মধুবনীর ‘মৃত’ ছেলে ধরা পড়ল মেহরৌলিতে
যে নিখোঁজ ছাত্রের ‘মৃতদেহ’ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল হয়ে উঠল বিহারের মধুবনী, যাকে ঘিরে গড়ে ওঠা আন্দোলনে পুলিশের গুলি চলল, মারা গেল দুই ছাত্র, যাকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে বন্ধ পালন করল বিরোধীরা, সেই প্রশান্ত ঝা-এর খোঁজ মিলল দিল্লির মেহরৌলিতে। বহাল তবিয়তেই প্রেমিকাকে নিয়ে ১ মাস ৯ দিন সে কাটিয়ে দিয়েছে সেখানে। ডিজিপি অভয়ানন্দ আজ বলেন, “মেহরৌলি থানায় পুলিশ হেফাজতে থাকা প্রশান্তের সঙ্গে মধুবনির পুলিশ সুপার ফোনে কথা বলেছেন। তাদের রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে ছ’জনের দলকে আজ দিল্লিতে পাঠানো হচ্ছে।” উল্লেখ্য, মধুবনীর ঘটনার প্রেক্ষিতে, জনতার দাবি মেনে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এই নিখোঁজের ঘটনার সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। পুলিশের গুলি চালনার ঘটনা ও দুই ছাত্রের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার।
কিন্তু কী ভাবে সন্ধান মিলল প্রশান্তর? বিহার পুলিশের কর্তারা জানিয়েছেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর মধুবনীর সদর থানা এলাকার নবম শ্রেণির ছাত্র, ১৭ বছরের প্রশান্ত কুমার ঝা তার বান্ধবীকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। তার কয়েকদিন পরে একটি মুণ্ডহীন দেহ পাওয়া যায় ওই সদর থানা এলাকাতেই। তার বাড়ির লোকেরা সেটাকে প্রশান্তের বলে দাবি করে। কিন্তু পুলিশ জানায়, মৃত যুবকের বয়স ২৬-২৭। পরিবারের লোকেরা তা মানতে রাজি হয়নি।
বন্ধে সুনসান পটনার রাস্তা। ছবি: পিটিআই।
ওই দেহটি প্রশান্তর বলে দাবি করে দেহটি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে তার পরিবার। জেলাশাসকের দফতরে ধর্নায় বসেন প্রশান্তর মা ও ঠাকুমা। ক্রমশ তাদের সঙ্গে জুটতে থাকে স্থানীয় জনতা ও ছাত্ররা। মারমুখী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। তাতে জখম হয় তিনজন। পরে হাসপাতালে দু’জনের মৃত্যু হয়। মধুবনী আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। এই ঘটনার জেরে আজ বিরোধীরা রাজ্য জুড়ে বন্ধেরও ডাক দেয়।
ডিজিপি এ দিন জানান, প্রশান্ত তার বান্ধবীকে নিয়ে মধুবনী থেকে দ্বারভাঙায় যায়। সেখান থেকে তারা যায় মুজফফ্রপুর। ইতিমধ্যে প্রশান্ত তার মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে দেয়। মুজফফ্রপুর থেকে তারা রাঁচি যায়। সেখানে কয়েকদিন কাটিয়ে কাটিয়ে তারা জম্মুর ট্রেন ধরে। জম্মু থেকে চলে আসে দিল্লিতে। মেহরৌলিতে তারা একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। পরশু প্রশান্ত ও তার বান্ধবীকে একটি দোকানে কথা বলতে শুনে বিহারেরই এক ব্যক্তির সন্দেহ হয়। তিনি ১০০ নম্বরে ডায়াল করেন। ফোন পেয়ে মেহরৌলি থানার পুলিশ সেখানে পৌঁছলে ওই ব্যক্তি তাঁর সন্দেহের কথা পুলিশকে জানান। পুলিশ তাদের আটক করে জেরা শুরু করে। দিল্লি পুলিশ বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের চিহ্নিত করতে দু’জনের ছবি নিয়ে এক পুলিশ অফিসার কালই দিল্লি পৌঁছন। দিল্লি পুলিশ প্রশান্তর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। দিল্লির পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা হয় বিহারের ডিজি অভয়ানন্দেরও। মেহরৌলির ওসি-র মোবাইলেই মধুবনীর পুলিশ সুপার রঞ্জিৎ কুমার মিশ্র প্রশান্ত এবং তার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলেন। ছবি মিলে যাওয়া এবং কথা বলার পরে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে একশো ভাগ নিশ্চিত হয়। পুলিশ সুপার আজ বলেন, “ওদের নিয়ে আসার জন্য ছ’জনের পুলিশের একটি দলকে আজ দিল্লি পাঠানো হয়েছে। মেহরৌলি থানার পুলিশকে ছেলেটির বাড়ির ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে।”
প্রশান্তকে জীবিত খুঁজে পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। তবে তিনি আজ বলেন, “গুলি-কাণ্ডের তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করানো হবে। আজ হাইকোর্টের কাছে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নাম চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।” তবে মধুবনীর ঘটনা পুলিশ যে ভাবে মোকাবিলা করেছে তাতে অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, পুলিশ যদি প্রথম থেকেই বিষয়টিকে যথাযথ ভাবে মোকাবিলা করত তাহলে জল এত দূর গড়াতই না।
তবে রাজ্য-রাজনীতিতে নীতীশের বিরোধীরা এই ‘সুযোগ’ ছাড়েনি। মধুবনীর ঘটনার প্রতিবাদে ১২ ঘন্টার বিহার বন্ধের ডাক দেয় বাম দলগুলি। তাদের সমর্থন করে লালুপ্রসাদের আরজেডি ও রামবিলাসের লোক জনশক্তি পার্টি।
বনধের জেরে এক্সপ্রেস ট্রেনগুলি বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার মধ্যে রয়েছে পূর্বা এক্সপ্রেস, লোকমান তিলক এক্সপ্রেস, পটনা-জনশতাব্দী এক্সপ্রেস, হাওড়া-গয়া এক্সপ্রেস, শ্রমজীবী এক্সপ্রেস, জনতা এক্সপ্রেস এবং অমৃতসর এক্সপ্রেস প্রভৃতি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.