দক্ষিণ কলকাতার শপিং মলে তখন মানুষের ঢল। আগমনীর সুরে ভাসছে গোটা চত্বর। অথচ তারই লাগোয়া আবাসনীর ৩ নম্বর টাওয়ারের ‘নাইন এল’ ফ্ল্যাটে তখন বিসর্জনের বেদনা। কয়েক ঘন্টা আগেই ক্লাবকে মেল করে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন মোহনবাগান কোচ সন্তোষ কাশ্যপ। সেই চেনা হাসিটা উধাও। তবু আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দিতে বসে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে গেলেন সারাক্ষণ।
প্রশ্ন: গত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কী ঘটল যে, আপনি নিজেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন?
কাশ্যপ: শুক্রবার ম্যাচের পর বাড়ি ফিরে সারারাত ভেবেছি। শনিবার সকালেও অনেকক্ষণ চিন্তা করেছি। তার পর বিকেল চারটেতে মেল করলাম। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেই সহজ ছিল না। কিন্তু মোহনবাগানের ব্যর্থতার দায়টা তো কোচ হিসেবে সম্পূর্ণ আমারই। তাই আমার সরে দাঁড়ানোটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে।
প্র: পদত্যাগ করার জন্য আপনার উপর কোনও চাপ সৃষ্টি করা হয়নি?
কাশ্যপ: একেবারেই নয়। আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। ক্লাবকর্তারা তো বরাবরই আমাকে সাহায্য করে এসেছেন। এখনও আমার পাশেই ছিলেন। কিন্তু সদস্য-সমর্থকদের কথা ভেবেই আমি সরে দাঁড়ালাম। |
প্র: মানে আপনি পদত্যাগ করলেন সমর্থকদের চাপে? একটা ম্যাচ জিতলেই তো এঁরা আপনাকে আবার মাথায় করতেন!
কাশ্যপ: মোহনবাগানের মতো ক্লাবে সমথর্কদের ভাবনাকে গুরুত্ব দিতেই হয়।
প্র: ওডাফা-টোলগেদের জানিয়েছিলেন আপনার সিদ্ধান্তের কথা?
কাশ্যপ: না, এখনও কাউকে কিছুই জানাইনি (তখন সন্ধে ছ’টা)। এ বার জানাব।
প্র: প্রাক্তন মোহনবাগান কোচ হিসেবে দলের আসল অসুখটা কী মনে হচ্ছে?
কাশ্যপ: (ম্লান হেসে) অসুখটা তো সবারই জানা। ফুটবলারদের চোট-আঘাত, ডেঙ্গিএ সব তো লেগেই ছিল। দুই প্রধান স্ট্রাইকারের (পড়ুন টোলগে-ওডাফা) মধ্যেও বোঝাপড়াটা ঠিক গড়ে ওঠেনি।
প্র: টোলগে-ওডাফার বোঝাপড়ার অভাবের আসল কারণ কী? দুই মহাতারকার মধ্যে মানসিক দূরত্ব?
কাশ্যপ: না, একেবারেই নয়। আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করবেন না। ওরা খুব ভাল বন্ধু। মাঠের ভেতরে-বাইরে দু’জনের সম্পর্ক খুব ভাল। দু’জনের চোট-আঘাত সমস্যার জন্যই বোঝাপড়াটা এখনও গড়ে ওঠেনি।
প্র: প্রয়াগ ম্যাচে টোলগের পারফরম্যান্স এতটা হতাশাজনক কেন দেখাল? পুরো ম্যাচফিট ছিলেন না?
কাশ্যপ: আমি তো বারবার বলেছি টোলগের কোনও চোট ছিল না। তবে ও পুরো ম্যাচফিট ছিল এমন কথা একবারও বলিনি।
প্র: টোলগের সঙ্গে কি কোথাও আপনার মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল?
কাশ্যপ: একেবারেই নয়। সব ফুটবলারের সঙ্গেই আমার খুব ভাল সম্পর্ক।
প্র: অনেকেই বলছেন, টোলগে-ওডাফার মতো মহাতারকা সামলানো আপনার ক্ষমতার বাইরে ছিল!
কাশ্যপ: অনেকেই অনেক কথা বলে। আমি তো সবাইকে চুপ করাতে পারব না। যার যা বলার বলবেই। এ নিয়ে আমি ভাবি না।
প্র: বাগানের নতুন কোচকে আপনি কি পরামর্শ দিতে চাইবেন?
কাশ্যপ: (হেসে) কোনও মন্তব্য নয়।
প্র: মোহনবাগানের আই লিগ জেতার সম্ভাবনা কতটা?
কাশ্যপ: আমি তো আশা রাখবই। ভাল দল। ভাল ফুটবলার রয়েছে। মোহনবাগান নিশ্চয়ই উঠে দাঁড়াবে। আমার শুভকামনা সব সময় থাকবে। |
শনিবারের বিদায়-নাটক |
• সকাল ১০-০০ অনুশীলন কবে হবে জানতে
চেয়ে এক শীর্ষ কর্তাকে ফোন সন্তোষ কাশ্যপের।
• ১০-৩০ কর্তাদের পাল্টা ফোন সন্তোষকে। পদত্যাগ
করতে হবে, না হলে বিকেলেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা।
• ৪-০০ পদত্যাগ কাশ্যপের। |
পতনের সাত-কাহন |
১) দল গঠনে ব্যর্থতা।
২) তারকাদের নিয়ন্ত্রণে অসফল।
৩) হ-য-ব-র-ল ফর্মেশন।
৪) ‘জিরো’ ম্যাচ রিডিং।
৫) দল-বিরোধী বেফাঁস মন্তব্য।
৬) ফিজিও-র কাজে বাধা।
৭) প্রয়াগ ম্যাচে কর্তাদের অনুরোধ অমান্য । |
|