দুয়ারে দুর্গাপূজা, জমে উঠেছে বাজার
বদ্বীপের রাধাবাজারের অস্থায়ী দোকানের বছর আঠারোর মালিকের তখন হিমশিম অবস্থা। শনিবারের সন্ধ্যায় জনা চারেক মহিলার একটি দল ওই দোকানে হালফিলের পোশাক কেনাকাটা করতে হাজির হন। কেউ টাপুর-টুপুর তো কেউ বা বাহা। কারও আবদার পাগলু-২। সব মিলিয়ে নাজেহাল তরুণ ওই দোকান মালিকের। অবস্থা সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত তাঁর বাবা অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী ধ্রুব রায়কে বাড়ি থেকে চলে আসতে হয়।
কালো রঙের এক্সক্লুসিভ শার্টের খোঁজে নবদ্বীপের নামী-দামি দোকান খুঁজে না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন কলেজ পড়ুয়া আকাশ সাহা। এক বন্ধুকে সঙ্গী করে আড়াই ঘন্টা ধরে মোটরবাইকে করে বিভিন্ন দোকান চষে হতাশ হয়ে বলেন, “যে দোকানেই যাচ্ছি সকলের এক কথাছিল, কিন্তু বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আসলে আমারই ভুল হয়েছিল। এত দামের জামাও যে তাড়াতাড়ি উবে যাবে বুঝতে পারিনি। তাহলে কবেই কিনে রাখতাম।”
শনিবার বেশি রাতে একের পর এক নম্বরে নিজের মোবাইল থেকে ফোন করছিলেন নবদ্বীপের পোড়ামাতলার রেডিমেড পোশাক ব্যবসায়ী তপন পাল। তাঁর কথায়, “মেয়েদের ফ্যান্সি পোশাকের স্টক শেষ। তাই মহাজনদের ফোন করে চেষ্টা করছি। পুজোর কেনাকাটার শেষ বাজারে যদি কিছু নতুন পোশাক কলকাতা থেকে আনতে পারি।”
বহরমপুরে ভিড় পুজোর বাজারে।
এ ভাবেই জমে উঠেছে পুজোর বাজার। পাট ভিজুক না ভিজুক, দুয়ারে দুর্গাপুজো। তাই পুজোর আগে শেষ শনি-রবিবারের কেনাকাটায় মানুষের ঢল নামে। ব্যবসায়ীদের কথায়, হাতে আর সময় নেই। তাই স্বাভাবিক কারণেই চেনা ছন্দে ফিরেছে পুজোর বাজার। দ্রুত কাটছে মন্দা। শহুরে চাকরিজীবী বা উচ্চবিত্তের পাশাপাশি বাজারে এখন ভিড় করেছেন গ্রামের ক্রেতারাও। পাইকারি, খুচরো সর্বত্রই আশাতীত ভিড়। রাধাবাজারের ফুটপাথের এক মাসের অস্থায়ী দোকানদার ধ্রুব রায়, অন্য সময়ে বাজারে মাছ বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, “গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রিবাটা ভালই হয়েছে। গড়ে ৪-৫ হাজার টাকার কেনাবেচা হচ্ছে। প্রতিটি পোশাকে দাম বাড়লেও মানুষের কেনাকাটায় ঘাটতি নেই। শুরুর দিকে গ্রামের ক্রেতাদের দেখা না মিললেও এখন কিন্তু তাঁদেরই ভিড় বেশি। বাজারে বেচাকেনার চাপ রয়েছে যথেষ্ট।” প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যবসায় ঢেলেও নিশ্চিন্ত হাসি হেসে বলেন, “লাভ এ বার ভালই হবে।”
বাজারে একটু অন্য রকম পোশাক বিক্রি করেন তপনাববু। তিনি বলেন, “আধুনিক পোশাকের যে এত চাহিদা হবে, আমি অনুমান করতে পারিনি। টপ, স্কার্ট, জ্যাকেট, ধুতি, প্যান্ট-সহ সিরিয়াল-সিনেমায় যে ধরনের পোশাক দেখা যায়, তেমন কিছু পোশাক সাহস করে তুলেছিলাম। ৩০০ থেকে ৮০০ টাকা দামের মধ্যে ওই পোশাক কিন্তু দেদার বিক্রি হয়েছে। পুজোর আগে ফের কলকাতায় মাল আনতে ছুটতে হবে বুঝতে পারিনি।” রেডিমেড পোশাক ব্যবসায়ী দীপক সাহা বলেন, “এ বার কার্যত অগস্ট থেকে পুজোর কেনাকেটা শুরু হয়েছে। সেই হিসেবে দোকানে দোকানে প্রথম দিকে জমাট ভিড় চোখে পড়েনি। তাই অনেকেই মনে করেছেন পুজোর বাজার মন্দা। এখন কিন্তু আর সে কথা বলা যাবে না। পুজো যত এগিয়ে আসছে, কেনাকাটায় ভিড় বাড়ছে।”
কৃষ্ণনগরে পুজোর বাজার।
এ দিকে সোমবারের তর্পণকে ঘিরেও রবিবার সকাল থেকেই দশকর্মা দোকানগুলিতে উপচে পড়া ভিড়। চাহিদা তুঙ্গে তিল, কুশের। ভালই বিক্রি হচ্ছে পুরোহিত দর্পণও। তর্পণ করার ক্ষেত্রে পুর-নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্য দিতে উদ্যোগী হয়েছে নবদ্বীপ পুরসভাও। তর্পণ উপলক্ষে নবদ্বীপের বিভিন্ন ঘাটগুলিতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তারা।
তবে মহালয়ার পরে পুজোর বাজারে যে জনবিস্ফোরণ তৈরি হবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত রাধাবাজারের এক নামী দোকান মালিক নেপাল সাহা। তিনি বলেন, “জিনিসের দাম বেড়েছে, ফলে হিসেব মতো লাভ কমেছে। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা যে পরিমাণে বেড়েছে, তাতে ভারসাম্য তৈরি হয়েছে। বাজার এ বার প্রথম থেকেই বেশ ভাল। আমাদের ধারণা, মহালয়ার পরের শেষ কটা দিন বাজারে চূড়ান্ত রূপ দেখা যাবে।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.