রায়গঞ্জের সূর্যোদয় মূক ও বধির হোম থেকে দুই আবাসিক পালিয়ে গেল। মঙ্গলবার ভোরে পকেটমারি ও চুরির ঘটনায় ধৃত দুই নাবালক হোমের শৌচাগারের জানালার গ্রিল খুলে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার পর হোম কর্তৃপক্ষ প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ অভিযোগ জানিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দুইজন হল ১৪ বছরের তারিক আনোয়ার ও ৮ বছরের সানি কুমার। তাদের বাড়ি করণদিঘির পূর্ব ফতেপুর ও মালদহ থানা এলাকায়। গত শুক্রবার হেমতাবাদ থানার কমলাবাড়ি হাট থেকে পকেটমারি করার অভিযোগে সানিকে পুলিশ ধরে। শনিবার সাইকেল চুরির চেষ্টার অভিযোগে করণদিঘি থানা এলাকার বাসিন্দারা তারিককে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এর পরে তাদের ওই হোমে রাখা হয়। গত ১ অক্টোবর রাতে দুই কিশোরী গার্লস হস্টেলের ছাদে উঠে গাছ বেয়ে পাঁচিল টপকে পালিয়ে গিয়েছিল। যদিও পরদিন রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হোমে ফেরৎ পাঠায়। দুই সপ্তাহের মধ্যে পরপর দুইবার হোম থেকে আবাসিক পালানোর ঘটনায় হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন জেলা শিশুকল্যাণ কমিটি। কমিটির চেয়ারম্যান সুনীলকুমার ভৌমিক বলেন, “কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে বারবার হোম থেকে আবাসিকেরা পালাচ্ছে। আবাসিকদের ঠিকমত খাবার দেওয়া বা মারধর করা হয় কী না তা দেখা দরকার। আমরা তদন্তের দাবি তুলেছি।” বর্তমানে হোমে ৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মূক ও বধির ৩৬ জন কিশোরী ও ৩৯ জন কিশোর রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত কিশোর কিশোরীদেরও মূক ও বধিরদের সঙ্গে একই হস্টেলে রাখা হয়। শিক্ষক, কর্মী ও নৈশপ্রহরী মিলিয়ে ২৩ জন কর্মী রয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তের পর হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গ্রিলের চার ধারের পেরেক শক্ত কিছু দিয়ে দুর্বল করে ওই দুই নাবালক পালিয়েছে। হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথী দাস বলেন, “কর্মীর অভাব থাকায় ঠিকমত নজরদারি করা যাচ্ছে না। মূক ও বধিররা কানে শুনতে পায় না। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ওই দুই নাবালক শৌচাগারের জানালার গ্রিল খুলে পালিয়ে গিয়েছে। অবিলম্বে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত কিশোর কিশোরীদের অন্য হোমে রাখার ব্যবস্থা করা না হলে মূক ও বধিরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দেখা দিতে পারে।” তিনি জানান, এক নৈশপ্রহরী সহ আরও অন্তত ১০ জন কর্মীর প্রয়োজন। জেলাশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি। হোমের তরফে ঘটনার তদন্ত করে তার রিপোর্ট জেলাশাসককে দেওয়া হয়। জেলাশাসক পাশাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “হোমের কোনও কর্মীর গাফিলতির জেরে ওই দুই নাবালক আবাসিক পালিয়ে গিয়েছে কি না জানতে তদন্ত চলছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভিন্ন মামলার অভিযুক্ত কিশোর কিশোরীর জন্য আলাদা হোম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” দুই নাবালকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সুপার দীপঙ্কর ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। |