পঞ্চায়েত ভোটে একা লড়বে ধরে নিয়ে পুজো মিটলেই পরস্পরকে তুলোধোনা করতে মাঠে নামছে কংগ্রেস ও তৃণমূল।
দুই শিবিরেরই মূল অস্ত্র এফডিআই। দেশের আর্থিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে এবং এফডিআই-র সমর্থনে কংগ্রেস প্রচার করবে। তৃণমূল তার কট্টর বিরোধিতা করবে। তবে তার সঙ্গে রান্নার গ্যাসের দাম-বৃদ্ধি ও কংগ্রেসের দুর্নীতিকে হাতিয়ার করছে তৃণমূল। পাল্টা কংগ্রেসও রাজ্যের মমতা-সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থতা নিয়ে তুলোধনা করতে চায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। সভা, মিছিলের পাশাপাশি, প্রচার-পুস্তিকা বিলিরও ব্যবস্থা করছে দু’পক্ষই।
জোট ভাঙার পরে পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিষোদগার করছেন দুই শিবিরের নেতারাই। কিন্তু পুজোর পরে শুরু হচ্ছে পরস্পরকে তুলোধনা করার পালা। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই তাঁরা রাজ্য জুড়ে প্রচার শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি জানান, আগামী ৪ নভেম্বর দিল্লির রামলীলা ময়দানে কংগ্রেসের সমাবেশ আছে। ওই সমাবেশে প্রধান বক্তা কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ওই সমাবেশে যোগ দিতে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের একাংশ যাবেন। প্রদীপবাবু শনিবার বলেন, “দিল্লিতে তো দলের সবাই যেতে পারবেন না। একটা অংশ যাবেন। কিন্তু ওই সমাবেশে দলনেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী যে বার্তা দেবেন তা বাংলার মানুষের কাছে আমরা পৌঁছে দেব। ওই সমাবেশের পরেই জেলায় জেলায় আমরা সভা করার পরিকল্পনা করেছি।”
বস্তুত, জেলায় জেলায় সভা করার মধ্যে দিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব পঞ্চায়েত ভোটে প্রস্তুতির কাজও এগিয়ে রাখতে চান। সেই কারণে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় সভা করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, এ বার পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেসকে একা লড়াই করতে হবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল শিবিরে কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের চেয়েও কংগ্রেস যে ‘জনবিরোধী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত একটি দল এবং এই দলকে ক্ষমতাচ্যূত করতে হবে’ এই লক্ষ্যকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছেন, “এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কিন্তু আমরা জানি পঞ্চায়েতে আমাদের একলাই লড়তে হবে। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরাও জানেন। ফলে সাংগঠনিক ভাবে আমরা তৈরি আছি। কিন্তু আমাদের সামনে বড় কাজ দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত প্রতিরোধ করা। সে জন্য মানুষকে সচেতন করতে পুরোদমে কাজ করতে হচ্ছে।” তিনি জানান, পুজোর চারদিন ও কালীপুজো ও ভাইফোঁটার দিনটা বাদ দিয়ে, রাজ্যে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও এফডিআই প্রতিরোধে, রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন করবে তৃণমূল।
পঞ্চায়েতের চেয়ে লোকসভা ভোট নিয়ে মাথা ঘামাতে ব্যস্ত এখন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “পঞ্চায়েত ভোটের আগেই লোকসভা ভোট হয়ে যেতে পারে!’’ এই ধারণা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। দলের কয়েকজন সাংসদও মনে করেন, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের পরে পরেই মনমোহন-সরকার পড়ে যেতে পারে। যে কোনও সময়ে লোকসভা ভোট হতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিতে জেলায় জেলায় নেতা কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। আর সেই কারণে, রাজ্যে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতে প্রচার জোরদার করা তাঁদের কাছে জরুরি বলেই মনে করেন অধিকাংশ তৃণমূল নেতা। সেই লক্ষ্যেই তাঁরা পুজোর পরে রাজ্যের জেলায় জেলায় প্রচারের ঝড় তুলতে চান।
প্রচারের প্রভাবে শেষ পর্যন্ত কে এগোয় তা এখন দেখার। |