সম্পাদকীয়...
দুগ্ধবোধ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইংল্যান্ডে মাতৃদুগ্ধ বিক্রয় হইতেছে, অনলাইন-এ। ফেসবুক বা অন্য অনুরূপ ভার্চুয়াল মিলমিশস্থলে উপস্থিত হইয়া কোনও মহিলা ঘোষণা করিতেছেন, উক্ত বস্তুটি তিনি বিক্রয় করিতে চান, সঙ্গে সঙ্গে সদ্যপ্রসূতি যে মাতার বক্ষে দুগ্ধ আসে নাই, বা যথেষ্ট পরিমাণে আসে নাই, তিনি বা পরিবারের কেহ তাহা ক্রয় করিবার উৎসাহ জানাইতেছেন। প্রচলিত ধারণা: মাতৃদুগ্ধের ন্যায় পুষ্টি ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা, কৃত্রিম রূপে প্রস্তুত কোনও দুগ্ধই শিশুকে দিতে পারিবে না। অতএব মাতৃদুগ্ধের চাহিদা প্রবল। কিছু সাইট রহিয়াছে এই বাণিজ্য সহজে করিবার জন্য, সেখানে মহিলারা তাঁহাদের সন্তানের বয়স নথিবদ্ধ করান ও অন্য মাতার চাহিদা অনুযায়ী ‘সাম্প্রতিক’ দুগ্ধ দিতে পারিবেন কি না জানান, হবু ক্রেতা তাঁহার সন্তানের বয়স মিলাইয়া, কেনার জন্য যোগাযোগ করেন। ইংল্যান্ডে এক পাউন্ডে প্রতি তরল আউন্স হিসাবে বিক্রয় হইতেছে তরল অথবা ঠান্ডায় জমাইয়া রাখা দুধ। আমেরিকায় ওই পরিমাণের মূল্য দুই ডলার।
ডাক্তারেরা বলিয়াছেন, এই ক্রয়-অভ্যাস বিপজ্জনক। ক্রেতা তো জানেন না, যাঁহার দুগ্ধ তিনি নিজ সন্তানকে দিতেছেন, তিনি নিয়মিত কী ঔষধ সেবন করেন, বা তাঁহার এড্স বা হেপাটাইটিস রোগ আছে কি না, বা তিনি নিজে অপুষ্ট কি না। দুগ্ধ পান করিলে শিশুর সমূহ ক্ষতিও হইয়া যাইতে পারে। আপত্তি আরও। মাতৃদুগ্ধ শিশুর পক্ষে শ্রেষ্ঠ আহার্য: ধারণাটি প্রায় সর্ব স্তরে গৃহীত, কিন্তু ইহার যাথার্থ্য কতটা যুক্তির উপর নির্ভরশীল, আর কতটা আবেগঘন নাট্যপ্রবণতার উপর কিছু মানুষ নিশ্চিত নহেন। বিশেষত নারীবাদী কিছু তার্কিক প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন, ইহা পিতৃতন্ত্রের অন্যতম আয়ুধ, উন্নত প্রযুক্তিতে প্রস্তুত কৃত্রিম দুগ্ধ মাতৃদুগ্ধের তুলনায় কিছুমাত্র ন্যূন নহে, কিন্তু ‘মাতৃদুগ্ধই শ্রেষ্ঠ’ স্লোগানের দ্বারা নারীকে আরও বাঁধিয়া ফেলা যাইবে ও সন্তান জন্মাইবার অব্যবহিত পরে অধিক পরাধীন রাখা যাইবে বলিয়াই এই প্রচার। এমনকী, যে ডাক্তারেরা এই ধারণার কট্টর সমর্থক, তাঁহারাও আসলে একটি ‘আদর্শ’কে, মাতার বক্ষ হইতে সন্তানের প্রাণরস শুষিয়া লওয়ার মধ্যে যে মহৎ থরোথরো চিত্রটি রহিয়াছে, তাহাকে অনুসরণ করিতেছেন, গবেষণাকে নহে।
তবে মূল আপত্তিটি নীতিগত। যাহা পান করাইয়া সন্তানকে মাতা শুধু বড় করিয়া তুলেন না, তাহার মধ্যে যেন নিজের স্নেহ ও সেবা সঞ্চারিত করিয়া দিয়া দুই জনের অপার্থিব অচ্ছেদ্য বন্ধন রচনা করেন, সেই দুগ্ধও বাজারে বিক্রয় হইবে! মাতারা স্বেচ্ছায় কিছু নগদ উপার্জনের জন্য সে অশ্লীল কাণ্ডে রত হইবেন! পুঁজি ও বাজারের নিঃশর্ত জয় অনেকে গোমড়া হইয়া মানিয়াছেন, কিন্তু ‘মাতৃত্ব’ বিক্রয় যেন সকল সীমাই লঙ্ঘন করিতেছে। একেই গর্ভ ভাড়া দিবার ঘটনা আজ বহুপ্রচলিত। এই বার আসিল স্তন্য ভাড়া! আপত্তিটি গ্রাম্য। বিক্রেতা-মাতা তো তাঁহার নিজ সন্তানকে বঞ্চিত করিতেছেন না, উদ্বৃত্ত দুগ্ধ অন্য সন্তানের জন্য জোগান দিতেছেন মাত্র। যদি যথাযথ পরীক্ষা করিয়া লইবার ব্যবস্থা থাকে, তাহা হইলে যে মাতার দুগ্ধ আসিতেছে না, তিনি কেন অন্যের নিকট হইতে তাহা সংগ্রহ করিবেন না? উদ্বৃত্ত দুগ্ধ ফেলিয়া দিবার চেয়ে, অপচয় করিবার চেয়ে, অভাবীকে তাহা দেওয়া অধিক অপরাধ? ব্যক্তিগত জমিতে আশিটি আলু ফলিলে, তোমার নিজের যদি পঞ্চাশটি প্রয়োজন হয়, তবে উদ্বৃত্ত তিরিশটি লইয়া আলুহীন প্রতিবেশীকে দাও ইহাই কি মহত্তম উপদেশ নহে? আসলে, আপত্তিটি হইল পয়সা লওয়ায়। একই ঘটনা যদি শুধু অর্থবিনিময়টুকু বাদ দিয়া হইত, যদি দলে দলে সদ্যমাতা নিজ উদ্বৃত্ত দুগ্ধ ‘অভাবী’ মাতাদের জন্য পথপার্শ্বে রাখা বৃহৎ আধারে গালিয়া আসিতেন ও রাষ্ট্র তাহার বিতরণ-দায়িত্ব লইত, এই লোকগুলিই ‘ওরে বসুন্ধরায় বিপ্লব আসিল রে’ বলিয়া ডিগবাজি খাইত। তাহাতে ওই দুগ্ধে মেলোড্রামার চোনা পড়িয়া ব্যাপার আরও উথলিয়া উঠিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.