|
|
|
|
রং-তুলি ভরসা করেই উড়ান সোমনাথের |
অমিতকর মহাপাত্র • এগরা |
সেই ছেলেবেলা থেকেই বড় ক্যানভাসে আঁকার সাধ তাঁর। ইচ্ছে, একটা বৃহত্তর প্রেক্ষিতকে নানা রঙে, নানা ভাবনায় ফুটিয়ে তোলা। তিনি সোমনাথ তামালি। এগরার বউনা গ্রামের বাসিন্দা, চিত্রকলায় স্নাতকোত্তর। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সুযোগ মিলছিল না। অবশেষে ২০০৭ সালে বছর তেইশের এই যুবকের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ল। এগরারই একটি ক্লাব পুজোয় থিম হিসেবে বেছে নেয় সহজ পাঠ। দায়িত্ব নেন সোমনাথ। এরপর থেকেই এগরায় প্রতিমা ও মণ্ডপ সজ্জার ধরনে বদল ঘটে। এককথায় এগরায় থিম-পুজোর অগ্রদূত সোমনাথই। এখন তাঁর হাত ধরেই স্বনির্ভর হচ্ছেন দেশি প্রতিমা শিল্পী এবং এলাকার শিক্ষানবীশ শিল্পীরা।
অসচ্ছল পরিবারের সোমনাথের আঁকার ঝোঁক বরাবারই। তিনি বলেন, “পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কথা বুঝেও মনে মনে এই শিল্পে ঝাঁপ দিয়েছিলাম। নিশ্চিত ছিলাম আনন্দ পাবই।” গত কয়েক বছরে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস, বিড়লা অ্যাকাডেমি, রাজ্য কারুকলা-সহ বিভিন্ন জায়গায় নিজের আঁকা ছবির প্রদর্শনী করেছেন। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অ্যাকাডেমি থেকে পেয়েছেন স্বীকৃতিও। ২০০৯ সালে একটি প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষণ কলেজে স্থায়ী শিল্পশিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন। কাজের ক্ষেত্রে মিশ্রমাধ্যমই তাঁর পছন্দ। কারণ এতে শিল্পকলা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ বেশি। তাঁর অনুভব, ছবির প্রদর্শনী করলে তা মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে পৌঁছয়। সাধারণ গ্রামীণ মানুষের নজরে আসে না। বলেন, “সাধারণ মানুষ আনন্দ পেলে তবেই তো শিল্পীর আনন্দ। আর সেই আনন্দের সন্ধান মেলে বড় ক্যানভাসে।” লোক ও আধুনিক শিল্পের মিশেল ঘটিয়ে তা সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলাই তাঁর লক্ষ্য। |
|
কাজে ব্যস্ত শিল্পী, ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
এ পর্যন্ত এগরা শহরের ছ’টি ক্লাবে মণ্ডপ তৈরি করে ভালই প্রশংসা কুড়িয়েছেন শিল্পী। নেট-এ কাজের নমুনা দেখিয়ে ডাক পেয়েছেন কলকাতা-সহ রাজ্যের কয়েকটি শহরের পুজো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেও। কিন্তু চাকরি আছে, তাই সীমাবদ্ধ থেকেছেন এগরাতেই। একদিকে নন্দলাল বসু, রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, যামিনী রায়দের শিল্পরীতি, গ্রামীণ কুটির শিল্প- দুইই ব্যবহার করেছেন সহজাত দক্ষতায়। শিশুদের মন জোগাতে ব্যবহার করেছেন কার্টুনচিত্রও। ‘গোল্ডেন পাস্ট’ ক্লাবে ‘পাখি সংরক্ষণ’ থিমে দুর্গাকে অস্ত্র ছাড়াই উপস্থাপিত করেছিলেন শান্তির প্রতীক হিসাবে। ক্লাবের সম্পাদক শুভেন্দু মিশ্র বলেন, “থিম নিয়ে ভয় ছিল। কিন্তু সোমনাথই আমাদের খ্যাতি দেয়।” এগরার ক্লাব সমন্বয়ের সম্পাদক অরূপরতন বেরা বলেন, “আমাদের থিম ছিল ‘বাউল’। বাজেট সমস্যা থাকলেও অসাধারণ কাজ হয়েছিল। সেই মণ্ডপই আমাদের পরিচিতি দিল।” তবে শুরুর দিনগুলি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জের। সোমনাথ বলেন, “পুজোর উদ্যোক্তাদের বোঝানো, আস্থা পাওয়া শিল্পকর্মের থেকেও কঠিন ছিল।”
এগরা দিঘা মোড় সর্বজনীনের কর্মকর্তা বিশ্বজ্যোতি মাইতি এবং নবরূপ ক্লাবের সম্পাদক বলেন, “সোমনাথবাবুর হাতের ছোঁয়ায় ভিড় আমাদের দিকেই বেশি। সাবেক পুজোগুলো গত কয়েক বছরে আকর্ষণ হারিয়েছে। এই শিল্পীই এগরাকে অন্য পুজো উপহার দিয়েছেন।”
স্নাতকোত্তর পাঠরত শিল্পী এগরারই শুভাশিস শী, প্রতিমাশিল্পী আলোক কুমার দে, হিমাংশু পাত্র ও চিত্রশিল্পী অরুণ জানারা বলেন, “পৃথক ভাবে আমরা হয়তো কাজ করছিলাম। কিন্তু, সোমনাথই আমাদের থিমভিত্তিক কাজের পথ প্রশস্ত করেছেন।” সোমনাথও বলেন, “প্রতিমাশিল্পী, সহ-শিল্পী এবং পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া থাকলে কাজে সুবিধা হয়।” এগরায় সোমনাথ এ বার করছেন দুটি মণ্ডপ। একটির থিম ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ”, অন্যটি ‘তালপাতার সেপাই’। এগরার মানুষ এখন অপেক্ষায় এ বার কী নতুন উপহার দেবেন সোমনাথ। |
|
|
|
|
|