বিনোদন পুজোর বাজারে চাহিদা পুরনো বাংলা গানেরই
তুন গানের খরা কাটিয়ে গত দু’বছর পুজো উতরে দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু এ বছর?
কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, সিডি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ মরসুমে শ্রোতাদের প্রথম পছন্দ সেই স্বর্ণযুগের গানই। দ্বিতীয় সারিতে রয়েছে নতুন আধুনিক গান, তৃতীয় সারিতে বাংলা ব্যান্ড।
সারেগামা-র আঞ্চলিক অধিকর্তা এস এফ করিম এ বছরের পুজোয় স্বর্ণযুগের গানের প্রতি শ্রোতাদের চাহিদার কথা স্বীকার করে নিলেন। রবীন্দ্রনাথের দেড়শো বছর উপলক্ষে গত বছর যে ভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি শ্রোতাদের ঝোঁক ছিল, এ বছর তা সে ভাবে নেই। “আমরা পুরনো গানগুলিকেই বিভিন্ন শিরোনামে তাই এ বারের পুজোয় বাজারে ছেড়েছি।” বিভিন্ন দোকানে উঁকি মারলেই দেখা যাচ্ছে স্বর্ণযুগের গানগুলিই হাতে হাতে ঘুরছে শ্রোতাদের।
নিয়মরক্ষার মতো পুজোয় নতুন গানের অ্যালবাম এখনও বেরোচ্ছে। এ বছরেও বেরিয়েছে কিছু নতুন গানের সংকলন। শ্রেয়া ঘোষাল (মন কেমনের স্টেশন), ইন্দ্রনীল (বাউল মন), বাবুল সুপ্রিয় (তোমাকে), অমিত কুমার (প্রেরণা), রূপঙ্কর (দুই দু’গুণে), হৈমন্তী শুক্ল, শ্রীকান্ত আচার্য প্রমুখ (তাই তুমি), সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় (সুরজিৎ ও বন্ধুরা), অন্বেষা (একলা তোর)...।
কিন্তু শিল্পীরাই স্বীকার করছেন যে, গত কয়েক বছরে অন্তত পুজোর গানের একটিও সেই অর্থে জনপ্রিয়তা পায়নি। কেন? লোপামুদ্রা মিত্র খোলাখুলি বললেন, “মানুষ যে ঠিক কী চাইছেন, তা আমরা কেউই বুঝতে পারছি না।” কিন্তু কেন এমন হল? শিল্পীদের ক্ষোভ, সিডি কোম্পানিগুলি নতুন গানে সে রকম কোনও উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। আবার বেশির ভাগ কোম্পানির বক্তব্য হল, “বিক্রি হলে কেন উৎসাহ দেখাব না?” শিল্পী রাঘব চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “শিক্ষিত গান-বাজনার অভাবেই মুখ থুবড়ে পড়েছে নতুন গান।” গড়িয়াহাটে ঘুরছিলেন এক চিকিৎসক পরিবারের গৃহকর্ত্রী। ব্যাগে শোভা পাচ্ছে হেমন্ত-সন্ধ্যা-শ্যামল-পিন্টুর সিডি সংকলন। অর্থাৎ ঘুরে-ফিরে সেই পুরনো গান। “নস্টালজিয়ার আমেজ এখনও তো সত্তর বা আশির দশকের গানগুলিতেই রয়েছে,” দাবি করলেন হৈমন্তী শুক্ল। বনশ্রী সেনগুপ্ত বললেন, “এ বছরেও শুনলাম আমার আগেকার গানগুলি খুব ভাল বিক্রি হচ্ছে। ঢাকের তাল ছাড়িয়ে মাইক্রোফোনে যখন বেজে ওঠে ‘আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম’, মনে হয় সেই সত্তর-আশির দশকে ফিরে গিয়েছি।”
কিন্তু পুরনো গানের এই বিক্রি কি বছরভরই থাকে? দক্ষিণ কলকাতার সুপরিচিত সিডি ব্যবসায়ী বলছেন, পয়লা বৈশাখ ও পুজোয় পুরনো সংকলনগুলির বিক্রি বাড়ে। দৈনিক একশো সিডি বিক্রি হলে বছরের অন্যান্য সময় সেই বিক্রির তিরিশ শতাংশ থাকে পুরনো গানের অ্যালবাম। পুজোর সময়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় পঞ্চান্ন থেকে ষাট শতাংশ। উত্তর কলকাতায় পুরনো গানের বিক্রি সংখ্যা পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্ন শতাংশ। তবে মধ্য কলকাতায় বিশেষ করে শিয়ালদহ অঞ্চলের পরিসংখ্যানটা একটু অন্য রকম। এক ব্যবসায়ীর কথায়, “এখানে পুজো বলে আলাদা কিছু নেই। এক এক সময়ে এক এক রকম গানের চাহিদা। তবে পুরনো আধুনিক গানের চাহিদা বারো মাসই। তবে তা পঁচিশ শতাংশের বেশি নয়।”
তা হলে নতুন পুজোর গান আর কোনও দিন শ্রোতাদের মনে ধরবে না?
ধরবে, আশাবাদী রূপঙ্কর। “দেখুন না, এ বছর থেকেই আধুনিক গান নতুন মোড় নেবে। এত দিন আধুনিক গানের নামে যা বেলেল্লাপনা হয়েছে, তা-ই দেখে আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে।” এমন আশায় ভরসা রাখছেন আশা অডিওর কর্ণধার দিব্যেন্দু লাহিড়িও। তাঁর দাবি, মুম্বই ও বাংলার শিল্পীদের দিয়ে এ বছরে যে সব অ্যালবাম বাজারে ছাড়া হয়েছে তা অবশ্যই শ্রোতাদের মনে ধরবে। কসমিক অডিও-র সুমন চট্টোপাধ্যায় বা মিউজিক ২০০০-এর স্বরূপ পাল মনে করেন, “একটু ধীরে হলেও নতুন বাংলা গান নিয়ে শ্রোতারা আগ্রহ দেখাচ্ছেন।” কিন্তু ইউডি সিরিজের রাজকল্যাণ রায় বললেন, “ঝুঁকি নিইনি। নতুন গানের পাশাপাশি রেখেছি পুরনো গানের সংকলনও।”
আর বাংলা ব্যান্ড? বিক্রির নিরিখে তিন নম্বরে থাকা বাংলা ব্যান্ডের ভবিষ্যৎও ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ‘ভূমি’র সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়। “এ বার দেখুন অনেক কিছু বদলে যাবে। বাংলা ব্যান্ডে নতুনত্ব আছে, আধুনিকতার ছোঁয়া আছে।” তবে এখন অপেক্ষা, শুধুই ভাল গানের।
গুড়গাঁওয়ে একটি অনুষ্ঠানে প্রীতি জিন্টা। ছবি: পি টি আই



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.