|
|
|
|
অবশেষে হুইলচেয়ারের আশ্বাস |
এক বছর বেতন মেলেনি প্রতিবন্ধী বিমানবন্দর কর্মীর |
সুনন্দ ঘোষ • কলকাতা |
স্বপন দে। বয়স ৪৩। পেশায় গাড়ির মেকানিক। আগরতলা বিমানবন্দরের কার-পুলে কর্মরত।
২০০৫ সালে হঠাৎই ‘স্ট্রোক’ হয় স্বপনবাবুর। মজ্জা শুকিয়ে গিয়ে কোমর থেকে নিম্নাঙ্গ অকেজো হতে শুরু করে তাঁর। এখন তিনি ৯৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী। অথচ, গত ১২ মাস ধরে তাঁর বেতন বন্ধ।
স্বপনবাবুর একার পক্ষে বিমানবন্দরের ভিতরে পৌঁছোনো সম্ভব নয়। প্রথম দিকে, দুই ভাই অটোতে চাপিয়ে বিমানবন্দরে নিয়ে আসতেন। সেখান থেকে ধরাধরি করে তুলে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিতেন। আবার ওই ভাবেই বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতেন।
কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এক ভাইয়ের বিমানবন্দরের ভিতরে ঢোকা বারণ হয়ে যায়। আর এক ভাই, যিনি বিমানবন্দরেই কর্মরত, এক শ্রেণির কর্মীদের হুমকির মুখে তিনি দাদাকে সাহায্য করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে স্বপনবাবু আর বিমানবন্দরের ভিতরে নিজের চেয়ার পর্যন্ত পৌঁছতে পারছেন না। |
বাড়িতে স্বপন দে। উমাশঙ্কর রায়চৌধুরীর তোলা ছবি। |
চার বছর ধরে শারীরিক সমস্যা নিয়ে লড়ছেন স্বপন দে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কর্তৃপক্ষকে জানান যে তিনি যে ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। অভিযোগ, তার পরেও স্বপনবাবুর জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করেননি কর্তৃপক্ষ। মাঝখানের দীর্ঘ একটা সময় তিনি বাড়িতে বসে ছিলেন। সম্প্রতি বিমানবন্দরের অধিকর্তা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, স্বপনবাবুর জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কিন্তু স্বপনবাবুর প্রশ্ন, “সেই চেয়ার ঠেলে নিয়ে কে যাবে। হুইল চেয়ার ঠেলে নিয়ে যাওয়ার শক্তি নেই আমার হাতে।” উত্তর-পূর্ব ভারতের বিমানবন্দরগুলির দায়িত্বে থাকা রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর কে হেমলতা জানিয়েছেন, প্রতিবন্ধী কমিশন গিয়েছিলেন স্বপনবাবু। কমিশনের নির্দেশমতোই হুইল চেয়ার দেওয়া হচ্ছে তাঁকে। হেমলতার কথায়, “শুধু হুইল চেয়ারই নয়, তিনি যাতে অফিসে কাজ করতে পারেন, তার জন্য তাঁকে এক জন সহযোগী দেওয়ার কথাও হচ্ছে। আমরা শীঘ্রই তাঁকে সে কথা জানিয়ে দেব।”
দিল্লির কেন্দ্রীয় প্রতিবন্ধী কমিশন জানাচ্ছে, ১৯৯৫ সালের ‘পার্সনস উইথ ডিসেবিলিটি’ আইন অনুযায়ী, কোনও প্রতিবন্ধীকে কোনও সংস্থা বরখাস্ত করতে পারবে না। যে কাজ করতে তিনি সক্ষম হবেন তাঁকে সেই কাজে নিয়োগ করে সময় মতো পদোন্নতিও দিতে হবে। তাঁর উপযুক্ত কোনও কাজ না পাওয়া গেলেও তাঁকে বরখাস্ত করা যাবে না।
তা হলে কেন স্বপনবাবুর সঙ্গে এই আচরণ? বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গাড়ি থেকে নিয়মিত তেল চুরির অভিযোগ ছিল আগরতলায়। তা নিয়ে সরব ছিলেন স্বপনবাবু। সেই কারণেই এই ‘অসহযোগিতা’। আরও একটি কারণের কথা বলেছেন স্বপনবাবু। তাঁর কথায়, “ইউনিয়নের এক নেতা চেয়েছিলেন চিকিৎসার সময়ে আমি যেন তাঁর থেকে সুদে টাকা ধার নিই। আমি রাজি হইনি।” ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী শংসাপত্র দেওয়ার পরেও কার-পুল থেকে সরিয়ে স্বপনবাবুকে একবার গুদাম ঘরে, একবার যাত্রীদের লাউঞ্জের সামনে ডিউটি দেওয়া শুরু হয়। নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী সেখানেও ডিউটি করেছেন স্বপনবাবু।
কিন্তু ২০১০ সালের নভেম্বরে গুদামে ডিউটি করার সময়ে কাঠের চেয়ার থেকে পড়ে তাঁর ডান পায়ের চারটি আঙুল ভেঙে যায়। চার মাসের ছুটিতে যেতে হয় তাঁকে। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে ফিরে এসে দেখেন ওই চার মাসের বেতন কেটে নেওয়া হয়েছে। তখনই তিনি দিল্লিতে প্রতিবন্ধী কমিশনকে বিষয়টি জানান। এর মাঝেই ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি আর বিমানবন্দরে যেতেই পারছেন না। ইতিমধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষার পরে তাঁকে ৯৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী বলে শংসাপত্র দিয়েছে প্রতিবন্ধী কমিশন। তার প্রতিলিপিও জমা দেওয়া হয়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে।
এ দিকে, অভিযুক্ত ইউনিয়ন নেতা দুলাল রায়ের বক্তব্য, “আমাদের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। রাস্তায় লিফলেট বিলি করা হয়েছে। আমরা তো ওকে
সাহায্যই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, এর পরে কী করে করব?” তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি উঠেছে সেগুলি ‘অসত্য’ বলেও জানিয়েছেন দুলালবাবু। |
|
|
|
|
|