলা থেকেও এই পিস্তল-কারবারে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে ধরা হয়েছে।
পুলিশের চিন্তায় পড়ার আরও কারণ রয়েছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “পুলিশের কাছে রাইফেল বাদ দিলে আগ্নেয়াস্ত্র বলতে রিভলভার, ৯ এমএম পিস্তল আছে। কনস্টেবলদের বড় অংশের আবার লাঠিই ভরসা। এ ধরনের পিস্তল যদি দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছয়, তা হলে তো বিপাকে পড়লেই তারা ঠাঁই-ঠাঁই-ঠাঁই-ঠাঁই-ঠাঁই করে দিয়ে হাওয়া হয়ে যাবে। নিধিরাম সর্দারেরা কী করবে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.