নাশকতার নেশায় কি শিকেয় লক্ষ্য, চিন্তায় গোয়েন্দারা
মাওবাদী-আইএসআই যোগের আঁচ দেয় মাদানিই
ন্ত্রাসের উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট হলে তা মোকাবিলা করার জন্য ছক কষে এগোনো যায়। কিন্তু তথাকথিত আদর্শের ভেদ ভুলে যদি হাত মেলায় মাওবাদী ও মৌলবাদী সন্ত্রাস, তার বিপদ ঢের বেশি। সেই বিপদের আঁচ মিলেছিল বছর তিনেক আগে, দিল্লিতে ধৃত লস্কর জঙ্গি মহম্মদ উমের মাদানির স্বীকারোক্তিতে। দিল্লিতে গিয়ে তাকে জেরা করে এ রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) মাওবাদী-আইএসআই যোগসাজশের একটা সূত্র পেয়েছিল। সম্প্রতি মাওবাদী নেতা অভিষেক মুখোপাধ্যায়, ওরফে অরণ্যকে জেরা করে সেই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই যোগসাজশ শুধু নাশকতার প্রশিক্ষণ দেওয়া বা রসদ জোগানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। পরস্পরের সদস্যদের আশ্রয় দেওয়া, এমনকী রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর আঘাত হানার চক্রান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার কিছু ঘটনা নজরে এসেছে গোয়েন্দাদের। তাঁদের বক্তব্য, এই রাজ্যে, বিশেষত বীরভূম জেলার নলহাটি ও মুরারই এবং মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ ও লালগোলার মতো এলাকায় মাওবাদী এবং আইএসআই মদতপুষ্ট মৌলবাদীরা বলতে গেলে এক সঙ্গে কাজ করছে।
গত ১১ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হওয়া অভিষেককে জেরা করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং রাজ্য গোয়েন্দা শাখার (আইবি) অফিসাররা জানতে পেরেছেন, পুলিশের হাত এড়াতে পালিয়ে বেড়ানোর সময়ে ওই মাওবাদী নেতা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় মহেশতলা অঞ্চলে এমন এক জনের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন, যিনি একটি মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য। আবার মাওবাদীদের একটি গণসংগঠনের সঙ্গেও ওই ব্যক্তি সরাসরি যুক্ত বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
লস্কর জঙ্গি মাদানি
বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে মাওবাদী সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডাকা বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ৩-৪টি জেলায় স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া (সিমি)-র কয়েক জন পুরনো সদস্যের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছে আইএসআই। মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলা থেকে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্যও গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে পেয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটেই ধৃত মাওবাদী নেতা অভিষেককে জেরা করে পাওয়া তথ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। কলকাতা শহরে মাওবাদীদের কমিটির সম্পাদক ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অভিষেক টালা এলাকায় কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর হাতে ধরা পড়েন। অভিষেক যাঁর বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন, সেই ব্যক্তি সম্পর্কেও খবর রাখছেন গোয়েন্দারা। ওই ব্যক্তির সঙ্গে রাজ্যেরই এক আইপিএস অফিসারের যোগাযোগ রয়েছে বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। মহেশতলায় অভিষেকের লুকিয়ে থাকার বিষয়টি ওই পুলিশকর্তা জেনেও চুপ করে ছিলেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আইবি-র এক শীর্ষকর্তা বলেন, “হাতিয়ার, গোলা-বারুদ ও অস্ত্র প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন মাওবাদী এবং আইএসআইয়ের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করছে বেশ কিছু দিন ধরেই। তবে মাওবাদীদের গণসংগঠনের কয়েক জন সদস্যের সঙ্গে সিমি-র পুরনো লোকজনের আঁতাতের মধ্যে অন্য রকম বিপদ রয়েছে।”
মাওবাদীদের সঙ্গে সিমি বা ওই ধরনের অন্য সংগঠনগুলির আদর্শের ফারাক বিস্তর। তা সত্ত্বেও লালগড় আন্দোলন যখন তুঙ্গে, সেই সময়ে জঙ্গলমহলে বসে কিষেণজি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইসলামি সন্ত্রাসবাদকে তিনি সমর্থন করেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাও জানিয়েছে, ২০০৭-এর ডিসেম্বরে উত্তরপ্রদেশের রামপুরে সিআরপিএফের সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল লস্কর। মাওবাদীরা এর পরপরই জানিয়েছিল, এই জাতীয় ঘটনায় তাদের সমর্থন আছে।
২০০৯-এর ৪ জুন দিল্লির কুতব মিনার এলাকায় গ্রেফতার হয়েছিল মাদানি। তাকে জেরা করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ২০০৭-০৮ সালে বীরভূমের নলহাটি ও মুরারই এবং তার লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পাকুড় এলাকায় মাওবাদীদের সঙ্গে লস্করের যোগাযোগ তৈরি করেছিল মাদানি। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীকে নিশানা বানিয়ে মাওবাদীরা যাতে ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে, তার জন্য তাদের অর্থ ও বিস্ফোরকও জুগিয়েছিল সে-ই। মাদানির মামাবাড়ি ও প্রথম স্ত্রীর বাপের বাড়ি নলহাটিতে। ২০০৮ সালের মে মাসে সে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের যুবক মহম্মদ মুশতাককে নেপাল হয়ে পাকিস্তানে জেহাদি পাঠিয়েছিল প্রশিক্ষণ নিতে। ওই বছরের জুন মাসে দেশে ফেরার পর গ্রেফতার হয় মুশতাক। এ-হেন মাদানির নিয়োগ করা লোকজন এখন মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলায় মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.