ফুরফুরে আমেজে ষষ্ঠীতেই অষ্টমীর ঢল
বিকেল পাঁচটাতেই শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনে টিকিটের লাইনটা প্রায় উঠে এসেছে রাস্তায়।
সন্ধ্যা ছ’টায় জেমস লং সরণিতে ঠাকুর দেখার ভিড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ি।
রাত আটটায় সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দু’ধারে শুধুই কালো মাথার সারি।
ষষ্ঠীর রাতেই অষ্টমীর জনজোয়ার মহানগরে।
গত কয়েক বছর ধরেই পুজোর ভিড় শুরু হচ্ছিল চতুর্থীর রাত থেকে। তৈরি ছিল না পুলিশ-প্রশাসন। অনেক পুজোকর্তাও মণ্ডপে শেষ টান দিয়ে উঠতে পারেননি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এ বার চতুর্থীর রাতে মোতায়েন পুলিশ। কিন্তু বারোয়ারি-সর্বজনীনগুলি ভেবেছে আরও এগিয়ে। প্রতিপদ-দ্বিতীয়া থেকেই শুরু হয়েছে উদ্বোধন। তাই তৃতীয়া-চতুর্থী থেকেই ভিড় জাঁকিয়ে বসেছে শহরের রাস্তায়।
তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে ষষ্ঠী। দু’দিন আগে থেকে পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়েও তাই এ দিনের ভিড় সামলাতে নাজেহাল হয়েছে পুলিশ।
কিন্তু কেন? পুজোকর্তারা বলছেন, মূল ইন্ধন জুগিয়েছে ঝকঝকে আবহাওয়া। মহালয়ার দিনই বর্ষা বিদায় নিয়েছে রাজ্য থেকে। তার পর থেকে দিনে ফিরোজা নীল আকাশ আর রাতে শিরশিরে হাওয়া। ফলে রাতভর ঘুরতে অসুবিধা হচ্ছে না দর্শকদের। পুজোকর্তারাও বলছেন, এ বার পুজো পিছিয়ে যাওয়ায় মানুষের তর সইছিল না।
পুজোর পূর্বাভাস

• আকাশ পরিষ্কার, বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় নেই
• কম থাকবে আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা

কেমন ছিল ষষ্ঠী

উষ্ণতা: ৩৩.১-২২.৩০ সেলসিয়াস
আপেক্ষিক আর্দ্রতা: ৮৯%-৪২%
তথ্যসূত্র: আবহাওয়া দফতর
কেমন ছিল এ দিনের ভিড়?
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল থেকেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, বিধান সরণি, মহাত্মা গাঁধী রোড, কলেজ স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস কানেক্টর, চেতলা সেন্ট্রাল রোড, ডায়মন্ড হারবার রোডে যানচলাচল প্রায় থমকে যায়। বিকেল চারটে নাগাদ এক বন্ধুকে চেতলা সেন্ট্রাল রোডে ট্যাক্সিতে তুলে দিতে গিয়েছিলেন অনিন্দিতা বসু। গাড়ির ভিড়ে রাস্তা পেরোনোর জন্য ঠায় কুড়ি মিনিট দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে। সন্ধ্যা সাতটায় হাওড়া থেকে রওনা হয়েছিলেন শেখর শিকদার। বেহালার অজন্তা সিনেমার কাছে তাঁর বাড়ি। ঢুকলেন রাত সাড়ে দশটায়।
উত্তর ও মধ্য কলকাতাতেও একই ছবি। বিকেল পাঁচটা নাগাদ বরাহনগর থেকে ধর্মতলার দিকে রওনা দিয়েছিলেন কমল গুপ্ত। পৌঁছলেন রাত আটটায়। অরবিন্দ সেতুতে গাড়ির লাইন। করবাগান, তেলেঙ্গাবাগান বা লালাবাগানে পুজো দেখে বেরোনো দর্শকদের রাস্তা পার করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ।
একই ছবি দেখা গিয়েছে দক্ষিণের একডালিয়ায়। ভর দুপুরেও দড়ি ফেলে ভিড় সামলাতে হয়েছে। এই ভিড় ক্রমেই বেড়েছে। রাত দশটায় বোসপুকুরে দেখা গেল, একের পর এক পুজো দেখে কাতারে কাতারে মানুষ এবং সঙ্গে শামুকের গতিতে গাড়ি এগিয়ে চলেছে কসবা কানেক্টরের দিকে। ই এম বাইপাসের কাছে গাড়ির লাইন দেখে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়। কাঁকুড়গাছি থেকে দল বেঁধে মানুষ চলেছে বেলেঘাটার দিকে। উল্টো দিকেও শুধুই জনস্রোত। বস্তুত, সন্ধ্যা থেকেই জনস্রোত দেখেছে শহরের দক্ষিণ অংশ। রাত যত বেড়েছে, ততই যানজট বেড়েছে নামী-অনামী পুজোগুলির সামনে। রাত আড়াইটেতেও গোলপার্ক ব্রিজের উপর গাড়ির নড়ন-চড়ন বন্ধ। চেতলায় এক মন্ত্রীর পুজোর সামনে কয়েক হাজার লোকের লাইন। ভিড়ের দাপটে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে নিউ আলিপুর বা বেহালার দিকে যাওয়ার জো নেই। ষষ্ঠীতে এমন ব্যস্ততা দেখেনি লালবাজারও। দম ফেলার ফুরসত পাননি কন্ট্রোলরুমের কর্মীরা।
ভিড়ের দাপটে সুযোগ বুঝে ভাড়া হেঁকেছেন অটো ও ট্যাক্সিচালকেরা। যানজটের ছুতোয় কোথাও দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে। ভিআইপি রোডে অটোচালকেরাও এক লহমায় পাঁচ থেকে দশ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
যানজট হয়েছে ভিআইপি রোডে। মানুষের ভিড়ে থমকে গিয়েছে সল্টলেকও। যে একে ব্লকে সাধারণত ভিড় থাকে না, সেখানেও কয়েক হাজার মানুষ। আর এফডি, এজি ব্লকের মতো জনপ্রিয় এলাকায় তো এগোনোর উপায় নেই। ভিড় সামলাতে পথে নামেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। পুলিশ সূত্রের খবর, ষষ্ঠীর রাতে এমন ভিড় আন্দাজ করতে পারেননি বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা। বেগতিক দেখে অতিরিক্ত বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.