শিশু চুরি আর জি করে, প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা
রকারি হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে শয্যা থেকে শিশু চুরি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠল আবার। এ বার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ। চুরি হওয়া শিশুটি উত্তর চব্বিশ পরগনার ইটিন্ডা ঘাটের বাসিন্দা মর্জিনা বিবি-র। ৬ অক্টোবর আর জি কর হাসপাতালে শিশুপুত্রের জন্ম দেন মর্জিনা বিবি। বাড়ির লোকের অভিযোগ, শিশুটির কান্না থামানোর নাম করে অল্পবয়সী একটি মেয়ে তাকে কোলে নিয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যায়। টালা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নিরাপত্তাকর্মী, চিকিৎসক, নার্সদের চোখ এড়িয়ে এক জন কী করে তিন তলায় উঠে শিশু কোলে নিয়ে বিনা বাধায়
মা মর্জিনা বিবি। —নিজস্ব চিত্র
উধাও হয়ে গেলেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে স্বাস্থ্যকর্তা সকলেই দায় চাপিয়েছেন বাড়ির লোকের উপরে। যদিও তাঁরাই আবার বলেছেন, হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গলদ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এত বড় হাসপাতাল, কয়েক হাজার রোগী, নিরাপত্তাকর্মী মাত্র ৭০ জন। তা-ও তিন শিফটের জন্য। আরও নিরাপত্তাকর্মী রাখার টাকা নেই।
তা হলে কী হাসপাতাল থেকে এ ভাবে শিশু উধাও হয়ে যাবে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জবাব, প্রসূতি আর তাঁর বাড়ির লোককেও সতর্ক থাকতে হবে।
অথচ, এ বছরই জানুয়ারি মাসে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এক মহিলার দু’দিনের শিশু চুরি হয়ে গিয়েছিল। তখন স্বাস্থ্যকর্তারা সব হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিছু দিন কড়াকড়িও হয়েছিল। তার পরে ফের ফস্কা গেরো। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “কার্ড দেখে রোগীর বাড়ির লোক ঢোকানো বা বার হতে দেওয়াটাই নিয়ম। কিন্তু সব নিরাপত্তারক্ষী তো সমান নয়। সমান মনোযোগ দিয়ে সবাই ডিউটি করেন না। এত বড় হাসপাতালে কে কী করছে, তা চোখে-চোখে রাখাও সম্ভব নয়। বাড়ির লোককে সতর্ক হতেই হবে।”
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “হাসপাতালে কিছু অসাধু চক্র এই কাজ করে। আমাদের হাসপাতাল আর মেডিক্যাল কলেজগুলি পুরনো দিনের। এগুলির যা আকার বা পরিকাঠামো তাতে রাতারাতি সর্বত্র নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা সম্ভব নয়, সময় লাগবে। তবে শিশুর চুরির ঘটনা কখনই কাম্য নয়, দুর্ভাগ্যজনক। আমি খতিয়ে দেখব।” পরে তিনি জানান, “ওই ভবনের গেটে সিসিটিভি ছিল। তার ফুটেজে কিছু আসেনি। তার মানে হয়তো যে চুরি করেছে, সে আগে থেকে টিভির ব্যাপারটা জানত। এতে আমরা আরও নিশ্চিত হচ্ছি যে কোনও চক্র এর পিছনে রয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, জানুয়ারিতে ন্যাশনাল মেডিক্যালে শিশু চুরি আর শনিবার, ১৩ অক্টোবর আরজিকর হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির পদ্ধতির মধ্যে অনেক মিল। ন্যাশনাল মেডিক্যালের ঘটনায় অভিযুক্ত মহিলা প্রসূতি বিভাগে ঢুকে প্রথমে ভাব জমিয়েছিলেন। তার পর শিশুকে দেখাশোনার নাম করে এক ফাঁকে তাকে নিয়ে চম্পট দেন। আরজিকরেও শনিবার একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে শিশুটির বাড়ির লোক।
এ দিন সন্ধ্যায় আরজিকরের ‘লেবার জেনারেল-টু’ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় মাটিতে পা ছড়িয়ে বসে বিড়বিড় করছেন শিশুর মা মর্জিনা। তাঁর মা সালেয়া বিবি কাঁদছেন। কাঁদতে-কাঁদতেই বললেন, “আমার মেয়ের একটু মাথার গোলমাল রয়েছে। দুপুরে বার বার ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। আমি ওকে আর বাচ্চাটাকে এক সঙ্গে সামলাতে পারছিলাম না। তখনই একটা অল্পবয়সী মেয়ে আমার কাছে এসে বাচ্চাটাকে কোলে নিতে চায়। আমি দিই। কয়েক মিনিট একটু বেখেয়ালে ছিলাম। তার পরেই দেখি মেয়েটা নেই, আমার নাতিও নেই।”
স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের যুক্তি, ওয়ার্ডে ১১০ জন প্রসূতি ভর্তি। এ ছাড়া রয়েছে সদ্যোজাত, তাদের বাড়ির লোক, আয়া। এত ভিড়ে প্রত্যেকের দিকে সারাক্ষণ নজর রাখা প্রায় অসম্ভব। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) গৌরব শর্মা জানান, টালা থানার অফিসারেরা চুরি হওয়া শিশুর মা ও ঠাকুমার সঙ্গে কথা বলেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিভাগে কর্তব্যরত কর্মী ও অন্য প্রসূতিদের, বিভাগের বাইরে পাহারায় থাকা বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের। বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত মহিলার স্কেচ-ও আঁকানো হচ্ছে।

মেডিক্যাল টিম
ভার্নাবাড়ি চা বাগানে দুই চা শ্রমিকের মৃত্যুর পরে শনিবার সকালে এলাকায় মেডিক্যাল টিম পাঠাল স্বাস্থ্য দফতর। এলাকার জলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.