|
|
|
|
স্কুলের গেট ভেঙে মৃত ছাত্র |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
স্কুল তখনও শুরু হয়নি। স্কুলের সামনে ছাত্ররা কেউ খেলা করছিল, কেউ বা গেটের সামনে ঘোরাঘুরি করছিল। আচমকাই হুড়মুড়িয়ে গেটের ছাদ ভেঙে পড়ায় মৃত্যু হল এক ছাত্রের। গুরুতর জখম হয় আরও তিন পড়ুয়া। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ভগবন্তপুর ২ পঞ্চায়েতের খানডাঙা শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে। ওই গেট তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগে স্কুলের প্রধান সহায়িকা-সহ পরিচালন কমিটির প্রাক্তন সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী জানান, বিডিও-র অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই তিন জনকে। মৃত আমানুর মণ্ডল (১০) চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। গুরুতর জখম হানিদ মণ্ডল, জসীম মণ্ডল ও তানামুল্লা খানকে ভর্তি করা হয়েছে চন্দ্রকোনা গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে হানিদ ও জসীমকে স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে। ঘটনার পরেই মাত্র তিন বছর আগে তৈরি হওয়া ওই গেট কী ভাবে ভেঙে পড়ল, তা নিয়ে তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায় স্কুলের সামনে। পুলিশ গেলে পুলিশকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে বিডিও তদন্তের আশ্বাস এবং ব্যবস্থার নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। স্কুল বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। খানডাঙার ওই শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে স্থানীয় খানডাঙা, মুড়াকাটা, মহেশপুর প্রভৃতি গ্রামের ১০৭ জন পড়ে। এ দিন স্কুল শুরুর আগে ছাত্র-ছাত্রীরা খেলা করছিল। তখনও স্কুলের তিন সহায়িকার কেউই উপস্থিত হননি। হঠাৎই গেটের উপরে ছাদটি ভেঙে পড়ে যায়। |
|
ভেঙে পড়া স্কুলের গেট। নিজস্ব চিত্র। |
মৃত আমানুরের বাবা আফসার মণ্ডল বলেন, “আজ মুড়ি খেয়ে ছেলে স্কুলে এসেছিল। টিফিনের সময় বাড়িতে ভাত খেতে আসবে বলে জানিয়েছিল। সেই মতো রান্নাও হয়ে গিয়েছিল। আচমকাই শুনি গেট ভেঙে পড়ে ওর মৃত্যু হয়েছে। পড়াশোনার জন্য স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। এমন পরিণতির কথা ভাবতেও পারিনি।” দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দারা স্কুলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তৃণমূলের ওই অঞ্চলের সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় বলেন, “কোনও রড ছাড়াই দু’ধারে পিলার তুলে প্রায় ৫০ কেজি ওজনের ছাদটি তৈরি হয়েছিল। নির্মাণে ত্রুটি থাকায় এতবড় ঘটনাটি ঘটল। দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি।” ঘাটালের মহকুমাশাসক অংশুমান অধিকারী ঘটনার তদন্ত করে বিডিওকে দু’দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন। বিডিও সৈকত হাজরার বক্তব্য, “বছর তিনেক আগে নিয়ম না মেনেই গেটটি তৈরি হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। পঞ্চায়েতের কোনও অনুমতিও নেওয়া হয়নি। তাই স্কুলের প্রাক্তন সম্পাদক এনামুল আলি খান, বর্তমান সভাপতি আবদুল কাদের মণ্ডল ও স্কুলের প্রধান সহায়িকা সরমা সামুইয়ের নামে থানায় মামলা করা হয়েছে।” আবদুল কাদের মণ্ডল কোনও মন্তব্য করেননি। সরমা সামুই বলেন, “পরিচালন কমিটির সিদ্ধান্তেই গেটটি তৈরি হয়েছিল। তবে এর জন্য সরকারি ভাবে কোনও টাকা মঞ্জুর হয়নি। কিন্তু কোন খাতের টাকা থেকে গেটটি তৈরি হয়েছিলতা বলতে পারব না।” |
|
|
|
|
|