সরকারি আইনজীবীরা তাঁর ৮-১০ বছর হাজতবাসের জন্য সওয়াল করতে পারেন। কিন্তু আইন বিশারদদের মতে, রজত গুপ্তের জেল হতে পারে বড়জোর ৬ বছর বা তারও কম সময়ের জন্য।
কারণ হিসেবে তাঁদের যুক্তি, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক গোল্ডম্যান স্যাক্সের পরিচালন পর্ষদে থাকাকালীন সংস্থাটির গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগে প্রাক্তন ম্যাকিনসে কর্ণধার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু রজতবাবুর দীর্ঘ পেশাদারি জীবনের বাকি ইতিহাসটা ‘দাগহীন’। বরং সেখানে অনেকটা জুড়েই রয়েছে সামাজিক ও কর্পোরেট জগতে একাধিক ভাল কাজের দৃষ্টান্ত। যার খতিয়ান নিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর স্বার্থে এগিয়ে এসেছেন মাইক্রোসফ্টের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাক্তন
কর্ণধার কোফি আন্নান এবং বিশ্বের তাবড় ব্যক্তিত্বরা। ৬৩ বছরের এই ভারতীয় বংশোদ্ভূতের
সাজা শোনানোর সময়ে আগামী ২৪ অক্টোবর মার্কিন জেলা আদালতের বিচারপতি জেড র্যাকফ এই বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন বলেই মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
|
রজত গুপ্ত |
যেমন, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ ল-এর রেগুলেটরি ল অ্যান্ড পলিসি বিভাগের অধ্যাপক র্যাশেল বারকোর মতে, রজতবাবুকে ৬ বছর বা তার কম মেয়াদের জন্যই হাজতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন র্যাকফ। কারণ তাঁর মতো কর্পোরেট ব্যক্তিত্বকে প্রকৃত শাস্তি দিতে অনেক দিন ধরে জেলের কুঠুরিতে বন্দি করে রাখা জরুরি নয়। যেখানে রজতবাবুর দীর্ঘ পেশাদারি জীবনের বাদবাকি অধ্যায়গুলি কলঙ্কহীন।
তবে যে মেয়াদের শাস্তিই হোক, তার বিরুদ্ধে রজতবাবু পাল্টা আবেদন জানাতে পারবেন। আর তখনই তাঁকে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে আর্জি জানাতে হবে বলে মনে করছেন বারকো। কারণ রায় দেওয়ার সময় বিবেচিত হবে রজতবাবুর কাছে পাওয়া গোপন তথ্য কাজে লাগিয়ে বেআইনি শেয়ার কেনা-বেচায় কতটা ফায়দা লুটেছেন হেজ ফান্ড সংস্থা গ্যালিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন কর্ণধার শ্রীলঙ্কার রাজ রাজারত্নম। তার ফলে কতটা লোকসান গুনেছে বাজার। এবং গোটা প্রক্রিয়ায় সুবিধা নিতে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতারই বা কতটা অপব্যবহার করেছেন রজতবাবু। যদিও রজতবাবুর আইনজীবীদের দাবি, ‘বিশ্বাসভঙ্গ করেননি তিনি।’ কিন্তু সে ক্ষেত্রে আবার তিনি এই কাজ কেনই বা করলেন, সেটা ঘিরে এখনও যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে বলে মনে করছেন বারকো-সহ আইনজ্ঞদের এক বড় অংশ। তবে রজতবাবুর ১০ বছর জেল হবে, এমনটা কল্পনা করতে পারছেন না বারকো। কারণ, সে ক্ষেত্রে রাজারত্নমের চেয়ে তাঁর মেয়াদ হবে মাত্র এক বছর কম। তাঁর মতে তুলনায় অনেক বেশি দোষী রাজারত্নম। নিউ ইয়র্কের এক বিশিষ্ট অ্যাটর্নি রবি বাত্রাও এ ব্যাপারে একই
সুরে রজতবাবুর কম হাজতবাসের পক্ষে
সওয়াল করেছেন।
প্রসঙ্গত, বাদি-বিবাদি দু’পক্ষের আইনজীবীরাই এই সপ্তাহের মধ্যে রজতবাবুর শাস্তি নিয়ে নিজেদের প্রস্তাব বিচারপতির কাছে জমা
দেবেন। যেখানে ওই শাস্তি কী হওয়া উচিত তা নিয়ে আর্জি জানানোর পাশাপাশি রায় ঘোষণার সময় বিচারপতির কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখা জরুরি সে সব কথাও মনে করিয়ে দেবেন তাঁরা। |