সম্পাদকীয়...
খাপ খোলা সাপ
রিয়ানার খাপ পঞ্চায়েত রক্ষণশীলতাকে অশিক্ষার তৈলে চিড়বিড় ফুটাইতে ফুটাইতে কেমন চূড়ান্ত অসভ্যতার দিকে লইয়া যাইতে পারে, তাহা দেশবাসীর অজানা নহে। সেই রাজ্যে বহু মানুষ সম্মান রক্ষার্থে খুনকে সমর্থন করেন, নারীকে সমাজের ও পরিবারের অভিশাপ হিসাবে গণ্য করেন, ভয়াবহ পরিমাণে কন্যাভ্রূণহত্যার ঘটনা সেখানে ঘটিয়া থাকে। আর খাপ পঞ্চায়েত তাহার ক্রমাগত ফতোয়া, বিচার, বিবৃতির মধ্য দিয়া এই অমানবিক ধারণাগুলিকে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ মদত জুগাইয়া থাকে। সম্প্রতি খাপ-এর এক সদস্য বলিলেন, সে রাজ্যে যে ধর্ষণের মিছিল চলিয়াছে, তাহার সমাধান: মেয়েদের অনেক কম বয়সে বিবাহ দেওয়া। কেন? বিবাহের পবিত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতি ধর্ষকরা প্রাণপণ বিশ্বাসী ও শ্রদ্ধাশীল? না, যুক্তি তাহা নহে। যুক্তির বহিঃস্তর: স্বামী রক্ষা করিলে স্ত্রীকে ধর্ষণ করিবার সাহস দুর্বৃত্তেরা পাইবে না। তিনি আরও বলিয়াছেন, ‘বাল্যকালে বিবাহ হইয়া গেলে কেহই বিপথে যাইবে না।’ কথাটি অনুধাবনযোগ্য। ধর্ষণ করিতেছে কে? যে বেচারা পুরুষ যৌনতার জন্য হাহাকার করিয়া ঘুরিতেছে। (যৌনক্ষুৎকাতর পুরুষের প্রতি হরিয়ানার সহানুভূতির ইঙ্গিত মিলিবে সাম্প্রতিক ঘটনায়: নারীটিকে যে দুই জন বলাৎকার করিতেছিল, তাহাদের এক জনের বউদি বাহিরে দাঁড়াইয়া পাহারা দিতেছিল।) যৌন-ক্ষুধার্ত পুরুষকে শান্ত করিবার উপায় কী? অবশ্যই, তাহার আয়ত্তের মধ্যে নারী জুগাইয়া দেওয়া। পুরুষটি অতি কম বয়সেই যৌন সঙ্গিনী পাইয়া গেলে, তাহার ধর্ষণের প্রবৃত্তি জাগিবার কারণ রহিল না। গণিত নিটোল।
কিন্তু ইহাতে যে নারীকে এক অত্যাচার হইতে বাঁচাইবার জন্য আর এক দীর্ঘকালীন অত্যাচারের দিকে ঠেলিয়া দেওয়া হইল? বালিকার শরীর যৌনতা ও সন্তানধারণের জন্য প্রস্তুত নহে, পাঠ অসমাপ্ত রাখিয়া শিক্ষা বিপর্যস্ত করিয়া সংসারে জুতিয়া দিলে তাহার মানসিক বিকাশ ঘটিবে না, যে বয়সে তাহার স্নেহে প্রশ্রয়ে পালিত হওয়া প্রয়োজন সে বয়সে গৃহকর্মের এবং স্বামীর শরীরের দাবি মিটাইতে মিটাইতে সে ক্ষয়প্রাপ্ত হইয়া পড়িবে, তাহার শারীরিক-মানসিক সুস্থতার সম্ভাবনা কমিবে এবং বাড়িবে তাহার সন্তানেরও অসুস্থ হইবার সম্ভাবনা। কিন্তু এই সকল প্রসঙ্গ খাপ-বাবুর নিকট অবান্তর। কারণ, জীবনকে নারীর দিক হইতেও বিচার করা যায়, সে বিষয়ে তিনি অবহিতই নহেন। তিনি জানেন, বসুন্ধরা পুরুষের নিমিত্ত নির্মিত, নারী তাহার উপকারের জন্য সৃষ্ট সামগ্রী মাত্র। তাই, এই সমাধান যে আসলে বলিতেছে, নারীকে পুরুষের স্বার্থে বলি দেওয়া হউক যাহা আসলে ধর্ষণেরই দর্শন তাহা খাপ খুলিবার সময় পুরুষপ্রবরের মনে নাই।
যুক্তির অন্তঃস্তরে উদ্যত প্রকৃত ফণা: ধর্ষণের জন্য নারীরাই দায়ী। বাল্যকাল হইতে যৌনতা পাইয়া গেলে নারীরা খামখা অগণিত পুরুষের সামনে ভোগ্যসামগ্রী হিসাবে ঘুরঘুর করিবে না, আচার-আচরণের দ্বারা ক্রমাগত প্ররোচনা দিবে না। পুরুষসঙ্গে বহু পূর্বেই তুষ্ট হইয়া, নিবিড় মনোযোগে ডাল-চাল মাপিবে, সন্তান পালিবে। ক্ষুধার্ত পুরুষ তখন অনায়াসে নিজেদের সামলাইবে। অর্থাৎ, পুরুষশাসিত সমাজের সেই পুরাতন কুযুক্তি: যে অপরাধী, দোষ তাহার নহে, যে শিকার সে-ই নির্ঘাত অপরাধীর মনে কামনা জাগাইয়াছিল। এই যুক্তি মানিয়া, কেহ আবার এই মতের প্রবক্তার গর্দান এক কোপে নামাইয়া দিয়া বলিতে পারে, দোষ আমার নহে, তোর গলাটিই ধড়ের উপর বহু ক্ষণ নলনল করিয়া আমাকে করাত বাহির করিতে উদ্দীপিত করিল। খাপ পঞ্চায়েতের অবশ্য প্রতিযুক্তি ভাবিবার সভ্যোচিত দায় নাই। তাহারা ধর্ষকদের প্রতি আবডালে সহানুভূতিশীল, নারীদের প্রতি প্রকাশ্যে বিদ্বিষ্ট এবং নিজ-অবস্থানের প্রতি জাতীয় মিডিয়া-সম্মুখেই সশ্রদ্ধ ও দর্পময়। এই দেশ যে হারে প্রগতির উলটো পথে হাঁটিতেছে, তাহাতে ইহারা ‘খাপে খাপ’ পড়িল বলিলে অত্যুক্তি হইবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.