তৃণমূল ও পুলিশের বিরুদ্ধে যৌথ সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার বিকেলে কেতুগ্রাম থানা থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে সভা করল সিপিএম। ঝাঁটা, বঁটি, লাঠি নিয়ে সেই সভার সামনে হাজির থাকলেন মহিলারা। সভা চলাকালীনই কেতুগ্রামের আইসি-র কাছে স্মারকলিপি দেন সিপিএম নেতারা।
সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দাপটে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি কেতুগ্রাম ১ ব্লকে কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারছে না। আর তাতে মদত দিচ্ছে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ। সিপিএমের কেতুগ্রাম ২ লোকাল কমিটির সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক তমাল মাঝির অভিযোগ, “তৃণমূল আশ্রিত সমাজবিরোধীদের সঙ্গে থানায় বসে আইসি শলা-পরামর্শ করছেন। সাধারণ মানুষ থানায় যেতে ভয় পাচ্ছেন।”
সিপিএম নেতারা অভিযোগ করেন, কিছু দিন আগে স্থানীয় গুড়পাড়া স্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের দিন সকালে তৃণমূলের ‘দুষ্কৃতীরা’ বুথ দখল করতে যায়। স্থানীয় মহিলারা তার প্রতিরোধ করেন। সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের দাবি, “আমাদের নেতাদের নামে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ অভিযোগ করতে গেলে ভয় দেখানো হচ্ছে।” |
গত সোমবার ভাঙড়ে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির থানা ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। সেই সভায় দলের রাজ্য কমিটির সদস্য রেজ্জাক মোল্লা ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে মহিলাদের হাতে ঝাঁটা-খুন্তি তুলে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কেতুগ্রামে এ দিনের সভায় সেই দৃশ্যই দেখা গেল। ঝাঁটা, বঁটি, লাঠি হাতে সভায় এসেছিলেন অনেক মহিলা। বিল্লেশ্বর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে আসা সুলেখা মাঝি, উন্নতি দাসদের বক্তব্য, “তৃণমূল ও পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মহিলাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাই আমরা এই সব হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” সিপিএমের দাবি, এই সভায় হাজার পাঁচেক মানুষের জমায়েত হয়েছিল। যদিও পুলিশের হিসেবে, সভায় প্রায় দু’হাজার মানুষ ছিলেন।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মল্লিকের অভিযোগ, “বীরভূমের এক তৃণমূল নেতার মদতে এলাকায় তোলাবাজি চলছে। তার ভাগ পাওয়ার জন্য কেতুগ্রাম থানার পুলিশ তৃণমূলকে মদত দিচ্ছে।” এ দিন সিপিএমের জোনাল সদস্য তথা কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মৃণালকান্তি সিংহের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আইসি-র কাছে দলীয় দফতর খোলা, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার, পুলিশের নিরপেক্ষতা-সহ ১২টি দাবি-সনদ পেশ করেন।
আইসি অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা নিরপেক্ষ ভাবেই কাজ করছি। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারও করছি। আর দুষ্কৃতীদের থানায় হাজিরা দিতে হয়। তাই হয়তো সিপিএম নেতারা ভুল বুঝে দোষারোপ করছেন।” তৃণমূলের কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডলের আবার দাবি, “কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিপিএম কেতুগ্রামে অশান্তি পাকানোর চক্রান্ত করছে। তাই মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।” কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সিপিএমের সঙ্গে হাত মেলানোর কথা অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেন, “কেতুগ্রামে তৃণমূলই আমাদের নেতাদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। আর কেতুগ্রাম অশান্ত হচ্ছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই।” |