নৈহাটিতে ডাকাতি
দেখে গিয়েছিল ডাকাতরা, বলল গাড়িচালক
ডাকাতি করার আগে একাধিকবার এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখেছিল দুষ্কৃতী-দল। কোন রাস্তা দিয়ে পালাবে, কোথায় রাখা থাকবে গাড়িছকা ছিল সব কিছুই। কিন্তু ডাকাতি করে পালানোর সময়ে রিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে গাড়ি বিগড়ে যাওয়াতেই ‘বিভ্রাট’। শনিবার সন্ধ্যায় নৈহাটিতে সোনার দোকানে ডাকাতির পরে জনতার হাতে ধরা পড়া সেই গাড়িচালককে জেরা করে এমনই তথ্য জানা গিয়েছে বলে দাবি করল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ। কিন্তু রবিবার রাত পর্যন্ত ওই ঘটনায় আর কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুজোর মুখে ওই ডাকাতির পরে এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় ধৃত রাকিবুল ইসলাম তাদের জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের গাড়িটি সে-ই চালাচ্ছিল। পেশায় ভাড়াগাড়ির চালক রাকিবুলের বাড়ি অশোকনগরের ঈশ্বরীগাছায়। শনিবার অশোকনগর থেকে ‘মুখচেনা’ সাত জন তার কাছ থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়েছিল নৈহাটি যাবে বলে। ওই দিন দুপুর ৩টে থেকে নৈহাটি স্টেশনের কাছেই ঠাকুরপাড়া রোডের ওই এলাকায় একাধিক বার তারা গাড়ি নিয়ে চক্কর কাটে। রাকিবুলের দাবি, দুষ্কৃতীরা দেখে নিতে চেয়েছিল ওই রাস্তায় লোকজন কেমন থাকে, পুলিশের টহলদারি রয়েছে কি না, কোন পথ ধরে পালাবে বা গাড়ি কোথায় রাখবে। রবিবার ব্যারাকপুর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ধৃতকে ৩ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা-প্রধান কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ধৃতের বিরুদ্ধে ডাকাতি-সহ নানা দুষ্কর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বাকিদের খোঁজে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।”
ঠাকুরপাড়া রোডে বেশ কিছু সোনার দোকান রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ আগ্নেয়াস্ত্র, ভোজালি নিয়ে দুষ্কৃতীরা একটি সোনার দোকানে ঢোকে। দোকানের মালিক শেখর পালের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে, তাঁকে মাথা নিচু করে বসিয়ে রেখে তারা গয়না লুঠ করে। দোকানে থাকা সাত-আট জন ক্রেতার কেউই বাধা দিতে সাহস করেননি। লুঠপাট চালিয়ে দুষ্কৃতীরা হেঁটে বেরিয়ে যেতেই শেখরবাবু এবং তাঁর কর্মচারীরা চিৎকার শুরু করেন। ভিড় জমে যায় দোকানের সামনে। দুষ্কৃতীরা দোকান তাক করে বোমা ছুড়ে গা ঢাকা দেয়। ভয়ে লোকজন বিভিন্ন দোকানে ঢুকে পড়েন। এক পথচারী বোমায় জখম হন।
শনিবার ডাকাতির পর ঘটনাস্থলে। —নিজস্ব চিত্র
কিছু ক্ষণের মধ্যেই ডাকাতির কথা এলাকায় ছড়িয়ে যায়। খবর পায় পুলিশও। দুষ্কৃতীরা তাদের গাড়িটি রেখেছিল রেল লাইনের অন্য পারে, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র কলেজের কাছে। চম্পট দেওয়ার সময়ে বিজয়নগর এলাকায় একটি রিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে যাওয়াতেই বিকল হয় তাদের গাড়ি। ডাকাতির খবর পেয়ে দলবল নিয়ে ওই এলাকার তালপুকুর রোডে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সনৎ দে। বিকল গাড়ি থেকে দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নামতে দেখে সনৎবাবুরা প্রথমে এগোতে সাহস করেননি। দুষ্কৃতীরা দ্রুত একটি ট্রেকার থামিয়ে তাতে উঠে পড়ে। কিন্তু পিছিয়ে পড়ায় এবং হাতে আগ্নেয়াস্ত্র না থাকায় রাকিবুলকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন সনৎবাবুরা।
পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীরা ট্রেকার-চালকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ধরে তাঁকে অশোকনগরের দিকে দ্রত গতিতে গাড়ি চালাতে বাধ্য করে। ইতিমধ্যে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি শুরু করে দেয়। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সাহেব কলোনি মোড়ে পুলিশ ট্রেকারটি আটকানোর চেষ্টা করে। তখন পুলিশকর্মীদের দিকে তিনটি বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। বোমায় জখম হন চার পুলিশকর্মী ও এক পথচারী। দুষ্কৃতীরা ট্রেকার থেকে নেমে একটি মাঠের মধ্যে দিয়ে পালায়। সেই সময়ে এক জনের হাত থেকে গয়নাভর্তি ব্যাগ পড়ে যায়। পুলিশ সেই গয়না উদ্ধার করেছে। জখমদের নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এক পুলিশকর্মীর ডান চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁকে কলকাতার নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করানো হয়েছে।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্ভুক্ত হয় নৈহাটি। এলাকার ব্যবসায়ীদের অনেকেরই বক্তব্য, “ঠাকুরপাড়া রোডে বছর কয়েক আগে দু’দল দুষ্কৃতীর মধ্যে বোমাবাজিতে এক পথচারী জখম হন। কিন্তু ডাকাতি এই প্রথম। তা-ও আবার কমিশনারেট হওয়ার পরে, ভরসন্ধ্যায়। আমরা চিন্তায় রয়েছি।” পক্ষান্তরে পুলিশের একাংশের প্রশ্ন, দুষ্কৃতীরা যখন বোমা মারল, কেন আত্মরক্ষার খাতিরে তাদের দিকে গুলি চালালেন না পুলিশকর্মীরা? গোয়েন্দা-প্রধানের জবাব, “পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরার সব রকম চেষ্টা করেছিল। আচমকা বোমা ছুড়ে দুষ্কৃতীরা অন্ধকারে মাঠের মধ্যে দিয়ে পালায়।
ওই এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টিও আমাদের মাথায় রয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.