সচিন-বিতর্ক নিয়ে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেল আনন্দবাজার
‘সচিন, তুমিই ডনের পরে কিন্তু এই খেতাবটা তোমার জন্য নয়’

সচিন ও ব্র্যাডম্যান: সর্বকালের নিরিখে সচিনকে আমি ডনের পরেই রাখব। যদিও ও অনেক পিছনে থাকা দুই। ব্র্যাডম্যান জাস্ট অনন্য। এই পৃথিবী হয়তো আগামী একশো বছরে আর এক জন তেন্ডুলকর দেখবে। কিন্তু ব্র্যাডম্যান দেখবে না! ডন শেষ করে ৯৯.৯৪ গড় নিয়ে। গ্যারান্টি দিতে পারি আজকের দিনে ওটা দ্বিগুণ হয়ে ১৯৯ দাঁড়াত। আমি একেক সময় ভাবি, আজকের এই সব আধুনিক ব্যাট আর ব্যাটসম্যানের সমর্থনে চলে যাওয়া সব নিয়মকানুনের সুযোগ যদি ডন পেত, তা হলে হয়তো পরের ব্যাটসম্যান আর ক্রিজে নামতেই পারত না। সচিনও খুব বড় ব্যাটসম্যান। আমি হ্যামন্ড, হার্টন, সোবার্স, লারা, উইকস সবাইকে দেখেছি। ভিভকে ততটা দেখিনি। কিন্তু যাদের দেখেছি তাদের মধ্যে ব্যাটসম্যানশিপের দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ মাস্টারমশাই হল সচিন। চেন্নাইতে একটা টেস্ট ম্যাচে ও ওয়ার্ন আর ম্যাকগ্রাকে যে ভাবে মেরেছিল দেখে আমি বিস্ফারিত হয়ে যাই। মনে হচ্ছিল, ডনই কি আবার ফিরে এল?

নীল হার্ভি। চাঁচাছোলা
প্রতিক্রিয়া।
সচিন ও অবসর: আমার মনে হয় সচিনের এখনই অবসর নিয়ে নেওয়া উচিত। আরও যদি টানতে থাকে খেলাটা এমন ব্যাকগিয়ারে চলে যাবে যে মান-সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে। ওর মনে রাখা উচিত, ডন হলে আর টানতেন না। আমিও টানব না। দীর্ঘ দিন ধরে ও যে টেস্টে সেঞ্চুরি পাচ্ছে না, এটাই একটা প্রমাণ যে মাস্টারিটা কোথাও আগের মতো সার্বভৌম নয়। আপনি বললেন, এই সে দিন সেঞ্চুরি তো করেছে ওয়ানডে ম্যাচে। আমার উত্তর হল, কী হাস্যকর কথাই না বললেন। ওয়ানডে সেঞ্চুরি আবার সেঞ্চুরি! আমরা ওটা ধরিই না। আমি তো অন্তত ধরি না। অস্ট্রেলিয়াতে ভারত যখন গতবার এল তখনই আমার মনে হয়েছিল, ইদানীং ঘরের মাঠে ও যতই ভাল খেলে আসুক, আমাদের দেশের মতো দ্রুততম পিচে ফুটওয়ার্ক দিয়ে ম্যানেজ করতে সমস্যায় পড়ছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে কোনও তফাত নয়। পা-টা হয়তো আসছে সেকেন্ডের ভগ্নাংশের কম সময়ে। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে ওই ভগ্নাংশটাই যে তফাত হয়ে যায়।

সচিন-বিতর্ক ব্র্যাডম্যান কী ভাবে দেখতেন: আমার পক্ষে বলা মুশকিল। আমি জানি, ডনও সচিনকে খুব পছন্দ করত। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে ও কী বলতে পারে সেটা আন্দাজ করাই সম্ভব ছিল না। ওভালে ওর জীবনের শেষ টেস্টের পর যেমন শূন্য করে যখন ফিরল ব্যাট ছোড়াছুড়ি, গম্ভীর মুখে ঢুকে যাওয়া এ সব কিছুই করেনি। আসলে তখন স্ট্যাটিস্টিক্সের চল হয়নি। কেউ খুঁটিনাটি খবরও রাখত না। আজকের দিনে অবিশ্বাস্য লাগবে যে ডন নিজে এবং আমরা সতীর্থরাও কেউ জানতাম না যে, একশো ব্যাটিং গড় করার জন্য শেষ ইনিংসে ওর আর মাত্র চার রান দরকার। মাত্র চার রান না পাওয়ার জন্য যে ওর একটা শৃঙ্গারোহণ থেমে গিয়েছিল সেটা জানতে পারি অনেক পরে। ডনও পরে জেনেছিল। আজও মনে হয়, এরিক হলিসের গুগলিটা ও পড়তে পায়নি ভীষণ আবেগে আক্রান্ত থাকায়। ইংল্যান্ড টিম যে ভাবে ওকে সশ্রদ্ধ গার্ড অব অনার দিয়েছিল আজও ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। আশ্চর্য--ডন ফিরে এল ড্রেসিংরুমে। প্যাড খুলতে খুলতে শুধু বলল, “ছবিটা ঠিক এ রকম হওয়া উচিত হয়নি, তাই না?” এ জন্যই আজকে ও কী প্রতিক্রিয়া দিত আন্দাজ করতে পারছি না।

সচিন যখন অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে: বিদেশি অনেক বড় বড় ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ায় খেলে গিয়েছে। আমি তিন জনকে আলাদা করে বেছে নিতে চাই। এক, স্যার ফ্র্যাঙ্ক ওরেল। এমন একটা সময় ওরেল আমাদের দেশে পজিটিভ ক্রিকেটের বাণী নিয়ে এসেছিল, যখন ক্রিকেট চূড়ান্ত গতিমন্থরতায় ভুগে মুমূর্ষু হয়ে পড়েছে। সেই সিরিজে খেলেছিলাম বলে জানি, ক্রিকেটের গতিপথটাই ওরেল অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়। আমাদের দেশ সিরিজ হেরে যাওয়ার পরও ওকে প্রায় মাথায় করে রেখেছিল। সচরাচর অস্ট্রেলিয়ানরা হেরে যাওয়া টিমের অধিনায়ককে এই সম্মান দেখায় না। দু’নম্বর গ্যারি সোবার্স। ক্রিকেট মাঠে কোনও মনুষ্যের পক্ষে যা যা করণীয় সোবার্স সব করতে পারত। প্রকৃতিতেই নেই যে ওর চেয়ে বড় অলরাউন্ডার হতে পারে। সোবার্স অনেক দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান দর্শককে। তিন নম্বর অবশ্যই সচিন। ওকে ঘিরে গত কয়েকটা সফরে অস্ট্রেলিয়া যা আলোড়ন দেখিয়েছে তার চেয়ে বড় দর্শক-কৃতজ্ঞতা আর কিছু হতে পারে না। কোনও কোনও শহরে টিভিতে দেখেছি, সচিনকে অবিরাম স্ট্যান্ডিং ওভেশন দেওয়া হয়েছে। আমার স্মৃতিতে একমাত্র এর সঙ্গে তুলনীয় আটচল্লিশের ইংল্যান্ড সফর। ডন ঠিক এই জিনিসই পেয়েছিল।

সচিনের পুরস্কার-বিতর্ক:
আমি মনে করি, সচিনের এই পুরস্কার পাওয়া উচিত নয়। এটা একান্তই অস্ট্রেলীয় পুরস্কার। অস্ট্রেলীয় জাতির জন্য যাদের প্রভূত অবদান আছে, এই পুরস্কার একমাত্র তাদেরই পাওয়া উচিত। পুরস্কারের স্পিরিটটা তাই। মেম্বার অব দ্য অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ড আজও রিচি বেনো পায়নি। আমি পাইনি। ইয়ান চ্যাপেল পায়নি। তা হলে সচিন কেন পাবে? অস্ট্রেলিয়ার দর্শককে খেলা দেখিয়ে মুগ্ধ করা একটা জিনিস। সচিনের স্কিলে আমরা মুগ্ধ হয়েছি তো নিশ্চয়ই। তাকে সপ্রশংস তারিফও জানিয়েছি। সেটাই তো ওকে সবচেয়ে বড় পুরস্কার দেওয়া। আবার কী দেব? অস্ট্রেলিয়া জাতির জন্য করা আর একটা জিনিস। এই বৃদ্ধ বয়সেও আমার মনে হচ্ছে, দু’টোকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। আর সেটা খুব অন্যায় হয়েছে। আমি তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি।

সচিন-পূর্ব বিদেশিদের একই সম্মান প্রাপ্তি: আমি যত দূর জানি, এর আগে খেতাবটা দেওয়া হয়েছিল সোবার্স, লয়েড আর লারাকে। সে ক্ষেত্রেও একই রকম অন্যায় করা হয়েছে। বিদেশিরা কেন পাবে আমাদের দেশের লোকদের জন্য রাখা পুরস্কার? লারা যদি অসাধারণ হয় ত্রিনিদাদ দিক না ওকে যত খুশি পুরস্কার। সত্যিই তো সেটা ওর প্রাপ্য। সচিন যদি অসাধারণ হয়, ওর দেশ ওকে সম্মান জানাক। সত্যিই তো ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য সচিন কী করেনি! তা বলে বিদেশি রাষ্ট্রের পুরস্কার কেন পাবে?

সচিনের বেলাতেই শুধু বিতর্ক: বিতর্ক আগেই ওঠা উচিত ছিল সত্যি। যখন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের সম্মানিত করা হয়। তখন কেউ মুখ খোলেনি। আসলে কারণটা বোধহয় অন্য। ক্রিকেটমহল থেকে আমি যত দূর শুনছি, সচিন সম্পর্কে বিতর্ক তুলেছে পন্টিংয়ের টিমের কিছু প্লেয়ার। ওদের আজও রাগ আছে যে ‘মাঙ্কিগেট’ বিতর্কে হরভজনকে বাঁচাতে গিয়ে সচিন আদালতে যেটা বলে এসেছিল সেটা সত্যি নয়। ওই প্লেয়ারদের সেন্টিমেন্ট হল, আর পাঁচ জন হলে যা করত তুমি তা করলে কেন? তা হলে তুমি আর ‘সচিন’ কেন!

বুকাননের ভোট সচিনের দিকে
আনন্দবাজারকে নিউজিল্যান্ড থেকে পাঠানো বিশেষ এসএমএসে জন বুকানন। মাঙ্কিগেট-বিতর্কের ঠিক আগে পর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছর যিনি অস্ট্রেলিয়ান কোচ ছিলেন।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.