ইঁদুর দৌড়ের জমানায় এই প্রজন্মের লড়াই অসময়ের বলিরেখার সঙ্গেও। তাই দৌড়ের গতি যত বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে নিজেকে ভাল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। আর এই চেষ্টার হাত ধরেই তৈরি হচ্ছে এক বিপুল সম্ভাবনাময় বাজার। উপদেষ্টা সংস্থা প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্স-এর রিপোর্ট অনুযায়ী যে বাজারের মাপ এখন ৪৯ হাজার কোটি টাকা। তাই স্বাভাবিক ভাবেই এই ‘ভাল থাকা’র (ওয়েলনেস) বাজার ধরতে বড় অঙ্কের লগ্নি করছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থা।
মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের ‘ভাল থাকার’ চাহিদা থেকে তৈরি বাজারে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্যবস্তু, পানীয়, ‘পার্সোনাল কেয়ার’ সরঞ্জাম ও পরিষেবা। বিশেষজ্ঞদের মতে যে-হারে বাজার বাড়ছে, তাতে ৩ বছরে মাপ দাঁড়াবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা।
যেমন, প্রবল ভাবে ঢুকে পড়ছে ‘স্পা কালচার’। স্পা-পার্লার খোলার দৌড়ে মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লির সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে কলকাতাও। কিছুদিন আগেও স্পা পাঁচতারা হোটেলের চৌহদ্দিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। এখন তা তৈরি হচ্ছে আলাদা করে। আসছে দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ড।
নজর কাড়া মুনাফার কারণেই নতুন নতুন লগ্নি আসছে এখানে। এতে মোট ব্যবসার ৩০ শতাংশই লাভের টাকা হিসেবে ঘরে তোলা যায়। স্থানীয় স্পা চেন অ্যালিওর-এর কর্ণধার দীপ ঘোষের দাবি, মাসে ৭ লক্ষ টাকার ব্যবসা করা শক্ত নয়। তিনি বলেন, “রিয়েল এস্টেট-এর দাম বাদ দিয়ে নির্দিষ্ট মানের কেন্দ্র তৈরির খরচ প্রায় ৩০ লক্ষ। লগ্নির টাকা বছর ঘুরতেই উঠে যায়।” লিনা, লেমনগ্রাস স্পা, আমোদা স্পা কর্তৃপক্ষেরও দাবি, শুধুই উচ্চবিত্ত নয়। মধ্যবিত্তরাও ক্রমশ স্পা-এর দিকে ঝুঁকছেন।
প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলা এই বাজারের ৬০% খাদ্যবস্তু, পানীয়, ‘পার্সোনাল কেয়ার’ দ্রব্যের দখলে। বাজারে ঢুকেছে ফিলিপ্স ও প্যানাসনিকের মতো বৈদ্যুতিন পণ্য সংস্থাও। বিক্রি বাড়ছে হেয়ার ড্রায়ার, শেভার ইত্যাদির। ফিলিপ্স-এর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান তুষার দাসের দাবি, ১০০% হারে বাড়ছে এই সব পণ্যের বাজার। চাহিদা বাড়ছে ছোট শহরেও। প্যানাসনিকের দাবি, পুরুষদের মধ্যে সৌন্দর্য সচেতনতা বৃদ্ধিও এর কারণ।
অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষা বলছে, ১৩-১৯ বছরের ছেলেমেয়েরা প্রসাধনের বাজেট বাড়াচ্ছে। ২০০০ সালে মাসে যা ১ হাজার টাকার কম ছিল, এখন তা ৪ হাজারেরও বেশি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০% হারে বাড়তে থাকা ‘ওয়েলনেস’ বাজারের সম্ভাবনার কণামাত্র ছুঁয়েছে সংস্থাগুলি। ক্রেতাদের খরচের মাত্র ৪% পেয়েছে ‘ওয়েলনেস’ পণ্য ও পরিষেবা। |