সম্পাদকীয় ২...
আত্মখণ্ডন কেন
বাঘ রক্ষার্থে সংরক্ষিত অরণ্যের ‘কোর এরিয়া’য় পর্যটকদের প্রবেশের উপর সুপ্রিম কোর্ট যে নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিল, কোর্ট নিজেই তাহা সংশোধন করিয়া লইয়াছে। জুলাই মাসের শেষ দিকে সর্বোচ্চ আদালত যখন ব্যাঘ্র প্রকল্পে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার রায় দেয়, তাহার পর হইতে এ যাবৎ পরিস্থিতির কোনও গুণগত পরিবর্তন হয় নাই। বাঘেদের সংরক্ষণ ও বিকাশ-বৃদ্ধি যদি অভিপ্রেত হয় এবং পর্যটকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণই যদি তাহার প্রকৃষ্ট পন্থা হয়, তবে জুলাই মাসের রায়টি ঠিক ছিল না কি? আবার সেই রায় ঠিক হইলে তাহার সর্বশেষ সংশোধনটি ঠিক কি না, তাহা লইয়াও সংশয় তৈরি হয়। দেশের শীর্ষ আদালতের একের পর এক রায় লইয়া অনুরূপ বিভ্রান্তি কিন্তু এড়ানো যাইত।
প্রায় একই ধরনের মত-পরিবর্তনের দৃষ্টান্ত ‘টু-জি কেলেঙ্কারি’ সংক্রান্ত আদালতের রায়েও লক্ষ করা গিয়াছে। টু-জি স্পেকট্রামের লাইসেন্স বিতরণের আগে তাহা লইয়া নিলাম ডাকা উচিত ছিল, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের কেলেঙ্কারির আশঙ্কা থাকিত না, এই রায় ছিল শীর্ষ আদালতেরই। আবার সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট বলিয়াছে, নিলামই যে সরকারের তরফে সম্পদ সংগ্রহের একমাত্র পদ্ধতি, ইহা মনে করা ভুল, সরকার ইচ্ছা করিলে অন্যান্য পদ্ধতিও অবলম্বন করিতে পারে। এ ক্ষেত্রেও বিভ্রান্তির অবকাশ রহিয়া যাইতেছে। বিচারব্যবস্থার স্তম্ভস্বরূপ যে সুপ্রিম কোর্ট, তাহার রায়ে এত আত্মখণ্ডন থাকা সঙ্গত কি? উভয় ক্ষেত্রেই দুইটি রায়ই একই সঙ্গে অভ্রান্ত হইতে পারে না। একটি যদি ঠিক হয়, অন্যটি তবে তত ঠিক নয়। প্রশ্ন হইল, সুপ্রিম কোর্ট তো কোনও সাধারণ সংস্থা নয়, ইহা দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়, যাহা সব দিক বিবেচনা করিয়া সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত জানাইবে, ইহাই প্রত্যাশিত, অভিপ্রেত। বারংবার রায় সংশোধিত হইলে সর্বোচ্চ বিচারালয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় কি না, তাহা মাননীয় বিচারপতিদেরই ভাবিতে হইবে। পরিস্থিতি পরিবর্তনে, সমাজের বিবর্তনের সহিত সামঞ্জস্য রাখিতে অনেক সময় আগের সিদ্ধান্ত বা বিচার হইতে সরিয়া আসিতে হয়। কিন্তু টু-জি স্পেকট্রাম-এর লাইসেন্স বিতরণ কিংবা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ, কোনও ক্ষেত্রেই, দৃশ্যত, পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন ঘটে নাই।
বিচারবিভাগ যদি অনেক বিষয়ে আপনাকে জড়াইতে না দেয়, তাহা হইলে এই ধরনের আত্মখণ্ডনের সম্ভাবনাও হয়তো কমিবে। টু-জি স্পেকট্রাম কী পদ্ধতিতে বণ্টিত হইবে, তাহা একটি বিশুদ্ধ প্রশাসনিক বিষয়, যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী কেবল সরকার। একই ভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ করা উচিত কি না, সেটাও কি বন ও পরিবেশ মন্ত্রকেরই এক্তিয়ার হওয়া উচিত নয়? বহু বার বহু উপলক্ষে এ দেশের আদালতের সম্পর্কে অতিসক্রিয়তার অভিযোগ উঠিয়াছে। সেই অভিযোগ কত দূর সত্য, তাহা নিশ্চয়ই তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু বিচারবিভাগের এই বিষয়ে আত্মবিচারের প্রয়োজন আছে, সে কথা বোধ হয় অস্বীকার করিবার উপায় নাই। সাম্প্রতিক রায়গুলি তাহাই বুঝাইয়া দিতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.