অবসরের আয়
সেই ২০০৪ সালে চালু হলেও, নতুন পেনশন প্রকল্প নিয়ে ধন্দ এখনও বিস্তর। কাদের জন্য এই প্রকল্প, কোথায়-কী ভাবে এতে অংশ নেওয়া যায় এই সমস্ত নিয়েই বহু রকম সংশয় আমাদের মনে। অনেকেই জানেন না, কোথায় এই প্রকল্পের টাকা খাটে এবং তা ঠিক করার ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছে আদৌ গুরুত্ব পায় কি না। আজকে এই সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজব আমরা। শুরু করব কারা এই প্রকল্পে যোগ দিতে পারেন, সেখান থেকে। ধাপে ধাপে দেখে নেব প্রকল্পে সামিল হওয়ার পদ্ধতি, যা স্বচ্ছল ও স্বস্তির করে তুলবে আপনার অবসর জীবনকে।

• শুরুর দিকে এই প্রকল্প ছিল শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য। কিন্তু ২০০৯ সালের ১ মে থেকে এতে সামিল হতে পারেন যে কোনও ভারতীয় নাগরিক। তবে বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে।
• কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের জন্য প্রকল্পে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। অন্যদের জন্য তা নয়।


প্রকল্পে যোগদানের পদ্ধতি থেকে শুরু করে তার ফর্ম এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির ঠিকানা সব কিছুই পাবেন সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে। দেখুন
www.npscra.nsdl.co.in
অথবা www.pfrda.org.in


• প্রকল্প নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (পিএফআরডিএ)। নথিভুক্তির জন্য দেশে ৩৫টি সংস্থার নাম নির্দিষ্ট করেছে তারা। এদের বলা হয় ‘পয়েন্ট অফ প্রেজেন্স’ (পিওপি)।
• এ ছাড়াও এই একই কাজের দায়িত্বে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড-সহ প্রায় সাড়ে ন’হাজার আর্থিক সংস্থা। এদের পোশাকি নাম ‘পয়েন্ট অফ প্রেজেন্স-সার্ভিস প্রোভাইডার’ (পিওপি-এসপি)। প্রকল্পের অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে সরাসরি এদের কাছেও।
• রাজ্যে এ রকম পিওপি-এসপি রয়েছে ৫৫০টি। তার মধ্যে কলকাতাতেই প্রায় ২৭০টি। যেমন, ইউটিআইয়ের প্রধান শাখা (বিবাদি বাগ), স্টেট ব্যাঙ্ক, ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স-সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থার নির্দিষ্ট কিছু শাখা ইত্যাদি।


আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিন
(১) রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি
(২) নিজের সই করা সচিত্র পরিচয়পত্র (পাসপোর্ট, ভোটার-কার্ড ইত্যাদি)
(৩) প্যান কার্ডের প্রতিলিপি
(৪) কমপক্ষে ৫০০ টাকার ডিমান্ড-ড্রাফ্ট অথবা পে-অর্ডার


• প্রথমে পছন্দের ফান্ড ম্যানেজারের ঘরে টাকা জমা দিতে হবে। সাধারণত তা দেওয়া যায় ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত।
• তার পর সেই টাকা খাটিয়ে তৈরি তহবিল দিয়ে বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ অনুমোদিত কোনও সংস্থার কাছ থেকে কিনতে হবে অ্যানুইটি প্রকল্প। বিমা সংস্থাও অ্যানুইটির টাকা বাজারে খাটাবে। যা থেকে মিলবে মাসে মাসে পেনশন।
• ৬০ বছর পর্যন্ত পেনশন প্রকল্পে টাকা জমানোর পর মোট অর্থের অন্তত ৪০% দিয়ে অ্যানুইটি কিনতে হবে আপনাকে। থোক বা পর্যায়ক্রমে তুলে নিতে পারবেন বাকি টাকা। তবে বয়স ৭০ পেরোলে, অ্যাকাউন্টে পড়ে থাকা টাকা গ্রাহককে ফিরিয়ে দিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
• কেন্দ্রীয় কর্মীদের অবসরের পর পেনশন ফান্ডের পুরো টাকাই অ্যানুইটিতে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক। কেনার দায়িত্বও কেন্দ্রের। অন্যদের অবশ্য নিজেদেরই অ্যানুইটি কিনতে হবে।


টাকা আপনার। তাই সেই টাকা লগ্নির সিদ্ধান্তে আপনার ইচ্ছের গুরুত্ব অনেকখানি। যেমন—
• প্রকল্পে ঢোকার সময় বেছে নিতে পারেন পছন্দসই ফান্ড ম্যানেজারের নাম। জানিয়ে দিতে পারেন ফর্ম ভরার সময়েই।
• মূলত তিন জায়গায় লগ্নি করা হয় পেনশন প্রকল্পের টাকা। শেয়ার বাজার, কর্পোরেট বন্ড আর সরকারি ঋণপত্রের মিশ্রণে। এর মধ্যে কোথায় টাকা খাটানো হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আপনি নিজেই (অ্যাকটিভ চয়েস)। তবে স্বচ্ছ ধারণা না-থাকলে, তা ফান্ড ম্যানেজারের হাতে ছেড়ে দেওয়াই ভাল (অটো চয়েস)।


তিন ভাবে এই খাতে টাকা খাটাতে পারেন—
(ক) প্রধানত শেয়ার বাজারে
(খ) মূলত প্রতিশ্রুত আয় ভিত্তিক বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে
(গ) পুরোটাই প্রতিশ্রুত আয় ভিত্তিক বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে
কোনও ক্ষেত্রেই কিন্তু প্রতি বছর আপনার জমা দেওয়া মোট টাকার অর্ধেকের (৫০%) বেশি লগ্নি করা যাবে না শেয়ার বাজারে। যাতে কষ্টের টাকা বাজারের ওঠা-পড়ায় উবে না যায়। এ বার আপনি যদি এই পছন্দ সংস্থার হাতেই ছেড়ে দেন, তা হলে সেই সংস্থা আপনার টাকা খাটাবে বয়সের অনুপাতে ঝুঁকির অঙ্ক কষে।
• আপনার বয়স যদি ১৮ বছর হয়
৫০% খাটবে (ক)-তে
৩০% খাটবে (খ)-তে
২০% খাটবে (গ)-তে
• বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারে কম এবং অন্য দুই ক্ষেত্রে বেশি লগ্নি করা হবে।

• প্রতি মাসে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বেতন ও মহার্ঘ ভাতার ১০% কেটে নেওয়া হয় পেনশন প্রকল্পের জন্য। সেই সঙ্গে সমপরিমাণ টাকা দেয় সরকার।
• অন্যদের প্রতি বছর কমপক্ষে দিতে হবে ৬ হাজার টাকা (মাসে ৫০০)।


না। আপনার পেনশন নির্ভর করবে শেয়ার ও ঋণপত্রের (বন্ড) বাজার থেকে পাওয়া রিটার্নের উপর। কারণ, পেনশন তহবিলে আপনার রাখা টাকা খাটানো হবে শেয়ার ও বন্ডে। অনেকটা মিউচুয়াল ফান্ডের ধাঁচে। আর তা করবেন ফান্ড ম্যানেজাররা। তার উপরেই নির্ভর করবে অ্যানুইটি প্রকল্প কিনতে কত টাকা হাতে পাবেন আপনি। তার পর অ্যানুইটি প্রকল্পের টাকাও লগ্নি করা হবে শেয়ার আর বন্ডের বাজারে। সেই রিটার্নের উপরেই নির্ভর করবে পেনশনের অঙ্ক।


পেনশন প্রকল্পের তহবিল পরিচালনায় ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত রয়েছে ৭টি সংস্থা
(১) এসবিআই পেনশন ফান্ড (২) এলআইসি পেনশন ফান্ড (৩) ইউটিআই রিটায়ারমেন্ট সলিউশন্স (৪) আইসিআইসিআই-প্রুডেন্সিয়াল পেনশন ফান্ড (৫) আইডিএফসি পেনশন ফান্ড (৬) কোটাক-মহীন্দ্রা পেনশন ফান্ড (৭) রিলায়্যান্স ক্যাপিটাল পেনশন ফান্ড


কঠিন অসুখের চিকিৎসা, প্রথম বার বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার মতো কারণে প্রকল্প-অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন। তবে কোনও ভাবেই তা মোট জমার ২০ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না।


হ্যা।ঁ প্রকল্পে প্রথম লগ্নির সময় যে অ্যাকাউন্ট খুলছেন, তা হল টিয়ার-ওয়ান অ্যাকাউন্ট। এর সঙ্গে ১০০০ টাকা দিয়ে একটি অতিরিক্ত অ্যাকাউন্টও খুলতে পারেন। যাকে বলে টিয়ার-টু অ্যাকাউন্ট। মাসে অন্তত ২৫০ টাকা করে রাখতে হবে সেখানে। টিয়ার-ওয়ান অ্যাকাউন্ট হোল্ডারই টিয়ার-টু অ্যকাউন্ট খোলার অনুমতি পাবেন।
টিয়ার-টু অ্যাকাউন্টের সুবিধা হল, এই অ্যাকাউন্টের কিছু, এমনকী পুরো টাকা যে কোনও সময়েই তুলে নিতে পারবেন আপনি। আবার দরকার না-হলে, ওই অ্যাকাউন্টের টাকা ব্যবহার করতে পারবেন অ্যানুইটি কেনার সময়। টাকা তোলার এই সুবিধা কিন্তু টিয়ার-ওয়ানে নেই।


কেন্দ্রীয় কর্মী ছাড়া বাকিদের সামনে বিকল্প দু’টি
(১) নমিনি পুরো টাকা তুলে নিয়ে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারেন।
(২) নতুন পেনশন অ্যাকাউন্ট খুলে নমিনি ওই জমানো টাকা সেখানে নিয়ে আসতে পারেন এবং অ্যাকাউন্ট চালিয়ে তাঁর ৬০ বছর বয়সের পর থেকে পেনশন পেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে নিয়মিত টাকা জমা দিতে হবে তাঁকে।


• কেন্দ্রীয় কর্মীরা তো জীবনভর পেনশন পাবেনই। পেনশন পাবে তাঁর পরিবারও।
• অন্যদের ক্ষেত্রে তা নির্ভর করছে অ্যানুইটি স্কিমের শর্তের উপর।


• নমিনি করার সুযোগ
• টিয়ার-ওয়ান অ্যাকাউন্টের টাকায় ৮০সি ধারায় করছাড় বিদেশি সংস্থার হাতে আমার টাকা সুরক্ষিত? • পেনশনে ৪৯% পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দিতে চায় কেন্দ্র। এ কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। এর মানে, বিদেশি সংস্থাগুলি যে কোনও ভারতীয় পেনশন পরিচালন সংস্থার ৪৯% শেয়ার নিজেদের হাতে রাখতে পারবে
• সে ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি সংস্থা যৌথ ভাবে আপনার জমানো তহবিল নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে লগ্নি করবে। এখনকার মতোই তা বাজারে খাটিয়ে যে-লাভ হবে, পেনশন পাবেন তা থেকেই।
• যদি ভাবেন আপনার সঞ্চয় বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে, তা হলে বলতে হয়, এই চিন্তা ঠিক নয়। এই সঞ্চয় প্রকল্পে বিদেশি লগ্নির সঙ্গে আপনার ঝুঁকি বাড়ার কোনও সম্পর্ক নেই।
• আর একটা কথাও মনে রাখুন। পেনশনে বিদেশি লগ্নি আসা এখনও কেন্দ্রের প্রস্তাব মাত্র। শেষ পর্যন্ত সত্যিই তা আসবে কি না কিংবা এলেও কত শতাংশ (২৬ না ৪৯), তা নির্ভর করছে সংসদে প্রস্তাব পাশ হওয়ার উপর। যতক্ষণ তা না-হচ্ছে, ততক্ষণ পুরো বিষয়টিই স্পষ্ট নয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.