কখনও প্রবল উত্তেজিত। কখনও যুক্তিবাদী। আবার বিতর্কিত প্রশ্নে কাজ করছে তাঁর চতুর মগজাস্ত্র।
১৮ নভেম্বরের
আগে কোনও ইন্টারভিউ নয়, জানিয়ে দিয়েছিলেন মিডিয়াকে। বরফ গলল, তবে শর্ত দিলেন
মোহনবাগান নিয়ে
কোনও প্রশ্ন নয়। কিন্তু সাক্ষাৎকারের ফাঁকে বেরিয়ে এল ওডাফাদের দল নিয়ে অনেক কথাই।
গোয়া থেকে মোহনবাগানের নতুন চাণক্য করিম বেঞ্চারিফা ফোনে রতন চক্রবর্তী-কে যা বললেন... |
প্রশ্ন: সালগাওকরকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছেন। নিজের হাতে এ বারের টিম তৈরি করেছেন। হঠাৎ কি এমন ঘটল যে সেই ক্লাব ছেড়ে দিলেন?
করিম: ক্লাবে কিছু দিন ধরে এমন কিছু ঘটনা ঘটছিল যা আমার ভাল লাগছিল না। আমি পেশাদার, ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে বলতে চাই না। কিন্তু ৬ অক্টোবর শিলং থেকে আই লিগের ম্যাচ খেলে ফেরার পর দিন আমি ক্লাব সচিব রাজ গোমসকে বলেছিলাম, কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিতে চাই।
প্রশ্ন: কিন্তু আই লিগের মাঝপথে একটা টিমকে পথে বসিয়ে আসছেন। লোকে তো বলছে আপনি বেইমান! শুধু গোয়ায় নয়, সর্বভারতীয় মিডিয়ায় প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে আপনার সিদ্ধান্ত নিয়ে।
করিম: কীসের বেইমানি করলাম বুঝতে পারছি না। মোহনবাগানের প্রস্তাব আসার অনেক আগেই তো আমি সালগাওকর ছাড়তে চাই জানিয়ে দিয়েছিলাম। ইস্তফাপত্র জমা দেওয়ার দশ দিন আগে ক্লাব সচিবকে জানিয়েছি। ১৫ এবং ১৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট শিবানন্দ সালগাওকরের সঙ্গে মিটিং করেছি। তারপর ইস্তফা দিয়েছি। সবচেয়ে বড় কথা আমি চুক্তি অনুযায়ী আরও একমাস কোচিং করাব সালগাওকরকে। কোনও চুক্তি তো ভঙ্গ করিনি। পেশাদাররা তো এ রকমই করে।
প্রশ্ন: কিন্তু এ ভাবে আই লিগের দুটো ম্যাচের পর টিম ছেড়ে দেওয়াটা একজন পেশাদার কোচকে মানায় না। মানা যাচ্ছে না।
করিম: (রাগত স্বরে) কেন মানবেন না? আমি তো চুক্তি মেনেই সব করেছি। ধরুন, আমি আই লিগের পরপর চার বা পাঁচটি ম্যাচ হারলাম। এরপর সালগাওকর ম্যানেজমেন্ট আমাকে এক মাসের নোটিশ দিয়ে বলত তোমাকে আমরা চাই না। তখন কী বলতেন? অথবা আমি বলতে পারতাম যে, মরোক্কোয় আমার পরিবারে কিছু সমস্যা হয়েছে। আর একমাস কোচিং করিয়ে চলে যাব। চুক্তি অনুযায়ী সালগওকরকে সেটা মানতেই হত। এক সপ্তাহ পর ফিরে এসে অন্য ক্লাবে যোগ দিতাম। সেটা কিন্তু আমি করিনি। আমি সৎ ভাবে সব করেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু সবাই তো বলছে মোহনবাগানের ১৭ মাসে দু’কোটি টাকার বিশাল আর্থিক প্রস্তাব ও অন্য সুযোগ সুবিধা আপনার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে। সে জন্যই তড়িঘড়ি পদত্যাগ করেছেন। মোহনবাগানে কোচিং করাতে আসছেন?
করিম: আমি এখনও একমাস সালগাওকরের কোচিং করাব। মোহনবাগান নিয়ে একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেব না। তবে জেনে রাখুন আমি সালগাওকর ছাড়তামই। আমার কাছে মোহনবাগান ছাড়াও সিঙ্গাপুর এবং মলদ্বীপের দু’টো ক্লাবের প্রস্তাব ছিল। আপনি চাইলে প্রস্তাবের ই-মেলগুলো ফরোয়ার্ড করে দিতে পারি। |
প্রশ্ন: মোহনবাগান কর্তারা শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, তারা মরসুমের শুরুতে আপনাকে চেয়েছিলেন। আপনি তখন চুক্তিভঙ্গ করে আসতে চাননি। ঠিক?
করিম: মোহনবাগান ছেড়ে গেলেও ওদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক ছিল। দেবাশিস (দত্ত) নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। বারবার প্রস্তাব দিত, কোচ হয়ে আসার। আমি বলতাম, যদি সালগাওকর ছাড়ি তা হলে মোহনবাগানের কথা ভাবব।
প্রশ্ন: মোহনবাগানের হাল তো খুব খারাপ। দু’বছর ট্রফি নেই। হারের পর হার। এই অবস্থায় ওডাফা-টোলগেদের দায়িত্ব নেওয়াটা তো বড় চ্যালেঞ্জ? ঝুঁকিটা নিলেন?
করিম: চ্যালেঞ্জ নিতে আমি ভালবাসি। কোচেদের জীবনটাই তো চ্যালেঞ্জের। নতুন ক্লাব নিয়ে যা বলার ১৮ নভেম্বর বলব।
প্রশ্ন: আপনি তো সব টিমের খেলা দেখেছেন। মোহনবাগান কেমন টিম?
করিম: হাই কোয়ালিটির অনেক ফুটবলার আছে। ওয়েল ব্যালান্সড।
প্রশ্ন: মোহনবাগান কি আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে?
করিম: প্রথমেই বলেছি মোহনবাগান সম্পর্কে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেব না। অন্য প্রশ্ন করুন।
প্রশ্ন: ঠিক আছে। তা হলে এটা বলুন, আপনার মতে আই লিগের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দাবিদার কারা?
করিম: ডেম্পো, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, প্রয়াগ এবং চার্চিল।
প্রশ্ন: আই লিগে প্রথম দুটো ম্যাচে হার। পরের চারটি ম্যাচে কোচ নেই। সেই মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হবে?
করিম: হতে পারে। দাবিদার তো বটেই।
প্রশ্ন: তা হলে আপনার ছেড়ে আসা টিম সালগাওকর চ্যাম্পিয়নের দাবিদার নয়?
করিম: ওটা ভবিষ্যতের টিম। প্রচুর তরুণ ও প্রতিভাবান ফুটবলার আছে টিমে। ডেম্পো, ইস্টবেঙ্গল যেমন একটা টিম ধরে রেখেছে, সালগাওকরও তাই করেছে।
প্রশ্ন: ওডাফার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন? টোলগে-ওডাফা ঝামেলা মেটাতে পারবেন? ওদের সঙ্গে কথা বলেছেন?
করিম: আমি তো এখন সালগাওকরের কোচ। ওদের সঙ্গে কেন কথা বলব?
প্রশ্ন: আপনার যে দিন (১৮ নভেম্বর) মোহনবাগানের দায়িত্ব নেওয়ার কথা তার আগের দিন তো সালগাওকর-মোহনবাগান ম্যাচ। আপনি কি চাইবেন?
করিম: ওই ম্যাচ হতে এখনও প্রায় একমাস বাকি। আমি তো ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবি। ওই ম্যাচের আগে কিন্তু আরও তিনটে ম্যাচ আছে।
|
সবুজ-মেরুনে করিম |
• আই লিগ রানার্স ২০০৮-০৯
• ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন ২০০৮
• সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন ২০০৮-০৯
• আইএফএ শিল্ড রানার্স ২০০৯
• কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন ২০০৯ |
|