সমস্যায় জর্জরিত হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসকে বাঁচাতে শেয়ার বিক্রির কৌশল হিসেবে সম্ভবত আর্থিক সংস্থাকেই সঙ্গী হিসেবে চাইছে রাজ্য সরকার।
সংস্থাকে বাঁচাতে কী কী পথ খোলা আছে, তা নিয়ে আলোচনা করেছে শিল্প বিষয়ক মন্ত্রিগোষ্ঠী। যার মধ্যে অন্যতম হল ঋণের বিনিময়ে আর্থিক সংস্থাকে শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব। শনিবার এই প্রস্তাব উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই। তবে তা কী ভাবে কার্যকর হবে, তার পথ বাতলাতে সচিব পর্যায়ের আর একটি কমিটি গড়া হয়েছে। যার শীর্ষে থাকছেন প্রাক্তন অর্থ ও বর্তমান খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ সচিব চঞ্চলমল বাচাওয়াত। কমিটির সুপারিশ শিল্পোন্নয়ন নিগম মারফত সংস্থার পরিচালন পর্ষদে পেশ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, সংস্থার যা অবস্থা, তাতে টাকা না-এলে কাজ চালানো অসম্ভব। মন্ত্রিগোষ্ঠীর সুপারিশ সংস্থার চরম দুরবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই।
শিল্প দফতর সূত্রে খবর, আর্থিক সংস্থাগুলি পেট্রোকেমকে আর সরাসরি ঋণ দিতে চাইছে না। সংস্থার যা অবস্থা, তাতে প্রতিদিন বেশ কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। সরকার পক্ষের একটি মহলের দাবি, দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ চার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এই ক্ষতি মাথায় নিয়ে কাজ চালাতে গেলে, সংস্থার আরও টাকার প্রয়োজন। সেই জায়গা থেকেই আর্থিক সংস্থাগুলির কাছ থেকে টাকা জোগাড়ের প্রস্তাব করেছে মন্ত্রিগোষ্ঠী। তাদের মতে, ঋণ হিসাবে না-নিয়ে এই টাকা শেয়ারের বিনিময়ে তোলার প্রস্তাবও রাখা যেতে পারে পরিচালন পর্ষদে। তাতে সংস্থার ঋণের বোঝা আর বাড়বে না। ঠিক থাকবে ঋণ-শেয়ারের অনুপাতও। পরিচালন পর্ষদে এই প্রস্তাব যে পাশ করানো সমস্যা হবে না, তা নিয়ে নিশ্চিত রাজ্য সরকার। কারণ, এই মুহূর্তে পর্ষদের যা সদস্য বিন্যাস, তাতে পাল্লা ভারী রাজ্য সরকারের দিকেই।
অবশ্য সংস্থায় একক ভাবে সবচেয়ে বেশি শেয়ার যাদের হাতে রয়েছে, সেই চ্যাটার্জি গোষ্ঠী এই ভাবে টাকা তোলার রাস্তায় হাঁটতে সহমত হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় এই মুহূর্তে নিউ ইয়র্কে। এই নিয়ে তাঁর গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে মুখপাত্র জানান, তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে অপারগ। কারণ, এই সুপারিশ সম্বন্ধে এখনও তাঁদের কিছু জানানো হয়নি।
তবে এর আগে যখন ১২৮ কোটি টাকার ঋণ মেটাতে শেয়ার বেচা হয়েছিল, তখন সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর মালিকানা স্বাভাবিক ভাবেই আনুপাতিক হারে কমে যায়। সে সময়ে এ ব্যাপারে তাঁদের আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল যে, এ পথে হেঁটে পরিচালন পর্ষদে তাদের জোর কমানো হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রস্তাব এখনও তাঁদের না-মানাই স্বাভাবিক বলে আশঙ্কা।
তবে রাজ্য সরকার যে এ পথে হেঁটেই পরিচালন পর্ষদে শক্তি বাড়িয়ে সংস্থায় নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে আসতে চাইছে, তা নিয়ে সংশয় নেই সংশ্লিষ্ট মহলে। গত বৃহস্পতিবারই শিল্পমন্ত্রী আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকারের কাজ ব্যবসা চালানো নয়। এবং এই মন্তব্য ছিল হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের পরিপ্রেক্ষিতেই। |