|
|
|
|
|
|
|
সাজগোজ... |
|
সব্যসাচী এবং... |
রাত দশটা থেকে বারোটা। পাক্কা দু’ঘণ্টা। রং ওঠা চেক শার্ট, খালি পা আর এলোমেলো চুলের
সিগনেচার
স্টাইলে, তাঁর কনকনে ঠান্ডা গাড়ি জাগুয়ার-এ বসে দক্ষিণ কলকাতায় প্রিয়
রাস্তাগুলোয়
ঘুরপাক খেলেন ফ্যাশন ডিজাইনার সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। শ্রীদেবী, রেখা...
অমিতাভ বচ্চন থেকে ছোট বেলার ডিপ্রেসন, আড্ডা হল সব কিছু নিয়েই। সঙ্গী নিবেদিতা দে |
মোনালিসা গেস্ট হাউস ছাড়িয়ে ঢাকুরিয়া লেক “গাড়িটা দাঁড় করাও অর্জুন।” “এই যে দেখছ ‘কহানি’র ‘মোনালিসা গেস্ট হাউস’... কিছুটা দূরেই একটা দারুণ ফুচকাওয়ালা আছে...‘কহানি’র কস্টিউম করার সময় প্রায়ই চলে আসতাম ফুচকা খেতে”... শরৎ বোস রোড ছাড়িয়ে গাড়ি চলল সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের দিকে। লেকের সামনে এসে গাড়ির চালককে আবার থামতে বললেন সব্যসাচী। তার পর ফিরে বললেন“দেখেছ, ওই বেদিটা, ওটার ওপরেই বসে থাকতাম দিনের পর দিন। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখতাম লেকের জল...”,
কেন?
সারাদিনের কাজ সেরে রাত এগারোটায় সব্যসাচী যেন কিছুটা আলসে। অন্যমনস্ক। পর দিনই ভোর ছ’টার ফ্লাইট, আমেরিকা যাবেন সংবর্ধনা নিতে। “ভয়ঙ্কর ডিপ্রেশনে ভুগেছি টানা তিনটে বছর। কলেজে ভর্তি হতে পারিনি। ডাক্তার, অ্যান্টি ডিপ্রেসিভ ওষুধ নিয়েই তো থাকতাম। আর এসে বসতাম বেদিটায়।”
বন্ধুদের প্রিয় এই ‘পেপসি’র, উত্তরণের কাহিনি অনেকের জানা থাকলেও, অনেকেই হয়তো জানেন না সব্যসাচী সেন্ট জেভিয়ার্সে ভর্তি হওয়ার আগে, তিনটে বছর কাটিয়েছেন বাড়িতেই!
লেক ছাড়িয়ে...বালিগঞ্জ কালচারালের দিকে... |
|
ছবি: নিবেদিতা দে |
“এত রাতেও প্যান্ডেলের দোলনায় দোল খায় বাচ্চারা? এখনও!” সব্যসাচী হঠাৎই ছেলেমানুষ।
মনে পড়ে যায় তাঁর ফেলে আসা স্কুলের দিনগুলো।
গাড়ির আবছা আলোয় সব্যসাচীকে দেখে কে বলবে ওঁর পোশাকের লালিত্যে মুগ্ধ শ্রীদেবী, রেখা থেকে রানি, ঐশ্বর্যা, অমিতাভ থেকে ওপরা উইনফ্রে সক্কলে! কে বলবে ‘ব্ল্যাক’, ‘গুজারিশ’, ‘রাবণ’ থেকে হালের ‘ইংলিশ ভিংলিশ’... একের পর এক ছবির পোশাক তৈরি হচ্ছে তাঁর হাতে! “থাকতাম চন্দননগরে। পড়তাম ‘শ্রী অরবিন্দ বিদ্যালয়’-এ। সারাটা স্কুলজীবনই হাতে টানা নৌকোয় যাতায়াত করেছি। নদীর সেই ছ-লা-ৎ ছ-লা-ৎ শব্দে, ঈশান কোণে মেঘ দেখলেই প্রাণ খুলে গান ধরেছি, ‘খরবায়ু বয় বেগে’।” “বাবার বদলির চাকরি। চলে আসি কলকাতায়।” আর শহরে এসেই ডিপ্রেসন। তাই লেকের ধারে আসতেন তিনি, চেয়ে দেখতেন জল।
চলো... একডালিয়া এভারগ্রিন গড়িয়াহাটের মোড়ে যেতে যেতে যা বললেন তাতে বোঝাই গেল, আসলে কষতেন অঙ্ক, কিন্তু মগজে সব সময় ঘুরপাক খেত ফ্যাশন। কলেজের ছাত্রীদের জড়ো করে, সেই শো অর্গানাইজ করতে যাওয়াতেই যত বিপত্তি। “তখন তো আর কলকাতায় ফ্যাশনের তেমন চল ছিল না তাই স্যররা ভাবতেন মেয়েদের নিয়ে এই ছেলে এর পর কী করবে কে জানে? পরে নিফ্ট-এ ভর্তি হতে পেরে সত্যি-সত্যি যেন নিশ্বাস নিলেন সব্যসাচী। |
• এই মুহূর্তে সাজাচ্ছেন লন্ডনের তাজ। থিম: ওয়ার্ল্ড সিনেমা।
• ভারতের প্রথম তিন জন ফ্যাশন ডিজাইনার ট্যাক্স পেয়ারের মধ্যে রয়েছেন তিনি। ব্যবসায় বছরের টার্ন ওভারের হিসেবেও প্রথম তিনে।
• কলকাতা, দিল্লি, মুম্বইতে দুটো করে স্টোর আছে। আগামী দু’বছরে খুলতে চলেছেন, লন্ডন, চেন্নাই ও নিউ ইয়র্কে। |
|
আর তার পর শুধুই আকাশ-ছোঁয়া সাফল্য, পুরস্কারের বন্যা।
রাতের কলকাতার আলো-আঁধারিতে ‘জাগুয়ার’ পাক খেল ‘পেপসি’র পছন্দের রাস্তা, হিন্দুস্থান পার্ক, দেশপ্রিয় পার্ক... বিলাস-বাহনে বসেই, ছেলেবেলার কথায় পাক খেতে খেতে সব্যসাচী প্রবেশ
করলেন পেশায়। রেখা-শ্রীদেবী-ঐশ্বর্যা-রানি-বিদ্যার সঙ্গে কাজের নানা ঘটনার কথায়।
|
সব্যসাচী’স কালেকশন |
অমিতাভ বচ্চন
বাবার কাণ্ড শুনে খুব হেসেছিলেন... |
ছোটবেলা থেকেই আমার সঙ্গে অমিত আঙ্কলের একটা অদ্ভুত ‘সম্পর্ক’। সেটা কী রকম বলছি
আমার বাবা মাঝে মধ্যেই মুম্বই যেতেন অফিসের কাজে। ফিরে এসে বলতেন, ‘আমি অমিতাভ বচ্চনের বাড়ির পাশেই থাকি। তুমি যদি অঙ্কে একশোয় একশো পাও, তা হলে অমিত আঙ্কল, তোমায় চিঠি দেবে।’ তখন সবে ‘অনুসন্ধান’ দেখেছি। শুনে আমার তো চোখ ছানাবড়া। বাবার কথা শুনে মন দিয়ে অঙ্ক করতাম। আর তাতে সত্যি সত্যিই যখন একশোয় একশো পেতাম, বাবা মুম্বই থেকে ফিরে একটা চিঠি দিত আমার হাতে, যাতে অমিতাভ বচ্চনের অটোগ্রাফ থাকত, আর লেখা থাকত, ‘আমি খুব খুশি তুমি অঙ্কে একশো পেয়েছ।’ বুক ফুলিয়ে স্কুলে গিয়ে দেখাতাম বন্ধুদের। বন্ধুরা বলত ‘রাবিশ’। এ ভাবে সিক্স পর্যন্ত কেটেছে। পরে ধরেছি ব্যাপারটা।
আর বাবার এই কীর্তিই আমি ‘ব্ল্যাক’-এর শ্যুটিঙের সময় অমিত আঙ্কলকে বলি। শুনে উনি খুব মজা পেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও হয়েছিল আর এক কাণ্ড! ‘ব্ল্যাক’-এর জন্য জাতীয় পুরস্কার নিতে গেছেন অমিত আঙ্কল। আমি যেতে পারিনি। আমার হয়ে বাবা গেছিলেন। আর গিয়ে বসেছিলেন অমিত আঙ্কলেরই পাশে। অমিত আঙ্কল বাবাকে জিজ্ঞেস করেন, “আপনি?” বাবা বলেছিলেন, ‘আমি ডিজাইনার সব্যসাচীর বাবা।’ শুনে উনি বলেছিলেন, “ওহ্, আপনিই সেই ভদ্রলোক, যিনি আমার নামে লিখে চিঠি দিতেন ছেলেকে।” |
|
রেখা
ইউ আর মাই সোলমেট |
আমার মুম্বইয়ের স্টোরে প্রায়ই শাড়ি কিনতে আসেন রেখা। আর এলেই দোকানের ম্যানেজার আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। আমার কাছে রেখা মানে ‘সিলসিলা’, রেখা মানে ‘রং বরসে ভিগে চুনরওয়ালি ...’, রেখা মানে, ‘খুবসুরত’, রেখা মানে, ‘উমরাও জান’, ‘দিল চিজ কেয়া হ্যায়’।
তো রেখা যখন তাঁর হাস্কি গলায় ‘হ্যালো’ বলেন আমি তো পাগল হয়ে যাই। আর রেখা আবার আমার শাড়ি কিনতে এসেছেন...আমার শাড়ি পছন্দ করেন ভাবলেই কী রকম একটা লাগে!
বিভিন্ন ফ্যাশন উইকগুলোতেও মাঝে মাঝেই দেখা হয় ওঁর সঙ্গে। আর দেখা হলেই আমি খুব গদগদ হয়ে যাই। আর রেখা আমাকে বলেন ‘সব্যসাচী ইউ আর মাই সোলমেট’। আমি তখন খুব সুন্দর করে জিজ্ঞেস করি, ‘আমি আপনার জন্য কী করে দেব বলুন?’
উত্তরে উনি খুব মজার একটা কথা বলেন সব সময়। বলেন, ‘তুমি যা করছ সেটাই করে যাও, তা হলেই সেটা আমার জন্য করা হবে।’ বুঝতে পারি আমার কাজ পছন্দ, তা বলে রেখার জন্য আলাদা করে শাড়ি বানাব না? কথাটা ওঁকে বলেছি। আর খুব শিগগিরিই ওঁর জন্য আলাদা করে ভেবে শাড়ি কাস্টমাইজ করছি। |
|
শ্রীদেবী
লিফ্টে মুচকি হেসে বলেছিলেন... |
‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর পোশাক করেছি আমি ঠিকই, এমনকী আমার বম্বের স্টোর থেকে প্রায়ই শাড়ি কেনেন শ্রীদেবী, ওঁর বাড়িও গেছি, কিন্তু তা-ও বলব, আমার কাছে বিদ্যা বা রানি হল বন্ধু, কিন্তু শ্রীদেবী আজও স্টার।
প্রথম আমি শ্রীদেবীকে দেখি মুম্বইয়ের তাজ ল্যান্ডস এন্ড-এ। লিফ্টের মধ্যে, হঠাৎই। তখনও আমার সঙ্গে ওঁর আলাপ নেই... লিফ্ট সিক্সথ ফ্লোর থেকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামল, আমি তো চুপ! চোখের সামনে ভাসছে, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘চালবাজ’, ‘সদমা’। তাকাতে পারছি না। কিন্তু আশ্চর্য, লিফ্টটা খোলার সময় শ্রীদেবীই মুচকি হেসে বললেন, “আই লাভ ইয়োর শাড়িজ”। আমি ঝাঁপিয়ে বললাম, “আই অ্যাম আ বিগ ফ্যান’।
এর পর শ্রীদেবীর সঙ্গে ফর্মাল আলাপ করে দিল বালকি। বালকির বউ গৌরী শিন্ডের ছবি ‘ইংলিশ ভিংলিশ’-এর জন্য। আমরা ডিসকাস করলাম পোশাক নিয়ে। ও বলল, “আমাকে পাড়ওয়ালা কটন শাড়ি দিও, আমি লম্বা তো, তাই। রংগুলোও খুব ঝলমলে দিও। আমি তো সাউথ ইন্ডিয়ান, রং পরতে খুব ভাল লাগে আমার।”
এর পর মিটিংটা হল মেহবুব স্টুডিওয়। লুক টেস্ট। হলুদ শাড়িতে লাল পাড়। শিশির স্টুডিও যেমন বলে এক ছবিতেই বিয়ে, তেমনই একটা মিটিং-এই লুকটা পাকা হয়ে গেল।
ব্যক্তিগত ভাবে শ্রীদেবী কেমন মানুষ জানতে গেলে বলব, খুব প্রাইভেট পার্সন। নিজের মধ্যে নিজে থাকতে ভালবাসে। ওর জুহুর বাড়িতে আমি গেছি। বাড়ি ভর্তি পেন্টিং। প্রত্যেকটা ঘরে। আর সব ক’টা ওর নিজের আঁকা। বিরাট বিরাট ক্যানভাস। খুব ট্যালেন্টেড বুদ্ধিদীপ্ত মেয়ে। সব ছবিতেই কোনও না কোনও মেয়ের মুখ বা শরীর। অ্যাবস্ট্র্যাক্ট। উওমেন বেসড চরিত্র আঁকে ও। আর কে বলবে এই রকম দুটো গ্রোন আপ মেয়ের মা! আমি জিজ্ঞেস করলাম কার আঁকা? মুচকি হেসে বলল ‘ম্যায় শখ সে কভি কভি কুছ পেন্টিং কর লেতি হুঁ’। |
|
ঐশ্বর্যা
সরি, মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে এলাম |
ঐশ্বর্যার সঙ্গে দুটো সিনেমা করেছি, ‘গুজারিস’, ‘রাবণ’। ‘নক্ষত্র জুয়েলারি’র অ্যাডও করেছি। ক’দিন আগে ওর জন্য একটা লাল পোশাকও বানিয়ে দিলাম। লন্ডনের বুলগেরি হোটেল ওপেন করতে যাওয়ার জন্য। অনেক দিন ধরে কাজ করেছি ওর সঙ্গে। তবুও একটা কথাই বলব, ওর মতো বুদ্ধি... শি ইজ লাইক আ সায়েন্টিস্ট। কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, পলিটিক্স...নানা বিষয়ে যে ভাবে ও কথা বলে, খবর রাখে, ভাবা যায় না! ঐশ্বর্যা সত্যিই একটা ব্র্যান্ড।
আর ওর মস্ত গুণ, কিচ্ছু ভোলে না ও! যদি কোনও সিনের কন্টিনিউইটি হয় পাঁচ মাস পরে, জানবে ঠিক মনে রেখেছে। কোন শেডের লিপস্টিক বা নেলপলিশ ছিল, কোন আঙুলে আংটি ছিল। যদি তিরিশটা চুড়ি পরে থাকে, তা হলেও কোনটার পরে কোন চুড়িটা পরেছিল। রিমার্কেবল মেমারি! আর ভীষণ ভীষণ ইনভলভ্ড, ডুবে থাকে।
এখন যেমন বাচ্চা নিয়ে ডুবে আছে। এই ক’দিন আগে ওর সঙ্গে কথা বলার দরকার ছিল। টেলিফোনেই। ও সময় বার করতে পারছিল না। বেশ কিছুক্ষণ পরে ফোন করল। খুব সুন্দর করে বলল, “সরি, একটু দেরি হয়ে গেল, মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে এলাম তো। আসলে কী জানো? মেয়ের জন্য আমার আর কোনও টাইম শেডিউল নেই। মেয়েই এখন শেডিউল ডিকটেট করে।” আমার মনে হয়, মাদারহুড হ্যাজ বিন হার বেস্ট এনডর্সমেন্ট। |
|
রানি
হঠাৎ দেখি রানির পিছনে দু’শো লোক |
রানি আমার সত্যিই বন্ধু। ওর বাড়ি গেলেই, আগে আমরা ডিসাইড করি কোন মাছটা খাব। আর খুব গল্প করি। ওর গল্পের প্রিয় টপিক কলকাতা। দেশপ্রিয় পার্কে ওর একটা বাড়ি আছে, সেটা কী ভাবে সাজাবে সেই সব গল্প।
ওর প্রচুর পোশাক বানিয়েছি আমি। তবে ‘আইয়া’ আর ‘তলাশ’ ছবিদুটো করতে পারিনি, ডেট ছিল না।
মনে আছে রানির সঙ্গে প্রথম ঘটনাটা। শিমলায় শ্যুটিং হচ্ছে ‘ব্ল্যাক’-এর। এক সকালে হঠাৎই রানি বলল, “চলো সব্য দৌড়তে যাই।” কিন্তু বডিগার্ড? রানি বলল, “দরকার নেই।” তো রানি দৌড়চ্ছে, পেছন পেছন আমি দৌড়চ্ছি। রানি ফিট। আমি আনফিট। হঠাৎ দেখি প্রায় দু’শো লোক পিছন পিছন দৌড়চ্ছে। আমি বললাম, কী হবে? তো রানি নির্বিকার। দু’ কোমরে দুটো হাত দিয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘কেয়া চাহিয়ে’? ওরা বলল, ‘ম্যাডাম অটোগ্রাফ’। রানি ওই অত লোককে অটোগ্রাফ দিল, তার পর বলল, ‘অভি ডিস্টার্ব মত করো।’ বলেই দৌড়। রানির সাংঘাতিক কমান্ড। যেখানেই যায়, রানি কিন্তু হয়ে যায় মহারানি। ওই পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি হাইট, কিন্তু ছ’ফুট চার ইঞ্চির মতো ব্যক্তিত্ব। অ্যান্ড শি ইজ আ বর্ন লিডার।
আরেকটা কথা, আমি আজ যতই পোশাক বানাই, আমার কিন্তু মাস্ পরিচয় হয় রানির জন্যই। এখনও অনেকের কাছে আমার আইডেনটিটি আমি রানি মুখোপাধ্যায়ের টেলর। |
|
|
|
|
|
|
|