বাঘের ডেরার বন্ধ দরজা একটু ফাঁক করল সুপ্রিম কোর্ট।
ব্যাঘ্র প্রকল্পগুলির কোর এরিয়ায় পর্যটন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপ গত ২৪ জুলাই নিষিদ্ধ করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। আজ সেই অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, ব্যাঘ্র প্রকল্পে পর্যটনের ব্যাপারে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি (এনটিসিএ) গত কাল যে নির্দেশিকা জারি করেছে, সেটিই এ বার থেকে কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। প্রসঙ্গত, ওই নির্দেশিকায় কেন্দ্র বলেছিল, কোর এরিয়ার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশে পর্যটকদের নিয়ন্ত্রিত গতিবিধি চলতে পারে।
পরিবেশকর্মী অজয় দুবের জনস্বার্থ মামলার জেরে জারি হয়েছিল ওই নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু অগস্টে সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানোর সময়েই কোর্ট ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, কেন্দ্র কোনও সংশোধিত নির্দেশিকা জারি করলে কোর এরিয়ায় নিয়ন্ত্রিত পর্যটনে ছাড়পত্র দিতে তাদের আপত্তি নেই। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ওই সংশোধিত নির্দেশিকা কোর্টে জমা দিয়েছিল কেন্দ্র। এর পর এই মাসের ৯ তারিখে কেন্দ্রকে নির্দেশিকাটি জারি করতে বলে কোর্ট। সেই মতো অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কোর্টকে জানিয়েছেন, দেশের ৪১টি ব্যাঘ্র প্রকল্পের জন্য গত কাল ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
তার পরই কোর্টের এই রায়। যে রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক এবং বিচারপতি স্বতন্ত্র কুমারের বেঞ্চ বলেছে, “(কেন্দ্রের) এই নির্দেশিকাকে আমরা সংবিধানসম্মত বা সংবিধান-বিরোধী কোনওটাই বলছি না।” সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে ছ’মাসের মধ্যে নিজস্ব ব্যাঘ্র সংরক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করে এনসিটিএ-র কাছে জমা দিতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। |
বাঘ বাঁচাও। পাটিয়ালায় খুদেদের আর্জি এটাই। ছবি: পিটিআই |
বাঘের খাসমহলের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশে পর্যটন সীমাবদ্ধ রাখার পাশাপাশি ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোর এরিয়ার ভিতরে যে এখন সমস্ত পর্যটন পরিকাঠামো রয়েছে, তা একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিতে হবে। নতুন কোনও পরিকাঠামোও তৈরি করা যাবে না। এ ছাড়া, পর্যটকদের সব ধরনের বন্য প্রাণীর থেকে অন্তত ২০ মিটার দূরত্বে থাকতে হবে। কোনও প্রাণীকে খাবারদাবার দেওয়া চলবে না। ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণ (সংরক্ষণ) আইন অনুযায়ী সমস্ত রাজ্যকে কোর ও বাফার এলাকার তালিকাও তৈরি করতে বলা হয়েছে।
পর্যটকদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওই নির্দেশিকায় বন্য প্রাণীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আদিবাসীদের একাংশের জন্য উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রস্তাব রেখেছে কেন্দ্র। ব্যাঘ্র প্রকল্প বা বাঘের চলাফেরার এলাকায় বসবাসকারী ওই অনথিভুক্ত জাতি-উপজাতিগুলির মধ্যে শিকারের রেওয়াজ রয়েছে। পরিবেশ মন্ত্রকের উদ্বেগ সেখানেই।
তবে সব মিলিয়ে আজকের রায় জঙ্গলপ্রেমীদের যেমন স্বস্তি দিয়েছে, তেমনই আশ্বস্ত করেছে পর্যটননির্ভর একাধিক রাজ্য প্রশাসনকেও। নিষেধাজ্ঞা জারির পর থেকেই কেরল, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য তা আংশিক শিথিল করার আর্জি জানিয়ে আসছিল। কারণ, কেরলের যে শবরীমালা মন্দিরে ভক্তদের ঢল লেগে থাকে, তা রয়েছে পেরিয়ার ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকার মধ্যে। আর মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান রাজ্যের পর্যটনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে কেন্দ্রের সাহায্য চেয়েছিলেন। রাজ্যগুলির চাপেই কেন্দ্র নয়া নির্দেশিকা জারি করতে বাধ্য হল কি না, আজ সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। |