পেটে হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা। পাড়ার চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন ভবানীপুরের বাসিন্দা ৬২ বছরের জয়ন্তীলাল পটেল। তাঁরই পরামর্শে পেটের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখা যায় জয়ন্তীলালবাবুর পেটের একটি অন্যতম প্রধান ধমনী ফুলে বেলুনের মতো হয়ে গিয়েছে। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় অ্যাবডোমিনাল অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম্।
যে কোনও সময়ে ধমনীর ফুলে যাওয়া অংশ ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় জয়ন্তীলালবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে রোগীর অ্যাঞ্জিওগ্রাম করানো হয় মধ্য কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে। বিপদ হয় তখনই। অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার সময়ে অপারেশন থিয়েটারেই ধমনীটি ফেটে যায়। এই পরিস্থিতিতে রোগীকে বাঁচানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তার প্রধান কারণ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। ওই ধমনী দিয়ে প্রতি মিনিটে সাড়ে তিন লিটার রক্ত চলাচল করে, যার সবটাই প্রবল বেগে পেটের গহ্বরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অতি দ্রুত ফেটে যাওয়া অংশ না জুড়লে বা কৃত্রিম ধমনী (গ্রাফ্ট) না লাগালে রোগীর মৃত্যু অনিবার্য।
জয়ন্তীলালবাবুর ধমনী ফেটে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার করা হয়। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ এই অস্ত্রোপচার যাঁরা করেছেন সেই দুই শল্যচিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় ও জয়ন্ত দাস জানান, রোগীর পেটে এতটাই রক্ত ছড়িয়ে পড়েছিল যে ধমনীটি খুঁজে পেয়ে সেটিকে প্রাথমিক ভাবে বন্ধ করাই যাচ্ছিল না। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “আমরা ধমনীর নষ্ট হয়ে যাওয়া অংশ কেটে বাদ দিয়ে সেখানে কৃত্রিম ধমনী বা গ্রাফ্ট লাগিয়ে দিই। ঘণ্টাখানেকের এই অস্ত্রোপচারের পর ফের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল শুরু হয় রোগীর দেহে।” চিকিৎসকরা জানান, অধিকাংশ সময়েই কোনও লক্ষণ থাকে না বলে ধরাও পড়ে না অসুখটি। পেটে ব্যথা হলে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যান করানোর পরে ধরা পড়লেও তখন সাধারণত অনেকটা ক্ষতি হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে পেটের মূল ধমনী, যেটি শিরদাঁড়ার সামনে দিয়ে তলপেটের কাছে দু’টি ভাগ হয়, সেটিই ফেটে গিয়েছিল। এই ধমনীটি দু’ভাগ হয়ে দুই পায়ে রক্ত পৌঁছে দেয়।
অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম প্রসঙ্গে কার্ডিও থোরাসিক সার্জন কুণাল সরকার বলেন, “উচ্চচাপে ভোগেন এমন বয়স্ক রোগীদের অনেকেরই এই অসুখ হতে পারে। অ্যানিউরিজম দেহের অনেক অংশেই হতে পারে। ধমনী ফুলে গিয়ে দেওয়ালটি পাতলা হয়ে যেতে যেতে তা যখন ফেটে যায়, তখন তা খুবই বিপজ্জনক হয়। প্রচণ্ড গতিতে বেরনো রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে বাঁচানো যায় না।”
অস্ত্রোপচারের তিন মাস পরে ফের নিজের ব্যবসার কাজে অফিস যেতেও শুরু করেছেন জয়ন্তীলালবাবু। তাঁর বড় জামাই ধর্মেশ হিমানী বললেন, “উনি যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন এটা আমরা ভাবতেই পারিনি।” |