প্রয়াগ ইউনাইটেড ম্যাচে হারের পরে ময়দান জুড়ে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল, পরবর্তী মোহনবাগান কোচ কে? দেবীপক্ষ শুরু হতে তার উত্তর মিললেও, সামনের চার ম্যাচে ওডাফাদের কোচ কে হবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা কিন্তু কাটল না। নতুন কোচ হিসেবে যাঁর আসার কথা সেই করিম বেঞ্চারিফা বৃহস্পতিবার দুপুরে সালগাওকর থেকে পদত্যাগ করেছেন। তবে সবুজ-মেরুন জার্সি পরে ১৭ নভেম্বরের আগে মাঠে নামা হচ্ছে না মরোক্কান কোচের। পুরনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি-জটের জন্য আগামী এক মাস পুরনো ক্লাবেই কোচিং করতে হবে তাঁকে। অবস্থাটা এমন যে, করিমের মন পড়ে থাকবে কলকাতায়, শরীর গোয়ায়। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে কোচ নিয়ে এ রকম চমকপ্রদ ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। সবথেকে বড় কথা, সন্তোষ কাশ্যপের বিদায়ের পর আরও একটা নতুন নাটক সম্ভবত শুরু হতে চলেছে।
কিন্তু করিম দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাকি সময় মোহনবাগানের কোচিং করাবেন কে? আজ শুক্রবার সকালে প্রেসিডেন্ট টুটু বসুর বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকেছিলেন কর্তারা। রাতে অবশ্য তা নিয়েও নাটক। বদলে ফেলা হয় বৈঠকের স্থান। নিয়ে যাওয়া হয় ক্লাব তাঁবুতে। সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার আগে কর্তারা কিছুই বলতে চাইছেন না। এক মোহন-কর্তা রাতে বললেন, “যা জানার কালই জানতে পারবেন। দেখুন না কী চমক থাকে।” তা হলে কি কোনও স্টপগ্যাপ কোচ নিয়োগ হবে বাগানে। শোনা যাচ্ছে, ব্রাজিলীয় রবসনের নাম। নাকি সেই গোলকিপার কোচ হেমন্ত ডোরা আর ফিজিও রোনাল্ডই থাকবেন দায়িত্বে। আর তা যদি হয় তা হলে সেটাও হবে অভিনব। কোচ ছাড়াই সে ক্ষেত্রে আই লিগের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে খেলতে হবে ওডাফা-টোলগেদের। |
এ দিন দুপুরে করিমের প্রত্যাশিত পদত্যাগের পরই শুরু হয় নাটক। মাত্র দু’রাউন্ডের পর করিম ক্লাব ছাড়তে চাওয়ায় ক্ষুব্ধ সালগাওকর সচিব রাজ গোমস দিল্লি থেকে ফোনে বলে দেন, “আগামী ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত করিমকে সালগাওকরে থাকতেই হবে। ওর সঙ্গে আমাদের যা চুক্তি, তাতে ক্লাব ছাড়তে হলে ওকে এক মাস আগে নোটিস দিতে হবে। সেটাই নিয়ম। এক মাস পর ও কোথায় যাবে বলেনি। সে যেখানে ইচ্ছে যাক। সামনের এক মাস ওকে আমরা ছাড়ছি না। করিম অবশ্য নিয়ম মেনে এক মাস থাকবে বলে পদত্যাগপত্রে জানিয়েছে।” এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি দেখে অবাক পুরো ময়দান। তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে মোহনবাগান তাঁবুতে। তাদের প্রশ্ন, এটা কেমন হল? প্রশ্ন উঠেছে, আই লিগের দু’টো ম্যাচে ইতিমধ্যেই হেরে বসে আছে মোহনবাগান। এর পর যদি কোচবিহীন বাকি চারটে ম্যাচে কোনও অঘটন ঘটে তা হলে তো আই লিগ থেকেই কার্যত ছিটকে যাবে টিম! এটা ঘটনা, এই টিমটার জন্য করিমই যোগ্য লোক। তা অবশ্য মানছেন সবাই। এক কর্তা বলেও ফেললেন, “করিম মোহনবাগানে সাবলীল। আগে কোচিং করিয়েছেন। ট্রফিও জিতেছেন। ও-ই যোগ্য লোক আমাদের ক্লাবে।”
করিম এ দিন পদতাগপত্র জমা দিয়ে অবশ্য গোয়া লিগের ম্যাচ খেলতে চলে যান। সালগাওকর ম্যাচ জেতে ৬-১ গোলে। ড্রেসিংরুমে করিম ফুটবলারদের নাকি বলেন, “আমি আর এক মাস তোমাদের কোচিং করাব। আমার বিশ্বাস, আমি যে সাফল্য সালগাওকরকে দিয়েছি, তোমরা সেটা ধরে রাখবে।” শোনা যাচ্ছে, বেশি রাতে সালগাওকরের দেওয়া বাড়ি ছেড়ে হোটেলে উঠে গিয়েছেন করিম। তবে সালগাওকর কিন্তু করিমকে সহজেই ছাড়তে চাইছে না। ঠিক যেমন ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার রাস্তায় করিমের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গোয়ার অফিস ক্লাবের কর্তারা, তেমনই বাগানের রাস্তায় কাঁটা হয়ে বিঁধতে পারেন তাঁরা। করিম অবশ্য অনড়। এমনকী এ বার সালগাওকর তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করলে চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারেন তিনি। সে রকম ইঙ্গিত মিলেছে রাতেই। সেক্ষেত্রে কি এক মাসের নোটিসের বদলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে আগেই করিমকে মোহনবাগান নিজেদের জালে তুলে ফেলতে পারবে? সালগাওকর সচিব রাজ গোমস সেই জল্পনাতেও জল ঢেলে দিলেন। তাঁর স্পষ্ট জবাব, “করিমের সঙ্গে ক্ষতিপূরণের রাস্তায় আমরা হাঁটব না।” প্রশ্ন হল, আজ সাংবাদিক সম্মেলনে করিমের নাম কি সরকারি ভাবে ঘোষণা করতে পারবেন মোহন-কর্তারা। যদি করেন, তা হলে টোলগের মতো আবার কোনও ঝামেলা তৈরি হবে না তো? কর্তারা মুখে কুলুপ আঁটায় এর উত্তর রাতে পাওয়া যায়নি।
এ দিকে, এক মাস করিমকে না পাওয়া গেলে বাগানকে অন্তত চার ম্যাচ কোচ-বিহীন অবস্থায় নামতেই হবে। দুর্গাপুজোর পরেই ২৬ অক্টোবর আই লিগের ম্যাচ খেলতে বেরিয়ে যাচ্ছেন টোলগেরা। দু’দিন পরে তাদের প্রতিপক্ষ এয়ার ইন্ডিয়া। যাদের কাছে হেরে ফেড কাপ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল সন্তোষ কাশ্যপের দলকে। তার পরে একে একে স্পোর্টিং ক্লুব (৪ নভেম্বর), ওএনজিসি (৯ নভেম্বর) এবং মজার ব্যাপার হল ১৭ নভেম্বর যুবভারতীতে আই লিগে মোহনবাগান-সালগাওকর ম্যাচ। এখন দেখার, সে দিন কাদের বেঞ্চে নোটবুক হাতে দেখা যায় করিমকে! |