পরিবহণমন্ত্রী তো বাসের ভাড়া না-বাড়াতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ফলে রাস্তায় বাস বাড়ন্ত। এ দিকে, নিঃশব্দ বিপ্লবে অটোভাড়া বাড়িয়ে দিলেন অটো মালিকরা। অপেক্ষমাণ যাত্রীরা যেন-তেন প্রকারেণ বাড়ি পৌঁছতে মরিয়া। তাই সেই বাড়তি ভাড়া, অটোচালকের রাগী গলায় ‘খুচরো ছাড়া উঠবেন না’-র নির্দেশ সবই মেনে না নিয়ে তাঁদের উপায় নেই। মেট্রো? অক্টোবরের গোড়ার এক দিনের অভিজ্ঞতা বলি। পুজো আসছে, তাই যাত্রীদের হাতে প্যাকেটের পর প্যাকেট, বিগ শপার। মেট্রোর দরজা খুললে আর বন্ধ হয় না। শ্যামবাজারে যত যাত্রী নামলেন, হাতিবাগান-ফেরত ঠিক তত মানুষ উঠে আবার পুরনো ছবিটাকে বহাল রাখলেন। দমদমে? অটোর সর্পিল লাইনে তখন আকিবুকি। কোনটা আগা, কোনটা ল্যাজা, বোঝে কার সাধ্যি? নাগেরবাজার অভিমুখে যে গুটিকয়েক বাস-মিনি আসছে, পাবলিক ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত। কন্ডাক্টর চেঁচাচ্ছেন, পিছনে এগোন, পিছনে এগোন।
নাগেরবাজার মোড়ে এয়ারপোটর্মুখী অটোর লাইন তখন শৌচালয় ছুঁইছুঁই। একটা বাস ধরে সেঁধিয়ে পড়া গেল। কন্ডাক্টর সমানে চেঁচাচ্ছেন, সবাই দশ টাকা ধরালে আমি খুচরো দেব কী করে? এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেটের সামনে তখন জনসমুদ্র। ‘শেয়ার’ নামে চলযান প্রাইভেটগুলোতে স্থান পেতে ব্যাগ কাঁধে যুবক, কানে ইয়ার ফোন গোঁজা সদ্য যুবতী এবং মাঝবয়সি অফিস ফেরত দাদা সবাই কসরত করছেন। এর মধ্যে অত্যাধুনিক ঠান্ডা বাস একটা হাজির। সদ্য চালু হওয়া বারাসত-সলপ রুট। তিলধারণের জায়গা নেই। পাঁচ-ছয় গুণ অতিরিক্ত যাত্রী তখন সমানে যুদ্ধ করছেন ভেতরে ঢুকতে। যন্ত্রচালিত দরজা বন্ধ হওয়া দূর অস্ত। প্যাসেঞ্জার যে ঝুলছে! একজন যাত্রী বেমক্কা বলে ফেলেছিলেন, ‘এক নম্বর থেকে কুড়ি টাকা দিয়ে বারাসত যাব, এ ভাবে?’ সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন ঝুলন্ত পাবলিক, ‘দাদা কষ্ট হচ্ছে? নেমে যান’। পরিবহণমন্ত্রী তো জানতেও পারলেন না, তাঁর প্রতিজ্ঞার গুণাগার আমাদের কী ভাবে দিতে হচ্ছে।
পরিবহণমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সমীপে বিনীত নিবেদন: নিত্যযাত্রীরা কিছু মনে করবেন না এক-দু’টাকা ভাড়া বাড়ালে। তারা ষাট টাকা কেজি বেগুনও কেনেন। ভাড়া বাড়ান, কিন্তু একটু আরামে যাতায়াত করতে দিন। বাসগুলোর অবস্থা ফেরান, সব মানুষের ঘরে ফেরার মতো বাস যাতে রাস্তায় নামে, তার ব্যবস্থা করুন।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী। কলকাতা-১২৫
|
মেদিনীপুর স্টেশনের পরিকাঠামো বাড়বে না? |
পশ্চিম মেদিনীপুরের গুরুত্বপূর্ণ সদর শহরের সঙ্গে কলকাতা তথা অন্যান্য জেলার যোগাযোগের একমাত্র স্টেশনটি হল মেদিনীপুর। জঙ্গলমহলের পাশাপাশি অসংখ্য গ্রামবাসী মেদিনীপুর স্টেশন হয়ে যাতায়াত করেন। স্টেশনটিকে দীর্ঘ দিন আগে ‘মডেল স্টেশন’ ঘোষণা করলেও পরিকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে শম্বুক গতিতে। এই স্টেশন দিয়ে প্রচুর লোকাল, প্যাসেঞ্জার, এক্সপ্রেস, সুপারফাস্ট থেকে শুরু করে রাজধানী, দুরন্ত ইত্যাদি ট্রেন যাতায়াত করে। স্টেশনে তিনটি প্ল্যাটফর্মের একটি প্ল্যাটফর্ম দখল করে রাখে মেদিনীপুর-হাওড়া লোকাল। অন্য দুটির একটিতে প্রায় সময়ই থাকে মালগাড়ি। বেশির ভাগ সময়ই তিনটি প্ল্যাটফর্ম ভর্তি থাকায় অন্যান্য ট্রেন স্টেশনের বাইরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের উল্টো দিকে অথবা তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনের পার্সেল শেডে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা আদৌ ব্যয়সাপেক্ষ নয়। এ ছাড়া এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ফ্লাইওভারের দিকে যাওয়ার রাস্তাটিও তৈরি হয়নি। নেই রাঙামাটির দিকে কোনও টিকিট কাউন্টারও। ফলে, ওই প্রান্তের যাত্রীদের তথা গুড়গুড়িপাল, চাঁদড়া, ধেড়ুয়া এলাকার অসংখ্য যাত্রীকে ঘুরপথে গিয়ে টিকিট কাটতে হয়। এতে ট্রেন ফেলও হয়।
সুদর্শন নন্দী। রাঙামাটি, মেদিনীপুর
|
উচ্চ মাধ্যমিক প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা অন্য স্কুলে? কেন? |
আসন্ন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে পর্ষদের কাছে আমাদের বিশেষ আবেদন এই যে, এই বছরের (২০১৩) উচ্চ মাধ্যমিক প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা অন্য স্কুলে হওয়ার যে নির্দেশিকা জারি হতে চলেছে, সে বিষয়ে আমরা এবং শিক্ষার্থীরা বিশেষ ভাবে শঙ্কিত। এমনিতেই স্কুলগুলিতে প্র্যাকটিকাল করাবার পর্যাপ্ত পরিকাঠামো নেই। সেখানে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের স্কুলের ল্যাবরেটরির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে অন্য স্কুলে, ভিন্ন পরিবেশে প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা দিতে গিয়ে কি চূড়ান্ত মানসিক চাপের সম্মুখীন হবে না?
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের উন্নত কেরিয়ারের প্রবেশদ্বার এবং এখানেই তারা জীবনের প্রথম প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা দেয়। এই পরীক্ষা যাতে তাদের অতিরিক্ত বোঝা না বাড়ায়, তা দেখার দায়িত্ব কি পর্ষদের নেই?
প্রসঙ্গত, সি বি এস ই এবং আই এস সি দুটি বোর্ডেই সব রকম পরীক্ষা (প্র্যাকটিকাল সহ) নিজ কেন্দ্রেই হয়। এমনিতেই প্রাপ্ত নম্বরের বিচারে পর্ষদের অধীনে শিক্ষার্থীরা এই সব বোর্ডের তুলনায় পিছিয়ে থাকে, আর তাই ভাল ভাল কলেজগুলিতে অনেক সময়েই ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। পর্ষদের এই সিদ্ধান্তে তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি এই ব্যবস্থা একান্তই চালু করতে হয়, আগে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলির ল্যাবরেটরিগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করা হোক।
অভিজিৎ বিশ্বাস ও আরও ষোলো জন নাগরিক। কলকাতা-৪
|
উইলিয়ম কেরি: ২৫০ বছরেও ভুলেই থাকব? |
শ্রীরামপুর অতি প্রাচীন জনপদ। এখানে দ্রষ্টব্য যা কিছু আছে, তার মধ্যে উইলিয়ম কেরির সমাধিস্থল বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। অথচ তার বর্তমান ভগ্নদশা অত্যন্ত করুণ। সেই প্রসঙ্গেই এই চিঠির অবতারণা।
উইলিয়ম কেরির কর্মজীবন ছিল বহুধাব্যাপৃত। তাঁর অপরিসীম কৌতূহল, অদম্য উৎসাহ এবং অকল্পনীয় অধ্যবসায়ের গুণে তিনি যা করেছেন, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। বাংলা হরফ নির্মাণ, প্রথম বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ, প্রথম বাংলা গদ্যগ্রন্থ প্রকাশ প্রভৃতি সব কিছুর অন্তরালেই ছিল তাঁর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ। আর এই সব কর্মকাণ্ডে তিনি যখন সম্পূর্ণ নিমজ্জিত, সেটা বাংলা গদ্যের অঙ্কুরোদ্গমের যুগ। ইংরেজি ১৮০০ সাল। বিদ্যাসাগরের জন্ম তার বারো বছর পর।
এ হেন পথিকৃৎ কর্মবীরের সমাধিস্থলটির আশু সংস্কার প্রয়োজন। পুরাতত্ত্ব বিভাগ অথবা স্থানীয় পুরসভা এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে তাঁর সার্ধদ্বিশততম জন্মবর্ষে তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান জানানোর প্রক্রিয়াটি যথাযথ হয়।
শৈলেনকুমার দত্ত। শ্রীরামপুর, হুগলি |
|