স্কুলটাই তাঁর সম্পদ।
পড়ুয়ারা তাঁর সন্তানসম। স্কুলের ছেলেরা ফুটবল প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠলে খেলুড়েদের জার্সি কিনে দেন নিজের টাকায়। অসুস্থ হয়ে স্কুলে না এলে বাড়িতে দেখতে সবার আগে যান তিনিই। তিনি, মাধবী মিস্ত্রি ধুবুলিয়া দেশবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষিকা।
তিনি বলছেন, “আসলে কী জানেন, শিক্ষকতা আমার কাছে ঠিক পেশা নয়। এটা আমার নেশা। আর ছাত্রেরা দেবতা। তাদের সন্তুষ্ট করাই আমার কাজ।” স্কুলের কাছেই ছোট্ট এক চিলতে টালির বাড়ি তাঁর। সেখানে দিবা-রাত্র ছেলেমেয়েদের ভিড়। তারা বলে, ‘দিদির কাছে বলব না তো কার কাছে বলব!’
ছাত্র পড়ানোর নেশায় তাঁর আর সংসার পাতা হয়নি। তাতে তাঁর অবশ্য কোনও আপেক্ষ নেই। একাকিত্ব গ্রাস করে না আপনাকে?
— “কিসের একা? স্কুল ভর্তি ছেলে-মেয়ে সবাই তো আমার সন্তান। একা থাকার প্রশ্নই নেই।” |
নদিয়ার প্রত্যন্ত গ্রাম কাঁদোয়ায় জন্ম মাধবীদেবীর। ১৯৮৫ সালে তিনিই গ্রামের মধ্যে প্রথম এমএ পাশ করেন। ছোট থেকেই এলাকায় মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত। ’৭৮ সালে কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শুরু তাঁর জীবন সংগ্রাম। কলেজের পাঠ চুকিয়ে ’৮২ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ-তে ভর্তি। হস্টেল না পাওয়ায় বাড়ি থেকেই যাতায়াত করতেন তিনি। কাকভোরেই কাঁদোয়া থেকে বড়দার সাইকেলে ধর্মদা বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাসে চেপে ৭টা ৭-এর কৃষ্ণনগর লোকালে কলকাতা। রাত ৯টায় বাড়ি ফিরে পরের দিন সেই একই রুটিন।
বাবার কাঁসা-পিতল তৈরির ব্যবসায়, সঙ্গে প্রাথমিক স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষিকার চাকরি। অবশেষে ১৯৯২ সালে ধুবুলিয়া দেশবন্ধু হাইস্কুলে যোগ। এই চাকরি পাওয়াটা অবশ্য সহজ ছিল না। ইন্টারভিউ এর পর তিনি জানতে পারেন তাঁর নাম দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে। অথচ পদ খালি রয়েছে মাত্র একটি। এর পর স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ডিআই অফিসে নালিশ জানান তিনি। স্কুল শিক্ষা দফতরের হস্তক্ষেপে পুরানো তালিকা বাতিল হয়ে যায়। চাকরি পান তিনি।
সেই থেকে স্কুলই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। পথে ঘাটে সারাক্ষণ তাঁকে শুনতে হয় “দিদি কেমন আছেন?” সব্বাইকে চেনেন মাধবীদেবী।
— “তোরা ভাল তো!” এগিয়ে চলেন দশভুজা। |