হ্যালো মহাকরণ, ছেলের মাইনে হয়নি, একটু দেখবেন
ফোনটা পেয়ে পোড়খাওয়া আইএএস অফিসারের চেয়ার থেকে প্রায় পড়ে যাওয়ার জোগাড়।
“স্যার, আমি একজন স্কুলশিক্ষক বলছি। পুজো পড়ে গেল এখনও মাইনে হয়নি, একটু দেখবেন।” কিংবা “তখন থেকে দেখছি, বাড়ির সামনে কারা একটা গাড়ি রেখে গিয়েছে। সরানোর ব্যবস্থা করুন তো!”
শনিবার, ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় মহাকরণের তেতলায় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিবের ঘরে এমন ফোনের ধাক্কায় তাজ্জব আমলারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এখানেই বসেছে পুজো উপলক্ষে ২৪ ঘণ্টার বিশেষ কন্ট্রোল রুম। তিনটি নম্বর (০৩৩-২২৫৪৪১৬৯, ০৩৩-২২১৪৪০০৫, ০৩৩-২২১৪৩৬৭৪) তাই মাঝেমধ্যেই বেজে উঠছে। কিন্তু বেশির ভাগই এমন সব ফোন, যা আসতে পারে বলে স্বপ্নেও ভাবেননি সরকারি আধিকারিকরা।
মহাকরণের আমলাদের প্রত্যাশা ছিল, মহাকরণের এই বিশেষ হেল্পলাইন লোকে ঠাকুর দেখার সময়ে কোনও সমস্যা হলেই ব্যবহার করবে। যেমন পুজোর ভিড়ে পকেটমারি বা কেউ হারিয়ে যাওয়ার মতো অঘটন ঘটলে কেউ ফোন করতে পারেন। তেমন ফোন যে আসেনি, তা নয়! কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই ফোন ধরে এমন সব সমস্যার কথা শুনতে হয়েছে, উৎসবের সঙ্গে যার কার্যত সম্পর্কই নেই।
কেউ বলেছেন, অমুক রাস্তায় ভেজাল তেলের রমরমা কারবারের কথা। কারও নালিশ, তমুক স্টেশনের কাছে বেআইনি মদের ঢালাও ব্যবসা নিয়ে। এক বৃদ্ধ মিনতি করেছেন, বেসরকারি সংস্থায় তাঁর ছেলের মাইনে হয়নি। কিছু কি করা যায়?
দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী এলাকায় অটোর বাড়তি ভাড়ার আবদার নিয়েও কেউ ফোনে ঝাঁঝিয়ে উঠেছেন। এ ছাড়া, প্রত্যাশিত ভাবে দুর্গাপুর, আসানসোল, ডানকুনি টোল প্লাজা থেকে শুরু করে হাওড়া সেতুতে যানজটের ফোন তো আছেই!
এমনিতে, সারা বছরই রাজ্য পুলিশের ডিজি, লালবাজার ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। তবু উৎসবের দিনগুলো নির্বিঘ্ন রাখতে এই বিশেষ সাহায্য পরিষেবা চালু করা হয়েছে। ষষ্ঠী থেকে লক্ষ্মীপুজো (২৯ অক্টোবর) অবধি তাই রাজ্যবাসীর নাগালেই মহাকরণ। এক জন আইএএস অফিসারের তত্ত্বাবধানে ১২ ঘণ্টার দু’টি শিফ্টে মানুষের সাহায্যে আমলারা অতন্দ্র। আইজি স্তরের এক পুলিশকর্তা ও এক জন যুগ্মসচিবও রয়েছেন। যাতায়াতের সমস্যার খোঁজ রাখতে পরিবহণ দফতরও ০৩৩-২২১৪৫৫০১ নম্বরে একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, তাই সাহায্যপ্রার্থীদের কাউকেই পারতপক্ষে ফেরাতে চায় না বিশেষ কন্ট্রোল রুম। ট্রেনে সফররত পুত্রের খবর না-পেয়ে এ দিন সকালেই উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করেছিলেন তাঁর মা। ডিউটিতে থাকা আমলারা তাঁর সাহায্যে কোমর কষে নেমে পড়েন। ওই মহিলা কন্ট্রোল রুমে জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলে আমদাবাদ স্টেশন থেকে উঠে হাওড়ায় ফিরছেন। শেষবার কথা হয়েছে, আগের রাতে। তার পরে কিছুতেই মোবাইলে ধরা যাচ্ছে না।
মহাকরণের কন্ট্রোল রুম কিন্তু ওই স্পেশাল ট্রেন কোথায় পৌঁছেছে বার করে ফেলে কানপুরের জিআরপি-র সঙ্গে তড়িঘড়ি যোগাযোগ করে। যাত্রীদের তালিকা মিলিয়ে নিখোঁজ যুবককে চিহ্নিত করে রেল পুলিশ তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, তাঁর মোবাইলের ‘চার্জ’ ফুরিয়ে গিয়েছিল। তাই মাকে ফোন করে উঠতে পারেননি তিনি। যুবকের মা কন্ট্রোল রুমের এই ধরনের তৎপরতায় বার বার ধন্যবাদ দিয়েছেন।
ষষ্ঠীতে দিনের শিফ্টে ডিউটি করছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি গৌরব দত্ত। তিনি বলেন, “আমরা কাউকেই নিরাশ করছি না। সমস্যা, নাম-ঠিকানা টুকে রেখে চেষ্টা করছি কত দূর কী করা যায়!”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.