গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এলাকার জন্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানালেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্ব। ত্রিপাক্ষিক চুক্তিতে নেই, এমন অনেক বিষয়েই এখন আরও ক্ষমতার দাবি জানাতে শুরু করেছেন তাঁরা। রাজ্যের তরফে মোর্চা নেতৃত্বকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চুক্তির বাইরে কোনও ক্ষমতা বা স্বায়ত্তশাসন জিটিএ-কে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন দফতর হস্তান্তরের প্রশাসনিক প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত শেষ হয়, তার জন্য পদক্ষেপ করা হবে বলে রাজ্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
শনিবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর মোর্চা নেতারা দাবি করেন, ভূমি-রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতাও তাঁদের দিতে হবে। জিটিএ-র হাতে মোট ৫৯টি দফতর দেওয়ার কথা। এখনও পর্যন্ত ২৬টি দফতর হস্তান্তর হয়েছে। হস্তান্তরের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন মোর্চা নেতা রোশন গিরি। এ ছাড়া জিটিএ এলাকায় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং স্কুল-কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করার ক্ষমতা চেয়েছেন তাঁরা। রোশন গিরি বলেন, “আমরা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন চাই। তাই পাহাড়ে ভূমি-রাজস্ব আদায়েরও দাবি করেছি।”
এত দিন ড্রয়িং অ্যাণ্ড ডিসবার্সমেন্ট অফিসার (ডিডিও) না থাকায় জিটিএ-কে দেওয়া রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ তহবিল থেকে তোলা এবং বিভিন্ন দফতরে তা বণ্টনে সমস্যা হচ্ছিল। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, জিটিএ-র প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিকে ‘ডিডিও’ হিসাবে নিয়োগ করা হবে। আগের হিল কাউন্সিলের কাছ থেকে পরিকল্পনা খাতে ১৫৩.৩২ কোটি টাকা, পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ১৭৩.৪২ কোটি টাকা জিটিএ-এর পাওনা হয়েছে বলে রোশন গিরি দাবি করেন।
রাজ্য চেয়েছিল, জিটিএ-র প্রধান সচিবকেই চেকে স্বাক্ষর করার ক্ষমতা দেওয়া হোক। তাতে আপত্তি জানায় অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের (এজি-র) অফিস। এজি চেয়েছিলেন, জেলাশাসককেই ডিডিও করা হোক। কিন্তু মোর্চা তা মানেনি। ফলে এত দিন ধরে সমস্ত অর্থ খরচের কাজ আটকে ছিল। আলোচনার ভিত্তিতে তা মেটানো গিয়েছে বলে রাজ্যের দাবি। জিটিএ-র প্রধান সচিবকেই ডিডিও হিসাবে মেনে নিয়েছেন এজি। ঘটনাচক্রে, বর্তমান প্রধান সচিব সৌমিত্র মোহনই দার্জিলিঙের জেলাশাসক পদে রয়েছেন।
সরকারের এক মুখপাত্র জানান, রাজ্যের বিভিন্ন খাত থেকে পাহাড়ের উন্নয়নে ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। ডিডিও-র সমস্যা মিটে যাওয়ায় সেই টাকা বণ্টন করতেও আর সমস্যা হবে না। এ ছাড়া স্পেশ্যাল সেন্ট্রাল অ্যাসিস্ট্যান্ট খাতে ৪২ কোটি টাকা এবং অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বরাদ্দ খাতে ২০০ কোটি টাকা পাবে জিটিএ। ফলে উন্নয়নের কাজে জিটিএ-র টাকার সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
বিচারপতি শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্টে তাঁরা যে খুশি নন, এ দিন তা আর একবার স্মরণ করিয়ে দেন মোর্চার নেতা রমেশ আলে। তিনি বলেন, “মুখ্যসচিবকে আমাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছি। আমরা গোর্খা অধ্যুষিত ৩১৯টি মৌজা চেয়েছিলাম। কিন্তু বিচারক শ্যামল সেন কমিটি মাত্র তিনটি মৌজা জিটিএ-র হাতে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।” শ্যামল সেন কমিটির রিপোর্টে মোর্চা নেতৃত্ব খুশি নয় বলেই রাজ্য সরকার একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম’ তৈরি করেছে।” ওই টিমের রিপোর্ট দ্রুত প্রকাশ করার দাবি তুলেছেন মোর্চা নেতৃবৃন্দ। |