|
বৃষ্টির শিকার আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা |
এ ভাবে ছিটকে যাওয়ার মতো
টিম কিন্তু কেকেআর নয়
দীপ দাশগুপ্ত |
|
ম্যাচটা যখন বৃষ্টিতে বন্ধ হল, দেখলাম কয়েকজন নাইট সমর্থক গ্যালারিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে। চোখে-মুখে যন্ত্রণা। বিশ্বাসই করতে পারছে না, একটা ম্যাচ বাকি থাকতেই এ ভাবে ছিটকে যেতে পারে নিজেদের টিম!
বিশ্বাস তো আমারও হচ্ছিল না। এক ম্যাচ হাতে রেখে, এক দিনের অঝোর বৃষ্টিতে কেকেআরের বিদায় ঘোষণা হয়ে যাবে, এতটা খারাপ টিম কিন্তু নাইট রাইডার্স নয়। বুঝতে পারছি বুধবারের রাতটা ওদের কাছে কতটা অভিশপ্ত মনে হতে পারে। বিশেষ করে খেলা যখন বন্ধ হয়, তখন পার্থ স্কর্চার্স বেশ একটু চাপেই ছিল। ১৪ ওভারে ওদের স্কোর ছিল ৯১-২। পার্থ স্কর্চার্স ম্যাচটা গৌতম গম্ভীরদের কাছে ছিল ফিরে আসার মঞ্চ, আর সেটাই কি না ধুয়ে গেল বৃষ্টিতে! শুধু তাই নয়, টুর্নামেন্ট থেকেও একই সঙ্গে ছুটি করে দিল কেকেআরের!
|
কপালকে দোষ দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় এই অবস্থায় থাকে না। কিন্তু পাশাপাশি আমার আরও একটা জিনিস মনে হচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বারবার ধাক্কা খাওয়ার পরেও নাইটরা হাজার চেষ্টা করেছে ভুলত্রুটি শুধরে কামব্যাক করার। কিন্তু কোনও দিন সেরা বোলারের মার খেয়ে যাওয়া, কোনও দিন দলের এক নম্বর অলরাউন্ডারের চোট, কোনও দিন বৃষ্টি-সব একে একে হাজির হয়ে গম্ভীরদের যাবতীয় চেষ্টায় চোনা ফেলে দিল।
আইপিএলে সহারা পুণে ওয়ারিয়র্স টিমের সঙ্গে ছিলাম বলে জানি, টি-টোয়েন্টি ম্যাচে একবার হারতে শুরু করলে, শেষ পর্যন্ত ব্যাপারটা কী রকম মারাত্মক দাঁড়াতে পারে। মনে আছে, আইপিএল ফাইভে আমরা প্রথম পাঁচটার মধ্যে তিনটে ম্যাচই জিতেছিলাম। ছ’নম্বর ম্যাচ ডেকান চার্জার্সের সঙ্গে। সবাই ধরে রাখল, অনায়াসে জিতব। কারণ ডেকানকে তখন সবচেয়ে দুর্বল দেখাচ্ছে। কিন্তু ওই ম্যাচটাই হারলাম আমরা, আর সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু পাল্টে গেল। ড্রেসিংরুমে সবাই ভাবতে শুরু করল, আমরা ডেকানকেই হারাতে পারলাম না, চেন্নাই-মুম্বইকে আর কী ভাবে হারাব? অর্থাৎ, নেতিবাচক একটা চিন্তা ড্রেসিংরুমে ছড়িয়ে পড়েছিল। আসলে টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটটাই বড় নির্দয়। একবার ভুল করতে শুরু করলে, সেটা শুধরোনোর সময় আর পাওয়া যায় না। গায়ে-গায়ে ম্যাচ। ভুলত্রুটি বুঝে উঠতে উঠতেই টুর্নামেন্ট শেষ। |
কেকেআরের ভাগ্যেও একই জিনিস ঘটল। নাইট রাইডার্স ভুল করেছে ঠিক। কিন্তু এটাও ঠিক, টিমের রোগগুলো সারিয়ে ওঠার সময়ও পায়নি। এক-এক দিনের ব্যবধানে তিনটে ম্যাচ খেলতে হল। গৌতম গম্ভীর চেষ্টা কম করেনি। কিন্তু দেখুন, প্রথম ম্যাচে কালিস আঙুলে চোট পেয়ে গেল। অকল্যান্ডের বিরুদ্ধে কেকেআর দুর্দান্ত শুরু করেও ‘মোমেন্টাম’ ধরে রাখতে পারল না। ১৬০ হওয়ার কথা ছিল। হল ১৪০। যাকে আজ পর্যন্ত কেউ সামলাতে পারেনি, সেই সুনীল নারিনকে সে দিন আজহার মেহমুদ মেরে দিল।
নাইটরা আরও মার খেয়ে গেল প্রস্তুতিতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরপরই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নেমে পড়তে হয়েছে। গম্ভীর তো জানতেই পারল না, দলের কোন ক্রিকেটার কেমন ফর্মে আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার পিচে কাকে খেলানো উচিত। এখানেই তো মেরে দিচ্ছে অকল্যান্ড, হাইভেল্ড লায়ন্সের মতো টিমগুলো। ওরা সারা বছর একসঙ্গে খেলছে। হঠাৎ-হঠাৎ করে টুর্নামেন্টে নেমে পড়তে হচ্ছে না। নইলে এটা তো সবাই স্বীকার করবে যে, অকল্যান্ড আর কেকেআর এক টিম নয়। দশ বারের মধ্যে ন’বারই ওদের হারাবে গম্ভীররা।
|
কী ভাবে বিদায় কেকেআরের |
• দু’ ম্যাচ থেকে আট পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলে এক নম্বরে টাইটান্স। দু’নম্বরে দিল্লি ডেয়ারডেভিলস (এক ম্যাচে চার পয়েন্ট)। তিনে অকল্যান্ড এসেস (দু’ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট)। বুধবারের ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ায় তিন ম্যাচ থেকে দু’পয়েন্ট নিয়ে কেকেআর রয়েছে চার নম্বরে। পাঁচে পার্থ স্কর্চার্স (দু’ম্যাচে দু’পয়েন্ট)।
• এখন যা অবস্থা, শেষ ম্যাচ জিতলেও কেকেআরের পয়েন্ট হবে ৬। কিন্তু দিল্লি বনাম অকল্যান্ড ম্যাচে ফলাফল হলেই দুটো টিমের একটার পয়েন্ট আট হয়ে যাবে। ওই ম্যাচ যদি পরিত্যক্ত হয়, তা হলে দু’দলেরই পয়েন্ট দাঁড়াবে ৬।
• দিল্লি আর অকল্যান্ড দু’দলেরই খেলা বাকি পার্থের সঙ্গে। সেই ম্যাচ দিল্লি-অকল্যান্ড যদি হেরেও যায়, তা হলে পার্থের পয়েন্ট হয়ে যাবে ১০। আবার দিল্লি বা অকল্যান্ড জিতলে তাদের পয়েন্ট হয়ে যাবে আট।
• বৃষ্টিতে বাকি ম্যাচ ভেস্তে গেলেও কেকেআরের চেয়ে বেশি পয়েন্ট থাকবে বাকি দলগুলোর। |
|
যা-ই হোক, কেকেআরের পরিণতি দেখে যাঁরা আঁতকে উঠছেন তাঁদের বলি, এত টেনশনের কিছু নেই। আইপিএল সিক্সে সেই চেনা কেকেআরকেই দেখবেন। আমি অন্তত তাই আশা করি। আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে একমাত্র দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ছাড়া আইপিএল টিমগুলো কে আর কী করেছে? দিল্লির সুবিধা ওদের হাতে এমন তিনজন ব্যাটসম্যান আছে যারা এই পিচে অনায়াসে খেলে দিতে পারে। জয়বর্ধনে, রস টেলর আর পিটারসেন। সঙ্গে তো সহবাগ রইলই। কিন্তু আইপিএলের বাকি দু’টো টিমের অবস্থা নাইটদের চেয়ে ভাল কিছু হবে বলে মনে হয় না। চেন্নাই ভেসে থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু মুম্বইয়ের সেই সম্ভাবনাও নেই।
|
পুরো ম্যাচ খেলতে পারলাম না বলে হতাশ লাগছে। কিন্তু এটা মানতেই হবে যে এই টুর্নামেন্টে আমরা নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী খেলতে পারিনি। কিছু শিক্ষা নিয়ে ফিরব।
টুইটে বেঙ্কি মাইসোর |
|