|
|
|
|
রণক্ষেত্র পিলখানা |
বাসে পিষ্ট কিশোর, ধাক্কার অভিযোগ কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাসে পিষ্ট হয়ে এক পড়ুয়ার মৃত্যুতে তাকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বাসটির কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, টিকিট না কাটায় ওই বেসরকারি বাসের কন্ডাক্টর জিশান খান (১৫) নামে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রকে বাস থেকে ঠেলে ফেলে দেন। বাসের চাকা জিশানের পেটের উপর দিয়ে চলে যায়। এই ঘটনায় বুধবার রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাওড়ার পিলখানা। বেসরকারি রুটে চলা জেএনএনইউআরএমের বাসটি ভাঙচুর করে জনতা। বিশাল পুলিশবাহিনীর সামনেই বাসে আগুন দেওয়া হয়। যদিও দমকল পৌঁছনোর আগেই আগুন নেভানো হয়। বাসচালক ও কন্ডাক্টরকে গ্রেফতারের দাবিতে এবং ট্রাফিক পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে প্রায় তিন ঘণ্টা জিটি রোডে অবরোধও চলে।
|
জিশান খান |
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলি। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তথা সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগ সত্যি হলে ওই কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রাজনৈতিক রং না দেখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।” জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখের। দোষ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ওঁকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে আমাদের কাছে যেটুকু খবর আছে, কন্ডাক্টর ছেলেটির হাত ধরে বাসে তুলতে যান। হাত ফস্কে সে পড়ে যায়।” পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বাসযাত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় দত্ত বলেন, “সরকারের উচিত প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া।”
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “বাস থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তা অত্যন্ত নৃশংস। ঘটনাটির ভাল ভাবে তদন্ত হওয়া উচিত।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্র, পিলখানার আলম মিস্ত্রি লেনের বাসিন্দা জিশান ও তার দুই বন্ধু জি টি রোডের পঞ্জাব লাইন থেকে হাওড়া ময়দান-মুকুন্দপুর রুটের ২৪ এ/১ রুটের একটি ফাঁকা বাসে ওঠে। বাসটি তখন ফায়ার সার্ভিসের ডিপো ছেড়ে হাওড়া ব্রিজের দিকে যাচ্ছিল। অভিযোগ, এক স্টপেজ পরে নেমে যাবে বলে ওই পড়ুয়ারা টিকিট কাটতে না চাইলে কন্ডাক্টর তাদের চলন্ত বাস থেকে নেমে যেতে বলে। দুই ছাত্র নেমেও যায়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, জিশান এ ভাবে নামতে না চাইলে কন্ডাক্টর তাকে জোর করে ঠেলে ফেলে দেয়। বাস থেকে পড়ে গেলে পিছনের চাকা জিশানের পেটের ওপর দিয়ে চলে যায়।
স্থানীয় রিকশাচালক মহম্মদ জান বলেন, “আমি রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। দেখি বাসের কন্ডাক্টর একটা ছেলেকে কলার ধরে জোর করে নামাতে চেষ্টা করছে। ছেলেটা হুড়মুড় করে থেকে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে পিছনের চাকা ওকে পিষে দিল।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছেলেটি চাকার তলায় পড়ে গিয়েছে দেখে বাসের চালক ও কন্ডাক্টর চলন্ত বাস থেকে নেমে পালান। চালকহীন বাসটি গিয়ে ধাক্কা মারে রাস্তার ও পারে একটি পানের দোকানে। লাফিয়ে সরে গিয়ে প্রাণ বাঁচান ওই দোকানদার। অল্পের জন্য রক্ষা পান এক মোটরবাইক আরোহীও।
পুলিশ জানায়, এলাকাবাসীরা রক্তাক্ত জিশানকে প্রথমে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। খবর দেওয়া হয় তার বাড়িতেও। জিশানের বাড়ির লোকেরা তাকে মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই খবর মুহূর্তের মধ্যে পিলখানায় পৌঁছতেই তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। ক্ষুব্ধ জনতা বাসটি ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দেওয়ায় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি বেধে যায়। জি টি রোডে অবরোধ হয়। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। ঘটনাস্থলে যান হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। তাঁদের ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ নামে। তাদের সামনেই বাসে আগুন ধরানো হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) নিশাত পারভেজ বলেন, “ছাত্রটিকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। পলাতক বাসচালক ও কন্ডাক্টরের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” পুলিশ জানায়, বাসটির ওই রুটে চলাচলের অনুমতিই ছিল না। কেন ওই রুটে বাসটি চলাচল করছিল, তার তদন্ত হচ্ছে। |
|
|
|
|
|