দ্বিতীয় বিতর্কে হাওয়া কাড়লেন ওবামাই
বাধা দিলেন। ঝাঁঝিয়ে উঠলেন। আঙুল তুললেন। মাথা ঝাঁকালেন।
মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্কের হোফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিট রোমনির সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দেখতে পাওয়া গেল এ ভাবেই। যেখানে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পুরোপুরি আক্রমণাত্মক হাবভাব বজায় রাখলেন ওবামা। ডেনভারে তাঁর যে রূপ একেবারেই দেখা যায়নি। অক্টোবরের গোড়ায় প্রথম পর্যায়ের সেই বিতর্কে ‘একঘেয়ে, চুপচাপ’ ওবামাকে নিয়ে শুধু ডেমোক্র্যাট শিবির নয়, সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সব মহলেই।
এ বার তাই বিতর্কের আগে থেকেই প্রত্যাশা ছিল ওবামা সহজে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বেন না। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। হোফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ মিনিটের বিতর্কে তাই এ বার তিনি বিনয় দেখিয়ে চুপ করে থাকেননি। নিজের বক্তব্য পেশের আগে ধৈর্য ধরে বসেও থাকেননি। এক এক সময়ে রোমনির যুক্তির বেড়াজাল কেটে ঢুকে পড়েছেন নিজের কথা বলতে। রোমনিকে ওবামার উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, “আপনি বলার সুযোগ পাবেন। আমি এখনও শেষ করিনি, কথা বলছি।” ওবামা সে সবের তোয়াক্কা না করে নির্দ্বিধায় বলে গিয়েছেন, “সত্যি নয়, গভর্নর রোমনি, সত্যি নয়। আপনি যা বলছেন, একেবারে সত্যি নয়।” দুই বক্তাই এত লড়াকু মেজাজে ছিলেন যে বেশ কয়েক বার তাঁরা একে অন্যকে বাধা দিয়ে বলতে শুরু করেন। এক সময় দেখা গেল, দু’জনে একসঙ্গে কথা বলছেন। যার জেরে কারও কথাই পৌঁছয়নি শ্রোতাদের কাছে।
মুখোমুখি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। হোফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক মঞ্চে মিট রোমনি ও বারাক ওবামা। ছবি: রয়টার্স
তিন সপ্তাহ পরেই যাঁকে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ে নামতে হবে, তাঁর কাছ থেকে এই আক্রমণটাই আশা করেছিলেন ওবামা-সমর্থকরা। মঙ্গলবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কৌশল ছিল একটাই: রোমনির চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে নষ্ট করে দেওয়া। শ্রোতাদের বোঝানো, রোমনি যা বলছেন, তার বেশির ভাগই ছেঁদো কথা, মিথ্যে বা বানানো। তাই ওবামা দাবি করলেন, তাঁর প্রতিপক্ষ চিনের পরম বন্ধু, অভিবাসীদের শত্রু। ওবামার মতে, লিবিয়ার ঘটনায় রোমনি পুরোপুরি রাজনৈতিক অনুভূতিহীন। মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের পরে বিতর্ক-মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামাও এ বার লিবিয়ার বেনগাজি দূতাবাসে হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করলেন। অর্থাৎ আক্রমণের এমন অনেক অস্ত্রই ওবামা নিউ ইয়র্কে শানিয়ে তুললেন, যেগুলোর কোনওটাই ডেনভারে তিনি ব্যবহার করেননি।
আগের বার রোমনির বিতর্কিত মন্তব্য ছিল, “৪৭ শতাংশ মার্কিন নাগরিক দুঃস্থ। এঁরা আয়কর দেন না। এঁরা সরকারের উপরে নির্ভরশীল। এঁদের আমাকে ভোট দেওয়ার কথা নয়।”
এই মন্তব্য ঘিরে সব স্তরে সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু ওবামা সেই বিতর্কে নিশ্চুপ ছিলেন। এ বার কিন্তু কোনও সুযোগই আর হাতছাড়া করেননি তিনি। রোমনির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছেন, “মধ্যবিত্তের টাকায় রোমনি ধনীদের সাহায্য করার একমুখী পরিকল্পনা তৈরি করেছেন।” যার জবাবে রোমনি বলেন, “গত চার বছর ধরে মধ্যবিত্তকে পিষে মারা হয়েছে।”
হারানো জমি পুনরুদ্ধারে ওবামার এর পরের অস্ত্র ছিল আউটসোর্সিং এবং বেকারত্ব। তিনি প্রশ্ন তোলেন, রোমনির প্রস্তাবিত কর্পোরেট ট্যাক্স সংস্কারে আদতে কী হবে? কেউ বিদেশে ব্যবসা করুক। সেখানেই লাভ করবে। তাঁকে আমেরিকায় ট্যাক্স দিতে হবে না। তাতে আট লক্ষ নতুন চাকরি হবে। কিন্তু সেগুলো হবে চিন, ভারত বা জার্মানিতে। অথচ কেউ যদি ছোটখাটো ব্যবসাও আমেরিকার মাটিতে করতে চায়, তাঁকে কম হারে হলেও ট্যাক্স দিতেই হবে। “আমরা এ ভাবে আমেরিকায় চাকরির সুযোগ দিতে চাই না। আমাদের নিজস্ব রফতানি বাড়াতে চাই।” রোমনি জানান আগামী চার বছরে তিনি ১ কোটি ২০ লক্ষ নতুন চাকরি এবং বেতনবৃদ্ধির সুযোগ করে দেবেন পাঁচমুখী পরিকল্পনার সাহায্যে। ওবামা রোমনিকে নস্যাৎ করেন শুধুমাত্র ধনীদের কথা ভাবছেন বলে।
সব মিলিয়ে এ দিন এগিয়ে রইলেন ওবামাই। বিতর্কের পরে একটি মার্কিন চ্যানেলের সমীক্ষা অনুযায়ী, ৪৬ শতাংশ মার্কিন ওবামাকে বিজয়ী বলে ঘোষণা করেন। আর ৩৯ শতাংশ রায় দেন রোমনির পক্ষে। বিতর্কশেষে দেখা যায় সময়ের ক্ষেত্রেও প্রাধান্য পেয়েছেন ওবামা। ৯০ মিনিটের মধ্যে ৪৪ মিনিট ৪ সেকেন্ড নিয়েছেন ওবামা। আর রোমনি পেয়েছেন ৪০ মিনিট ৫০ সেকেন্ড। মঙ্গলবার রাতের ‘জয়ী’ বারাক ওবামাকে তিন সপ্তাহ পরেও মার্কিন নাগরিকরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নিতে চলেছেন কি না, সেটাই এখন দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.