গৃহস্থের জন্য নির্দিষ্ট রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার ঘুরপথে ব্যবহার করে দীর্ঘকাল ব্যবসা চালিয়েছেন অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁ-ক্যাটারিং সংস্থার মালিক। কিন্তু এখন সরকারি ভর্তুকিতে পাওয়া সিলিন্ডারের সংখ্যা কমে ছ’টি হয়ে যাওয়ায় টান পড়েছে ওই বেআইনি বাজারে। ফলে বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের চাহিদা হয়েছে প্রায় চার গুণ।
আগে কাউকে বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের গ্রাহক করার জন্য অনেক অনুরোধ-উপরোধ করতে হত। আর এখন পরিস্থিতিটা পুরো উল্টো। অল ইন্ডিয়া এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর ফেডারেশনের অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক বিজনবিহারী বিশ্বাস জানান, প্রতি দিনই রাজ্য জুড়ে বাণিজ্যিক গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে। বাণিজ্যিক সংযোগ নিতে রোজ গড়ে ১০-১৫ জন আসছেন। আর সিলিন্ডারের চাহিদা এমনই বেড়েছে যে, তেল সংস্থাগুলিই তা জুগিয়ে উঠতে পারছে না।
কেন হঠাৎ এমন বোধোদয়? কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, রেস্তোরাঁ মালিকদের চরম বিপাকে ফেলে দিয়েছেন গৃহস্থদের একাংশই। অনেক গ্রাহকই এত দিন নিয়মিত ভাবে বাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ছোটখাটো রেস্তোরাঁ বা ফুটপাথের খাবারের স্টলে বিক্রি করে দিতেন। কোনও কোনও ডিস্ট্রিবিউটর সম্পর্কেও এমন অভিযোগ উঠেছে। চারশো টাকার সিলিন্ডার বিক্রি হয়ে যেত হাজার টাকায়। তবে মূলত গৃহস্থের সিলিন্ডার কিনেই ব্যবসা চালাতেন ছোট-মাঝারি হোটেল, রেস্তোরাঁ, রোল-চাউমিনের দোকান মালিকদের একটা বড় অংশ। ১৯ কেজির বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের এখন দাম মোটামুটি ১৬০০ টাকা। ভর্তুকির জমানায় তার চেয়ে অনেকটা কম দামেই মিলত গৃহস্থের সিলিন্ডার।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া নীতিতে আম গৃহস্থের চিন্তা বেড়েছে। তাঁরা এখন চাইছেন, ভর্তুকি মূল্যে পাওয়া ছ’টা সিলিন্ডার দিয়েই যত দিন পারা যায় চালিয়ে নিতে। স্বভাবতই রোলের দোকানে সিলিন্ডার বেচার ঝুঁকি আর নিচ্ছে না কেউ। এই অবস্থায় বাধ্য হয়েই বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের সংযোগ নিতে ডিস্ট্রিবিউটরের ঘরে লাইন দিচ্ছেন হোটেল-মালিকরা।
সেখানে গিয়েও পুরোপুরি সুরাহা হচ্ছে না। এমনিতে বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের সংযোগ এখন দেওয়া হচ্ছে ঢেলে। কিন্তু সিলিন্ডারের যা চাহিদা, তাতে কুলিয়ে ওঠা যাচ্ছে না। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার কর্তার দাবি, বড় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলি সাধারণত নিয়ম মেনে বাণিজ্যিক সিলিন্ডারই ব্যবহার করে থাকে। সমস্যায় পড়েছেন সেই সব হোটেল মালিকরা, যাঁরা এত দিন গৃহস্থের সিলিন্ডার কিনে ব্যবসা করে এসেছেন। বাণিজ্যিক সিলিন্ডার কিন্তু মাসে যত ইচ্ছে নেওয়া যায়। একটি সূত্র জানাচ্ছে, যে সব হোটেলগুলি বরাবর ওই সিলিন্ডার ব্যবহার করে থাকে, তারা পুজোর ভিড়ের কথা ভেবে আগে থেকেই প্রয়োজনমতো সিলিন্ডার তুলে রেখেছে। এ দিকে হুহু করে বাড়ছে নতুন গ্রাহকের সংখ্যা। ফলে অবৈধের পাশাপাশি বৈধ বাজারেও টান।
রাজ্যের গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, আগে যেখানে এক এক জন ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে মাসে ৫০-৬০টি বাণিজ্যিক সিলিন্ডার বিক্রি হত, এখন সেই চাহিদা বেড়ে ১৮০-২০০-তে পৌঁছেছে। তাঁদের মতে, চাহিদা যে এই ভাবে বেড়ে যেতে পারে, তা তেল সংস্থাগুলির আগাম বোঝা উচিত ছিল। তা না হওয়ায় অনেক জায়গাতেই বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
রাজ্যে মোট এলিপিজি ব্যবসার ৬০ শতাংশই দখল করে রয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল। রাষ্ট্রায়ত্ত ওই তেল সংস্থা এ রাজ্যে মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার বাণিজ্যিক সিলিন্ডার বিক্রি করেছে। সংস্থার চিফ ম্যানেজার (এলপিজি) অভিজিৎ দে জানান, অন্যান্য বছর পুজোর সময় বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের চাহিদা বাড়ে ১০-১৫ শতাংশ। এ বছর সেখানে হঠাৎই ওই চাহিদা ৫০-৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। ফলে এই বিপুল চাহিদা মেটাতে গিয়ে তাঁরা সমস্যায় পড়ছেন। |