বিনোদন: মন্তব্য প্রত্যাহার না করলে নিষিদ্ধ করার হুমকি
ববের সঙ্গে এ বার সরাসরি সংঘাতে প্রযোজকরা
‘বব বিশ্বাস’-এর পরবর্তী ডায়লগ হতেই পারে, “নমস্কার। আপনি প্রডিউসর, এক মিনিট।”
তিনি এখন টলিউডের ব্যস্ততম তারকা। বহু আলোচিতও। তাঁর ডেটের ডায়েরিতে একটি পাতাও খালি নেই। ডিসেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত।
সারা ভারতের লোককে ভয় পাইয়ে দেওয়ার পর ‘বব’ বোধহয় এ বার মুখোমুখি তার চরম শত্রুদের। কারা? টলিগঞ্জের ভুঁইফোড় প্রযোজকরা।
গত সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর একটি বিবৃতির জন্য ইমপা (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স)-এর প্রযোজক-বিভাগ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে ওই বিবৃতি প্রকাশ্যে প্রত্যাহার করতে হবে বলে চিঠি পাঠিয়েছে। ইমপা সূত্রে এমনও শোনা যাচ্ছে, শাশ্বত যদি ক্ষমা না চান তবে তাঁকে ফিল্মে নিষিদ্ধ করা হবে। টেলিভিশনে অবশ্য তিনি কাজ করতে পারবেন। কারণ টেলিভিশন ইমপা-র আওতায় পড়ে না।
প্রযোজক ও অভিনেতাদের রেষারেষি নিয়ে গত সোমবার শাশ্বত আরও অনেক কথার সঙ্গে বলেছিলেন, “টালিগঞ্জে এখন কেউ মাছের ব্যবসা, কেউ অন্য কিছু ব্যবসা করে প্রযোজক হচ্ছেন।” এই বিবৃতিটিই হয়ে উঠেছে বিস্ফোরক।
“শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় আজকের এই শাশ্বত হয়েছেন, কারণ প্রযোজকরা তাঁকে কাজ দিয়েছেন। তাঁর সংসার চলে সেই প্রযোজকদের টাকায়। কী স্পর্ধায় তিনি তাঁদের এতটা হীন চোখে দেখছেন। আগেও এই রকম ভাবেই ইমপা নাম করা দু’জন অভিনেতাকে নিষিদ্ধ করেছিল। দু’জনকেই ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। তবে তাঁরা আবার কাজ করতে পেরেছিলেন। শাশ্বতকে ক্ষমা চাইতেই হবে নয়তো তাঁকে এর জন্য যথেষ্ট ভুগতে হবে,” বলছেন ইমপা-র প্রযোজক বিভাগের চেয়ারম্যান কৃষ্ণা দাগা।
ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মতো সমস্ত বড় প্রযোজকই ইমপা-র অর্ন্তগত। তাই শাশ্বতকে যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে টেকনিক্যালি তিনি এঁদের কারও সঙ্গে কাজ করতে পারবেন না।
দুই রূপে শাশ্বত। বব বিশ্বাস (বাঁ দিকে) এবং হাত কাটা কার্তিক।
শাশ্বত সম্প্রতি ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের সঙ্গে ঋত্বিক ঘটকের জীবন অবলম্বনে তৈরি ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র শু্যটিং শেষ করেছেন। শাশ্বত সেখানে ঋত্বিকের ভূমিকায়। শুধু এই ছবিই নয়। ভেঙ্কটেশ প্রযোজনার আরও দু’টি ছবির সঙ্গে তিনি যুক্ত। একটি সন্দীপ রায়ের ‘যেখানে ভূতের ভয়’। অন্যটি অপর্ণা সেনের ‘গয়নার বাক্স’। শাশ্বতর উপর নিষেধাজ্ঞার সম্ভাবনা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের মহেন্দ্র সোনির কাছ থেকে,‘ নো কমেন্টস’ ছাড়া আর কোনও বিবৃতি পাওয়া যায়নি। শুধু এই দু’টো ছবি নয়। অনীক দত্তর পরের ছবি ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ ও কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেয়ার অফ স্যার’ পড়বে মহাফাঁপরে।
সোমবার দুপুরে এই প্রতিবেদকের কাছেই পুরো ঘটনাটা শোনেন শাশ্বত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভুঁইফোড়’ প্রযোজকে ভরে গেছে টালিগঞ্জ। এরা একটা ছবি করেন। তার পর হাওয়া। টিডিএস সার্টিফিকেট নিতে গিয়ে দেখবেন এঁদের অফিস উঠে গেছে। তা ছাড়া ওঁদের যদি মাছের ব্যবসায়ী শব্দ দু’টি নিয়ে আপত্তি থাকে তা হলে আমি বলব, ওঁরা কিন্তু মাছ ব্যবসায়ীদেরই অপমান করছেন। ওটা মাছ কেন হিরে ব্যবসায়ীও হতে পারত। এখানে আমি ভেঙ্কটেশ বা বড় প্রযোজকদের টানব না। ওঁরা ছবি নিয়েই ব্যবসা করেন। আমার ক্ষোভ সেই ভুঁইফোড় প্রযোজকদের বিরুদ্ধে, যাঁরা ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করছেন।”
কিন্তু কেরিয়ারের এত ভাল সময় যদি নিষিদ্ধ করা হয়, সেই প্রসঙ্গে ‘বব বিশ্বাস’ কী বলবেন?
“যা পরিস্থিতি দেখছি, এখন তো বব বিশ্বাসের নিজেকে গুলি করতে ইচ্ছে করছে,” নিজস্ব ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে বললেন শাশ্বত।
কিন্তু শাশ্বত যাই বলুন, কহানি-র ‘ইনসপেক্টর রানা’ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মনে করছেন শাশ্বত অতটা আক্রমণাত্মক না হলেই পারতেন। “অপুদা আমার ভীষণ ভাল বন্ধু। কিন্তু সে দিন খবরটা পড়ার পর মনে হয়েছিল ওঁর বক্তব্যটা সামান্য হলেও একপেশে। প্রযোজকরা কোথা থেকে টাকা আনবেন সেটা নিয়ে মাথা ঘামানো তো আর্টিস্টদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না,” বললেন পরম।
পরম তাঁর বক্তব্য জানালেও আর্টিস্টস ফোরাম কিন্তু সর্বসম্মত ভাবে শাশ্বতর পাশে দাঁড়াচ্ছে। তাদের সচিব, সব্যসাচী চক্রবর্তীর বক্তব্য, “আমি বুঝতেই পারছি না, ইমপা, যা কি না ফিল্ম প্রযোজকদের সংস্থা, তারা কেন এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। শাশ্বত যা বলেছিলেন তা তো টিভি প্রযোজকদের প্রসঙ্গে। তা ছাড়া আর্টিস্টদের পেট চলে প্রযোজকদের টাকায়। সেই টাকা তাঁরা অন্য ব্যবসা থেকে বানিয়েছেন। আর সেই থেকেই তাঁরা টাকা লগ্নি করেন ফিল্ম কি টিভিতে। শাশ্বত যদি বলেন ওঁদের মাছের ভেড়ির ব্যবসা আছে, তা হলে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে প্রযোজকরা ব্যবসায়ী। কাউকে ব্যবসায়ী বলাটা তো খারাপ কথা নয়। আর তা ছাড়া শাশ্বত এটা একদম ঠিক বলেছেন যে প্রযোজকদের সংসার শুধু ছবির টাকায় চলে না। শিল্পীদের সংসার কিন্তু শুধু অভিনয়ের জোরেই চলে। আমাদের অন্য কোনও জীবিকা নেই।”
আর্টিস্ট ফোরামের যুগ্মসচিব দেবযানী চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এটাকে প্রযোজকদের দাদাগিরি হিসেবেই দেখছেন। তাঁর বক্তব্য, “অপুদা যা বলেছেন তা একদম ঠিক। আমরা গণতন্ত্রে বাস করি। সবার নিজের মত প্রকাশের অধিকার আছে। আমাদের তো মনে হচ্ছে অপুদাকে আক্রমণ করে আর্টিস্টদের ভয় দেখানো হচ্ছে। আনন্দবাজারের ওই একই প্রতিবেদনে ভেঙ্কটেশের মহেন্দ্র সোনি তো বলেছেন, আর্টিস্টরা সব সময় হঠকারী ও একতরফা সিদ্ধান্ত নেন। ওঁকে এ রকম কথা বলার অধিকার কে দিল? যদি আর্টিস্টরা ওঁকে জিজ্ঞেস করেন তখন উনি উত্তর দিতে পারবেন তো?” ওই প্রতিবেদনেই ডব্লুএটিপি-র মুখপাত্র পার্থ কর আর্টিস্ট ফোরামের নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কার্যনির্বাহী সভাপতি বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, সহ-সভাপতি মিঠুন চক্রবর্তী আর সচিব সব্যসাচী চক্রবর্তী। এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে দেবযানীর জিজ্ঞাস্য, “পার্থবাবু কি এঁদের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন?” এই চাপানউতোরে পরিস্থিতি যে রকম অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে, শাশ্বতকে এই চিঠি পাঠানোর পর প্রযোজক ও শিল্পীদের সংঘাত আবার নতুন করে মাথা চাড়া দেবে। দেখার এটাই যে, ‘বব বিশ্বাস’ নমস্কার, এক মিনিট বলে ক্ষমা চান, নাকি বন্দুক বের করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.