৩০ অগস্ট এবং ৫ সেপ্টেম্বর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত অদিতি মুখোপাধ্যায় ও কল্যাণ রুদ্রর জল ব্যবহার সংক্রান্ত লেখাগুলির প্রেক্ষিতে লিখছি। শ্রীমুখোপাধ্যায়ের লেখাটি মূলত অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নেওয়া। কিন্তু শ্রীরুদ্রর লেখা মূলত পরিবেশ সম্পর্কে খানিকটা তথ্য ও খানিকটা আবেগ থেকে লেখা।
বর্ধমান জেলার পূর্ব ভাগ কৃষিকাজের জন্য বিখ্যাত। ভাতার তার মধ্যে অন্যতম। স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিরেক্টরেটের তথ্য অনুসারে ১৯৯০ থেকে ২০১০-এ কেবল এই ব্লকেই ভৌম জলস্তরের সীমা ১০.৩৯ মিটার থেকে হয়েছে ১৮.০২ মিটার। অর্থাৎ মাটির নীচের জলস্তর গড়ে অন্তত ৮ মিটার নীচে নেমে গেছে। চাষিরা বাধ্য হচ্ছেন তাঁদের পাম্পসেটটিকে খানিকটা গর্ত করে বসাতে। শ্রীমুখোপাধ্যায়ের মত অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে পাম্পসেটের বৈদ্যুতীকরণ প্রয়োজন। পরিসংখ্যান জানায়, ১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ভাতারে স্বল্প গভীরতার ডিজেল ও বৈদ্যুতিক পাম্পসেটের সংখ্যা ৮০০ থেকে বেড়ে ৪০০০ হয়েছে। যদিও মোট সেচের জলের চাহিদার প্রায় ৯১ শতাংশ জল DVC ক্যানেলের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। কেবল মাত্র বোরো চাষের সময় এবং অনির্দিষ্ট ও অনিয়মিত ক্যানেলের জলের জন্য আজ ভাতার ব্লক ভৌমজলহীন অবস্থার সম্মুখীন।
জলের এমন সঙ্কট কেবলমাত্র ভৌমজলের নয়, ভূপৃষ্ঠস্থ জল অর্থাৎ পুকুর, বিল, জলাভূমিরও। পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণের অভাবে এবং কখনও কখনও কৃত্রিম উপায়ে এদের শুকিয়ে কৃষিজমিতে রূপান্তর ঘটছে আকছার। ফলে, ভৌমজল রিচার্জ ক্ষেত্রের হ্রাস পাচ্ছে দ্রুত। |
অথচ ১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ভাতারের খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়েছে ১৪৮৬৪৪ মেট্রিক টন থেকে ১৯৯৩৭২ মেট্রিক টন এবং পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যশস্যের উৎপাদন ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালে হয়েছে ১০৯৬৭০০০ থেকে ১৯১৮৭০০০ টন। অর্থাৎ আমাদের একটি উভয়সঙ্কট: জলের জন্য খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, আর অন্য দিকে অধিক পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে ও অন্য উপায়ে সামগ্রিক ভাবে জলসম্পদের হ্রাস, যা আজ আমাদের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্রের সাস্টেনেবিলিটিকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
অতি সম্প্রতি বর্ধমানের আর্সেনিক দূষিত পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকের একটি হিসেব করা হয়েছে। সেখানে সরকার আর্সেনিক দূষণের মোকাবিলায় গভীর নলকূপ খনন করাকেই প্রাথমিক উপায় হিসাবে ব্যবহার করেছে। অথচ এই ব্লকের মোট ক্ষেত্রফলের ৫ শতাংশ জলাশয় দ্বারা আবৃত। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানতে পারা যায় যে, প্রায় সকল জলাশয় গ্রীষ্মকালেও কমপক্ষে ২ মিটার গভীর জল ধারণ করে। বছরের গড় গভীরতা ২ মিটার হলেও সেগুলির বাৎসরিক জলধারণ ক্ষমতা ৫৬০০০০০ গ্যালন হতে পারে এবং মাথাপিছু দৈনিক ৪০ লিটার চাহিদা ধরলে বাৎসরিক চাহিদার পরিমাণ হয় ১৯০০০০০ গ্যালন। অর্থাৎ ৩৭০০০০০ গ্যালন অতিরিক্ত জল আমরা অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারি। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সকল নদী ‘মিয়েন্ডার’ প্রকৃতির। যার অর্থ ভারতের এই অংশে নদী ভৌগোলিক দূরত্বের কমপক্ষে ১.৫ গুণ বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে।
অর্থাৎ জলসম্পদের অভাব আমাদের এ রাজ্যে অন্তত নেই। অভাব শুধু ঠিক পরিকল্পনার। পশ্চিমবঙ্গের বিপুল ভূপৃষ্ঠস্থ জলসম্পদের সংস্কার, সংরক্ষণ ও বর্ষার অতিরিক্ত জল এই সব অংশে সঞ্চয় করলে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার অর্থ এই জলাশয়ের সংস্কার ও গভীর করার কাজে ব্যবহার করলে, সেই জল গৃহস্থালির ও সেচের কাজে ব্যবহার করা যাবে। রক্ষা করা যাবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভৌমজল, বাস্তুতন্ত্র্র, আমাদের খাদ্য সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক ভিত্তি।
ড. বিপ্লব বিশ্বাস। ভূগোল বিভাগ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, গোলাপবাগ, বর্ধমান
|
লন্ডন থেকে শ্রাবণী বসুর ‘মধু কবিকে ভোলেনি বিলেত, কৃষ্ণভাবিনীকেও’ (২৬-৯) শিরোনামে লেখা প্রতিবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, ‘অক্সফোর্ড জীবনীর অভিধান’ থেকে সংগৃহীত তথ্যানুযায়ী ‘‘কৃষ্ণভাবিনী দাস (১৮৬৪-১৯১৯) ছিলেন মেদিনীপুর জেলার এক হিন্দু জমিদার পরিবারের মেয়ে।’’ বস্তুত, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার অন্তর্ভুক্ত চোঁয়া গ্রামের জয়নারায়ণ সর্বাধিকারীর কন্যা ছিলেন কৃষ্ণভাবিনী। বিদ্যোৎসাহী সম্ভ্রান্ত পরিবারের জয়নারায়ণ সর্বাধিকারী ছিলেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। কৃষ্ণভাবিনীর জন্ম মেদিনীপুরে নয় এবং তাঁর পিতা জয়নারায়ণ সর্বাধিকারী জমিদারও ছিলেন না। বাংলার সারস্বত সমাজে বিতর্কিত এই লেখিকা কৃষ্ণভাবিনী দাস ঊনবিংশ শতকে বাঙালি মেয়েদের মনোভঙ্গি বিকাশের ও নারী জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন।
সন্ধিনী রায়চৌধুরী। প্রাক্তন অধ্যাপিকা, বহরমপুর গার্লস কলেজ |