বিখ্যাত সেই ব্যঙ্গোক্তি। স্যামসাং বা গুগ্লের সঙ্গে পাল্লা দিতে অ্যাপল ৭ ইঞ্চি স্ক্রিনের ছোট্ট আইপ্যাড বানাবে কি না, এই ছিল প্রশ্ন। উত্তরে স্টিভ জোবস বলেছিলেন, “যন্ত্রটা চালাতে হলে ক্রেতাদের তো একটা করে শিরিষ কাগজ ফ্রি দিতে হয়, যাতে তাঁরা আঙুলের ডগাগুলো একটু ছুঁচলো করে নিতে পারেন!” সোজা কথায়, আইফোন নয়, আবার আইপ্যাডও নয়, এমন না ঘর-কা না ঘাট-কা একটা যন্ত্র বানাতে যারপরনাই অনীহা ছিল জোবসের। তিনি চাইতেন, ট্যাবলেট কম্পিউটার ট্যাবলেটের মতোই দেখতে হোক।
জোবসের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর সপ্তাহখানেকের মধ্যে অ্যাপল নিয়ে যে জল্পনাটা ওয়াল স্ট্রিটে ঘুরছে, তা কিন্তু অ্যাপল-স্রষ্টার ওই ব্যঙ্গোক্তির ঠিক একশো আশি ডিগ্রি উল্টো। একাধিক সূত্রের দাবি, আগামী ২৩ অক্টোবর অ্যাপলের কোনও একটা নতুন যন্ত্র আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। এবং সম্ভবত সেটি হল বহুপ্রতীক্ষিত ‘আইপ্যাড মিনি’। যার স্ক্রিনের মাপ কোনাকুনি ৭ থেকে ৮ ইঞ্চি। আইপ্যাডের সাম্প্রতিকতম সংস্করণ আইপ্যাড নিউ-এর স্ক্রিনের মাপই সেখানে ৯.৭ ইঞ্চি!
অ্যাপ্ল অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি। এমনকী তাদের কাছ থেকে ২৩ তারিখে কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রও কোনও সংবাদমাধ্যম পেয়েছে বলে খবর নেই। গোটা ব্যাপারটাই চলছে জল্পনার ওপর। আইপ্যাড মিনি আত্মপ্রকাশ করতে পারে, এমন একটা আভাস বিশেষজ্ঞরা দিয়ে আসছিলেন বেশ কিছু দিন ধরে। এর পর সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি প্রযুক্তি সংক্রান্ত একটি ব্লগেও আগামী ২৩ তারিখ আইপ্যাড মিনি আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে দাবি করা হয়।
এখন প্রশ্ন হল, জোবসের ঘোষিত পথ থেকে কেনই বা সরে আসতে যাবে অ্যাপল? এ ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, আমাজন এবং গুগ্লের যথাক্রমে ‘কিন্ডল ফায়ার এইচডি’ এবং ‘নেক্সাস-৭’ ট্যাবলেট ক্রমশ বাজারে জাঁকিয়ে বসছে। যে স্যামসাংয়ের সঙ্গে অ্যাপলের মামলা-মোকদ্দমা লেগেই রয়েছে, সেই স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি ট্যাবেরও বিক্রি খারাপ নয়। এই অবস্থায় অ্যাপলের লক্ষ্য, আর্থিক লাভ-ক্ষতিটাকে তেমন পাত্তা না দিয়ে ছোট ট্যাবলেটের বাজার দ্রুত ধরে ফেলা। ছোট স্ক্রিন তো আছেই, তার সঙ্গে দামটাও কমবে। ‘কিন্ডল ফায়ার এইচডি’ এবং ‘নেক্সাস-৭’-এর দাম ১৯৯ ডলার। এমনিতে আইপ্যাডের দাম শুরু ৪৯৯ ডলার থেকে। মিনি সংস্করণের দাম কত কমে, তা নিয়ে কৌতূহল যথেষ্ট।
একটি সূত্রে বলা হচ্ছে, জোবস নিজেও তাঁর জীবনের শেষ দিকে ছোট আইপ্যাড তৈরিতে সম্মতি দিয়েছিলেন। স্যামসাংয়ের সঙ্গে মামলার সময়েই অ্যাপলের একটি গোপন অভ্যন্তরীণ ই-মেলের কথা জানা যায়। ওই মেলে অ্যাপলের ইন্টারনেট বিভাগের প্রধান এডি কিউ সংস্থার সব কর্তাকে লিখেছিলেন, অ্যাপলেরও একটি ৭ ইঞ্চির ট্যাবলেট থাকা দরকার। এবং জোবস তাতে উৎসাহ দেন।
আইপ্যাড মিনি সংক্রান্ত খবরটা নাকি ফাঁস করেছেন এশিয়ায় অ্যাপলের কারখানায় ঘুরে আসা কোনও বিশেষজ্ঞ। তাঁর দাবি, পরীক্ষামূলক ভাবে তৈরি হওয়া আইপ্যাড মিনি নেড়েচেড়ে তিনি দেখেছেন। তিনি বলেছেন, “৭.৮৫ ইঞ্চির এই আইপ্যাড একটা দস্তানার মতো হাতে এঁটে যায়। কোটের পকেটেও নেওয়া যায়। বলা যায় আইপ্যাডেরই একটা মোবাইল-সুলভ অভিজ্ঞতা!”
আসলে এই রহস্যের আবহটাই অ্যাপলের ট্রেডমার্ক। আইফোন-৫ আত্মপ্রকাশের আগেই তার ছবি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অ্যাপলভক্তদের কিছুটা উষ্মার মুখেই পড়েছিলেন সিইও টিমোথি কুক। আইপ্যাড মিনি ঘিরে আবার সেই রহস্য। সেটাই উপভোগ করছেন সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে বণিকরা। নজর এখন ২৩ অক্টোবরে! |