নদীশাসনের দাওয়াই নিয়ে দিল্লিতে ঢাকার বিশেষজ্ঞ
বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে, প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সারা বছর নদীর জলের প্রবাহকে দিব্যি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বিদেশে তো বটেই, গুজরাত-রাজস্থানের উষর অঞ্চলেও এই পদ্ধতির চর্চা করে বেশ ফল মিলেছে। আবার এই নদীশাসনই তিস্তার জলের ভাগ নিয়ে দুই বাংলার মন কষাকষি ঘুচিয়ে দিতে পারে। নয়াদিল্লি ও ঢাকা যখন তিস্তা চুক্তির জট খুলতে ব্যস্ত, তখন সেই সমস্যা সমাধানে এই নতুন পথের সন্ধান দিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা নদী বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত।
আইনুন নিশাত
ঢাকার ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিশাতের মতে, ভারত সরকারের এই বিষয়ে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। কারণ ভারতের কোনও রাজ্যই হোক বা বাংলাদেশ, কেউই চাহিদার চেয়ে বেশি জল নিতে পারবে না। তা হলে বন্যা হয়ে যাবে। কাজেই প্রযুক্তির সাহায্যে নির্দিষ্ট জায়গায় জলাধার তৈরির মাধ্যমে সঠিক ভাবে নদীর জল প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই প্রযুক্তিকেই বলা হচ্ছে নদীশাসন প্রযুক্তি।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে এসে সলমন খুরশিদ, জয়রাম রমেশের মতো ভারত সরকারের বেশ কয়েক জন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইনুন নিশাত। অরুণ জেটলির মতো বিরোধী নেতার সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। তবে তাঁর কথায়, “আমার এই সফরের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির কোনও সম্পর্ক নেই।” এক জন নদী বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি নয়াদিল্লির কাছে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মাত্র। তাঁর ব্যাখ্যায়, ভারতের চাহিদা ১৬ হাজার কিউসেক জল। বাংলাদেশের চাহিদা ৮ থেকে ১০ হাজার কিউসেক। এর থেকে বেশি জল কেউ নিতেই পারবে না। সমস্যা হল, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাস নদীতে ভাল জল থাকছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভাল বৃষ্টি হচ্ছে। সে সময়ে জলের কোনও টানাটানি নেই। কিন্তু নভেম্বর-ডিসেম্বরে বৃষ্টির জল মিলছে না। মরসুম শেষে জানুয়ারি মাসে গিয়ে নদীতে থাকছে সাকুল্যে ৬ হাজার কিউসেক জল।
আইনুন নিশাত বলছেন, এটাই হল মূল সমস্যা। তাঁর বাবা প্রেসিডেন্সি কলেজ, মা বেথুনের ছাত্রী ছিলেন। তিনি নিজে বাংলাদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়াশোনা শেষ করে স্কটল্যান্ডের স্ট্র্যাথক্লাইড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেছেন। বাংলাদেশের ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অফ নেচার অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস’-এর পরামর্শদাতা। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বও করেছেন।
নিশাতের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার জল আসছে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ হয়ে। ওই রাজ্যগুলির তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ জল কম পেলে তাদের সঙ্গেই কথা বলা উচিত। তা না করে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সঙ্গে বিবাদে যাচ্ছে কেন? একই ভাবে তিস্তার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে জল আসছে সিকিম হয়ে। সিকিম জলাধার তৈরি করে জলবিদ্যুৎ তৈরি করতে চায়। জলাধার ভরে গেলে সিকিম জল ছাড়বে। কিন্তু জল কম থাকলে কী হবে, সেটাই প্রশ্ন। এই পরিস্থিতিতে জলের সুষম বণ্টনের জন্য ‘নদী শাসন প্রযুক্তি’-ই সঠিক দাওয়াই হতে পারে বলে মনে করেন নিশাত। তাঁর বক্তব্য, ভারতেই নর্মদার জল কচ্ছের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সাবরমতীর জল যাচ্ছে মাদিতে। পুণে রিসার্চ ল্যাবরেটরি এই বিষয়ে অনেক কাজ করছে। ডাচরাও এই প্রযুক্তি নিয়েছে। কাবেরীর ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন আপত্তি তুলেছিলেন, তখনও তাঁর যুক্তি ছিল, গঙ্গা চুক্তির ফলে রাজ্যের ক্ষতি হয়েছে। উজানে উত্তরপ্রদেশ বা বিহার যখন জল জল টেনে নেয়, তার উপরে নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। ফলে বাংলাদেশকে জল দিতে গিয়ে ফরাক্কায় জল থাকে না। জলের অভাবে হলদিয়া বন্দরেও সমস্যা তৈরি হয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। মমতা তখন শুখা মরসুমে বাংলাদেশকে যে পরিমাণ জল দিতে রাজি হয়েছিলেন, তিস্তা চুক্তির খসড়া পেয়ে দেখেন, তাঁর মতামতের তোয়াক্কা না করেই দিল্লি তার চেয়ে বেশি জল দেওয়ার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বসে রয়েছে। তাতেই বাদ সাধেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ অনুযায়ী, ভারতের মতো উজানের দেশ এতটা জল নিতে পারবে না, যাতে ভাটির দেশ বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রকৃতি, বাস্তুতন্ত্র ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইনুন নিশাতের মতে, তিস্তা নদীতে জলের অভাব। সে জন্যই দু’দেশের মধ্যে চুক্তি করতে হচ্ছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলেও সমস্যা তৈরি হয়। আইন-শৃঙ্খলার সমস্যাও দেখা দেয়। অথচ নদী শাসন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তিস্তার জলের উৎস থেকেই সুষম বণ্টন করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে নদীর গতিপথও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.