|
|
|
|
|
|
|
কৈলাসে কলিং |
টাস্ক ছিল, শিব আর দুর্গার মধ্যে টেলিফোন-ডায়লগ লেখা। জিনিয়াসদের পাঠানো
সেই অকল্পনীয় কল্পনার সংলাপই এ বারের পাতায় সাজিয়ে দেওয়া হল। |
|
দুর্গা: ...বেশি কথা বলা যাবে না, চার্জারটা ফেলে এসেছি। এনেও লাভ হত না, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখানে জেনারেটর চালাতে পারছে না।
শিব: সে কী!
দুর্গা: নতুন জুতোটা প্যাকিং করেই রেখে দিয়েছি, ভাগ্যিস বাড়িতে পরার হাওয়াই চটিটা এনেছিলাম।
শিব: তুমি হাওয়াই চটি পরে আছো?
দুর্গা: শুধু কী তাই, ষষ্ঠীর দিন সকালে খেতে দিয়েছে শুকনো মুড়ি-চানাচুর, আর রাতে চারটে ডায়াবেটিস সন্দেশ!
শিব: ডায়াবেটিস সন্দেশ!
দুর্গা: তোমার জন্য নিয়ে আসব। ভাল কথা, ওষুধগুলো টাইম মতো খেয়ে নিয়ো।
শিব: রাতে ঘুম হয়েছে?
দুর্গা: এ বারে ঘুম খুব ভাল হয়েছে। প্যান্ডেলটাই তো মশারির, সঙ্গে অলআউটও আছে। খালি অসুরটা এমন করে নাক ডাকছিল, প্রথমে একটু অসুবিধে হচ্ছিল।
শিব: আর একটা দরকারি কথা ছিল, মনে পড়ছে না।
দুর্গা: ভাল কথা! ওখান থেকে কিছু খুচরো পয়সা আনলে কাজে দিত।
শিব: কেন?
দুর্গা: আর বোলো না, প্রণামী বাক্সে কেউ খুচরো পয়সা দিচ্ছে না। কী অবস্থা ভাবো!
শিব: আমার বাচ্চারা সব আনন্দ করছে তো?
দুর্গা: জানো, এখানকার বাচ্চারা কেউ সরস্বতীকে ডাকছে না।
শিব: কী হল আবার? দুর্গা: এখানে পরীক্ষায় সবাই পাশ। লক্ষ্মী-গণেশেরও একই অবস্থা। আসলে টাকার চেয়ে নকল টাকার ডিমান্ড বেশি।
শিব: সে কী! যাঃ লাইনটা কেটে গেল।
দুর্গা: যাঃ, ফোন সুইচ অফ হয়ে গেল।
|
সৌমী বসু। অষ্টম শ্রেণি, হোলি চাইল্ড গার্লস হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল |
|
|
দুর্গা: হ্যালো, শুনতে পাচ্ছ?
শিব: হ্যাঁ, শুনতে পাচ্ছি। দিলে তো সকালের কাঁচা ঘুমটা ভাঙিয়ে। মোবাইল ম্যানার্স কবে যে শিখবে? যাক, যেটা বলছিলাম, কৈলাসে নেটওয়ার্কে খুব প্রবলেম চলছে। বিশু (বিশ্বকর্মা) আর তার ইঞ্জিনিয়াররা পুজোর ছুটিতে চলে গিয়েছে।
দুর্গা: কী করব? সারা রাত জেগে ভক্তরা আমায় দেখতে এসেছে। এখন মর্তে ভোর পাঁচটা। রাত জেগে ঠাকুর দেখে সবাই ঘুমিয়ে। তাই ফোন করলাম। মর্তের নেটওয়ার্কের অবস্থাও শোচনীয়। তা বলছি, ডা. ধন্বন্তরীর দেওয়া কাশির ওষুধটা খেয়েছ তো? আর এ ক’দিন কল্কে-টল্কেতে হাত দিয়ো না যেন!
শিব: আরে না, না। রান্নাবান্না করে সময় পেলে তো ওতে হাত দেব। তুমি চলে যেতেই কাজের মাসিও ডুব মেরেছে। ভৃঙ্গি তো বাসন মেজে কোমর ব্যথায় পড়ে আছে। আমি কোনও রকমে খিচুড়ি ফুটিয়ে নিচ্ছি।
দুর্গা: দেখেছ, আমি জানতাম কাজের মাসি এমন করবে। দাঁড়াও। ফিরে এসে ওর অর্ধেক মাইনে কেটে না নিলে আমিও দুর্গা নই। যা হোক, ক’টা দিন ফল-মূল দিয়ে চালিয়ে নাও। এ দিকে দশ-দশখানা অস্ত্র ধরে দাঁড়িয়ে
থেকে আমারও হাত টনটন করছে। ‘মুভ’ লাগাতে হবে!
শিব: ভাল করে শোনো। মর্তে এখন ডেঙ্গিসুরের খুব উৎপাত চলছে। এরা সংখ্যায় অনেক। তোমার ওই মান্ধাতার আমলের অস্ত্র দিয়ে ওদের কাবু করতে পারবে না। গায়ে ওডোমস মেখে, মসকুইটো কয়েল জ্বেলে, হাতে ধোঁয়া-কামান নিয়ে যুদ্ধে নামবে। রাতে গনু, কেতো, লাকি আর সরোকে মশারির ভেতর রাখবে। পারলে সল্ট লেকের দিকটায় যাওয়া অ্যাভয়েড কোরো। আর পুজোর পাঁচ দিন রেগুলার অ্যান্টাসিড খাবে।
দুর্গা: তা ঠিকই বলেছ। একাদশীর দিনের ফ্লাইটেই আমি গনু, কেতো আর সরোকে নিয়ে ফিরে আসছি। লাকির (লক্ষ্মী) ফ্লাইট পাঁচ দিন পর। ভাবছি, আসার সময় ওডোমসটা আর অ্যান্টাসিডগুলো ওকে দিয়ে আসব। এখন রাখছি। পুরুতমশাইকে এ দিকে আসতে দেখছি। রাতে শুগারের ট্যাবলেটটা খেয়ে নেবে। খুব প্রয়োজন হলে এস এম এস কোরো। বাই...।
|
দেবপ্রতিম পাল। ষষ্ঠ শ্রেণি, জেনকিন্স স্কুল কোচবিহার |
|
|
শিব: হ্যালো, হ্যালো! দুর্গা বলছ?
দুর্গা: হ্যালো হ্যালো, জোরে বলো শোনা যাচ্ছে না। শিব: তোমাকে কাল থেকে ফোনে ধরার চেষ্টা করছি, শুধু ‘নট রিচেবল’ বলছে!
দুর্গা: বলবে না কেন, মর্তে এখন এত উঁচু উঁচু বাড়ি আর শপিং মল, সহজে টাওয়ার পাওয়া যায় না। তুমি তো আমাকে খুঁজে পাচ্ছ না, আর আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। কাল যখন মাটির তলায় মেট্রো রেলের এ সি কম্পার্টমেন্ট থেকে নেমে চারিদিকে সাপের মতো এঁকে বেঁকে যাওয়া উড়ালপুলের উপর দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল, আমার প্যান্ডেলটা খুঁজে পাব তো? শিব: ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেশি না খুঁজে পথ চলতি লোকেদের জিজ্ঞেস করতে পারতে।
দুর্গা: আরে দূর! পথ চলতি লোকেদের কানে মোবাইলের তার গোঁজা, তারা অন্যের কথা শুনতে পায় না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। তবে অসুবিধে হয়নি, পুজো কমিটির লোকেরা আমাদের খুব যত্ন করেই নিয়ে এসেছে।
শিব: শুনেছি মর্তে খুব ডেঙ্গি হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের সাবধানে রেখো।
দুর্গা: ষষ্ঠীর দিন তো বেলতলাতে ছিলাম, কমিটির উদ্যোক্তারা খুবই সতর্ক। ডেঙ্গির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এ বারে মশারির প্যান্ডেল করেছে। তাতে মশারির ব্যবসায়ীরাও খুব খুশি।
শিব: আর কী করলে?
দুর্গা: জানো, কার্তিক শপিং মল থেকে তোমার জন্য একটা আধুনিক ডুগডুগি কিনেছে। বাজালেই ‘ব্যোম ব্যোম’ বলছে। শিব: তা হলে সপ্তমীর সকালটা ভালই কাটছে। এত দিন পর মর্তের লোকেরা তোমায় পেয়ে খুবই আনন্দ করছে নিশ্চয়?
দুর্গা: হ্যাঁ, হ্যাঁ, নিশ্চয়। আজ সকালে ছোট ছোট বাচ্চারা এসেছিল আমার ই-মেল আইডিটা চাইছিল তাদের মনের বাসনা জানানোর জন্য। শিব: ওদের বলো তোমার ফেসবুক-এ জয়েন করতে।
দুর্গা: তোমায় কী বলব, ষষ্ঠীর ভোগটা এত সুন্দর হয়েছিল না! শুনেছি ওটা মাইক্রোওয়েভ-এ তৈরি।
শিব: তুমি বেশি খাওয়াদাওয়া কোরো না, ওজন বেড়ে যাবে।
দুর্গা: এখানে তো দেখছি ফাস্ট ফুডের দোকানে প্রচুর ভিড়। মনে হয় রান্নার গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে কেউ আর রান্না করছে না।
শিব: আরে তা নয়, রান্না যে একটা শিল্প, মর্তের লোকেরা তা ভুলেই গিয়েছে হয়তো।
দুর্গা: যা-ই হোক, তুমি ঠিকমতো হাঁটুতে ব্যথার মলমটা লাগিয়ে নিয়ো, না হলে শিবরাত্রিতে নাচতে পারবে না কিন্তু। এখন ছাড়লাম, প্রচুর লোকজন আমায় দেখতে আসছে। ওদের সঙ্গ দিতে হবে। বাই...।
|
সুলগ্না পালিত। তৃতীয় শ্রেণি, বি ই মডেল স্কুল, হাওড়া |
|
|
দুর্গা: হ্যালো, শুনতে পাচ্ছ? আমি উমা বলছি।
শিব: হ্যাঁ বলো। সময়ে পৌঁছতে পেরেছ তো?
দুর্গা: পেরেছি। মাঝপথে অবশ্য সিংহের
পিঠে যাওয়ার জন্য কিছু পশুপ্রেমী পথ অবরোধ করেছিল।
শিব: তার পর? কোনও প্রবলেম হয়নি তো?
দুর্গা: না, না। গণেশ ঠান্ডা মাথায় সব বুঝিয়ে বলল। যাক গে, লক্ষ্মীর জীবনবিজ্ঞান বইটা বাঁধাতে দেওয়া ছিল, নিয়ে এসেছ?
শিব: এই যা! একদম ভুলে গেছি। সরস্বতীও তো একটা নতুন ডিভিডি আনতে বলেছিল।
দুর্গা: ভুলে তো যাবেই। তোমার নামই তো ভোলা। ওগুলো এনো। আর শোনো, সে-দিন অশ্বিনী বলছিল, তুমি নাকি লুকিয়ে লুকিয়ে হিসট্যাক খাচ্ছ?
শিব: সে খবরও পেয়ে গেছ!
দুর্গা: ইচ্ছামতো হাবিজাবি ওষুধ খাওয়াটা ছেড়ে, শুগারের ওষুধটা মনে করে খেয়ো।
শিব: হ্যাঁ, হ্যাঁ, শুগারের ওষুধও খাচ্ছি। মর্নিং ওয়াকও বাদ দিইনি। শোনো, এই চার দিন অনেক উল্টোপাল্টা খাওয়া হবে। তুমিও সাবধানে থেকো।
দুর্গা: সে আর বলতে। দশমীর দিন তো আবার সাঁতরে নদী পেরোতে হবে। নারদকে দিয়ে তাড়াতাড়ি সাঁতারের কিক বোর্ডটা পাঠিয়ে দিয়ো তো।
শিব: কালকেই পাঠিয়ে দিচ্ছি। এ দিকে কৃষ্ণ একটা গানের অনুষ্ঠানের জন্য আমার কাছে এসেছে। গণেশ তো সব লাড্ডু আর জিলিপ খেয়ে খেয়ে শেষ করে গিয়েছে। ওকে কী খেতে দিই বলো তো?
দুর্গা: নন্দীকে দিয়ে কার্তিকের অন্দরমহলের ফ্রিজ থেকে এক বাক্স মিষ্টি আনিয়ে নাও। কোল্ড ড্রিঙ্কসও আছে মনে হচ্ছে।
শিব: তা হলে তো কথাই নেই।
দুর্গা: আর শোনো? কার্তিকের কথায় মনে পড়ল। ও বলছিল, তোমার সাপটা নাকি ইদানীং সবার বাড়ি গিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের ভয় দেখাচ্ছে। ওকে একটু বকাঝকা করে দিয়ো তো।
শিব: ও, তাই নাকি? ঠিক আছে, বকে দেব।
দুর্গা: এখন রাখছি তা হলে। ঢাক বাজছে, মনে হচ্ছে পুজো আরম্ভ হবে। রাত্তিরে ফাঁকা থাকলে ফোন করব।
শিব: ঠিক আছে। ভাল থেকো।
|
ইমনকল্যাণ মিত্র। তৃতীয় শ্রেণি, উলুবেড়িয়া টাউন মিশন স্কুল |
|
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|