|
|
|
|
৮১ ভাঁড়, এক গ্রাম, এক স্বপ্ন |
দয়াল সেনগুপ্ত • খয়রাশোল |
যেন বাধ্য প্রজা! নির্দিষ্ট সময়ে এক একটি পরিবার আসছেন এবং খাতায় নাম-তারিখ লিখে ‘খাজনা’ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। মনে হতে পারে শাল নদীর ধার ঘেঁষা খয়রাশোলের কমলপুর গ্রামে আজও জমিদারি প্রথা রয়েছে। তবে এখানে কোনও জোর-জুলুম নেই। পরিবারগুলি নিজে থেকেই ‘খাজনা’ জমা দিচ্ছেন লক্ষ্মীভাঁড়ে। কেউ প্রতিবাদও করছেন না।
প্রতিবাদ করবেনই বা কেন? এই প্রথম গ্রামে দুর্গাপুজো হচ্ছে। তার জন্য সকলে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জমিয়েছেন। সেই সঞ্চিত টাকা পুজো কমিটির হাতে তুলে দিচ্ছেন পরিবারগুলি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষি প্রধান হওয়ায় এখানে অন্নপূর্ণা পুজো বেশ ধুমধাম করেই হয়। রয়েছে অন্নপূর্ণা মন্দিরও। কিন্তু গ্রামে কোনও দুর্গাপুজো হয় না। তাই গত বছর কালীপুজোর পরে বৈঠক করে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন মানুষজন। তবে আর পাঁচটা পুজোর মতো এই গ্রামে প্রথম বার দুর্গা পুজোর আয়োজনের মধ্যে তেমন কোনও বিশেষত্ব নেই। কিন্তু ওই গ্রামের বাসিন্দারা পুজোর জন্য যে ভাবে টাকা জমিয়েছেন সেটা অভিনব। বাসিন্দা অজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ পাল, ব্রজগোপাল ডোম বা গৃহবধূ তাপসী দাস, মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়রা জানান, মোট ৮১টি পরিবার বসবাস করলেও গ্রামে এত দিন দুর্গাপুজো হত না। যেখানে অন্য আর পাঁচটা গ্রামের বাচ্চারা এই কটা দিন আনন্দে মেতে উঠছে সেখানে আামাদের গ্রামের ছেলে মেয়েরা বঞ্চিত। তাই পুজোর চার দিন ভীষণ খারাপ লাগত বড়দের। মূলত এই ভাবনা থেকেই গত বছর কালীপুজোর পর বৈঠক করে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন গ্রামের মানুষজন। |
|
টাকা জমানোর ভাঁড় হাতে কমলপুর গ্রামের এক বধূ। নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু দুর্গাপুজো বলে কথা। এত টাকা উঠবে কী ভাবে? সেই সমস্যারও সমাধান সূত্র বের হয়ে যায়। তাঁদের কথায়, “গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের হতে একটি করে লক্ষ্মী ভাঁড় দেওয়া হবে। প্রত্যেকটি পরিবার দিনে এক টাকা করে তাতে জমাবেন। বছরের শেষে ওই জমানো টাকায় হবে দুর্গাপুজো। সেই মতো খয়রাশোলের লোকপুর থেকে অর্ডার দিয়ে ভাঁড়গুলি আনিয়ে তাতে নম্বর বসিয়ে গ্রামের প্রত্যেক পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ বার সেই ভাঁড়ে ৩০০ টাকা করে জমেছে।” ভাঁড়ে নম্বর লেখা হল কেন? পুজো কমিটির বক্তব্য, হিসেবের যাতে গোলমাল না হয় বা কোন পরিবার কবে জমা দিচ্ছেন তা বের করতে সুবিধা হয়। তাই নম্বর লিখে দেওয়া।
প্রথমবার হলেও অন্নপূর্ণা মন্দিরে পুজো হচ্ছে না। পুজো হবে অস্থায়ী মণ্ডপেই। এক প্রবীন নাগরিক হারাধন পাল বললেন, “যে উৎসাহে সকলে পুজোয় মেতেছেন তাতে নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে পাকা দুর্গামন্দির তৈরি হয়ে যাবে।” মন্দির কবে হবে বা গ্রামের কোথায় পুজো হবে, সে সবের দিকে অবশ্য নজর নেই কচিকাঁচাদের। গ্রামের অন্নপূর্ণা মন্দির যেখানে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে, নাওয়া-খাওয়া ভুলে সব সময় সেখানে হাজির কচিকাঁচারা। ঠাকুর দেখার সঙ্গে চলছে নানান আলোচনা। সিংহের কেশর লাগানো হবে কি না, অসুরের গায়ের রং কী হবে বা দুর্গার কোন হাতে কী অস্ত্র থাকবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই বছর পাঁচেকের দিব্যজ্যোতি দাস, পঞ্চম শ্রেণির অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা নবম শ্রেণির পরাণ বাদ্যকরদের পাশাপাশি পুজো কাটাতে তৈরি গোটা গ্রাম। |
|
|
|
|
|